করোনা কালে কুমিল্লায় রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে ম্যাজিক

কাস্টমস এন্ড ভ্যাট ডেস্ক : করোনাকালে বৈশ্বিক অর্থনীতি আক্রান্ত মন্দায়। বিশ্বব্যাপী সরকারি বেসরকারি রাজস্ব খাত রয়েছে ব্যপক নাজুক অবস্থায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি গত আগস্টের তুলনায় ২১% কম।

ব্যতিক্রম কেবল কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, কুমিল্লা। ২০১৯, জুলাই এর তুলনায় এ বছর জুলাই পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে এ কমিশনারেটে ১৬% প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগস্ট মাসে গত বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮৬%। চূড়ান্ত হিসেবে আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে মর্মে কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী অংশীজন সভায় জানান।

সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের কুমিল্লা কমিশনারেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৪০২১ কোটি টাকা। জুলাই, ২০১৯ মাসে আদায় ১৭১ কোটি টাকা। অন্যদিকে জুলাই, ২০২০ মাসে আদায় হয়েছে ১৯৮ কোটি টাকা। একই সময়ে ২৭ কোটি টাকা বেশী রাজস্ব অর্জিত হয়।

গত আগস্ট, ২০১৯ মাসে রাজস্ব আদায় হয় ৫৬ কোটি টাকা। চলতি আগস্ট ২০২০ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় বেশী আদায় হয়েছে ১০৪ কোটি টাকা অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১৮৬%। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট অফিস গুলোর মধ্যে কুমিল্লা কমিশনারেট রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে।

বিশাল ও ব্যতিক্রম এ অর্জনের কারন বিষয়ে অনুসন্ধানে চমকপ্রদ তথ্য উপাত্ত বেরিয়ে আসে। করদাতা অংশীজন সভায় যুগ্ম কমিশনার মোঃ মুশফিকুর রহমানের বক্তব্যেও বেরিয়ে আসে কুমিল্লা কাস্টমস এর অসাধারণ অর্জনের প্রধান অনুঘটকগুলো। এক নজরে এ বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রধান চিত্রগুলো দেখে নেয়া যাক।

করদাতা সচেতনতা: দু বৃহত্তর জেলায় করদাতাদের ব্যাপকভাবে সচেতন করা হয়। মোবাইলে Bulk এসএমএস পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এবং স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ও কর্মকর্তারা সশরীরে গিয়ে সম্মানিত করদাতাগণকে বুঝিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও শীর্ষ করদাতাদের উদ্ভুদ্ধ করতে সৌজন্য গিফট সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।

কর্মকর্তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষন: রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর সুষ্ঠু পরিপালনের উদ্দেশ্য কর্মকর্তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, বর্তমান করোনা সময়েও নিরাপদে থেকে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষন প্রদানের জন্য অনলাইনে Zoom Apps এর মাধ্যমে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। উক্ত প্রশিক্ষন Stream Yard live এর মাধ্যমে প্রচারও করা হয়;

মাঠ পর্যায়ে কাজে প্রণোদনা: কর্মকর্তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ নির্দিষ্ট সময় অন্তে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে এবং উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিবারক তৎপরতা:  মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী, কমিশনারের সুদক্ষ নির্দেশনা ও সার্বিক তদারকির প্রেক্ষিতে উনার যোগদান পরবর্তী সময় থেকে নিবারনী তৎপরতায় অত্র কমিশনারেট অদ্যাবধি ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে চলছে এবং এই সাফল্যের হার বিগত যে কোন সময়ে তুলনায় আকাশচুম্বী। নিম্নে এ সংক্রান্ত একটি সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করা হলো:

সিগারেট ও বিড়ি: সফল ৪৪টি অভিযান পরিচালনা করে নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত ব্যাপক বিড়ি ও সিগারেট আটক সংক্রান্ত পণ্যের মূল্য ৩৮ লক্ষ টাকা যার মধ্যে আদায় ১১ লক্ষ টাকা। সিগারেটে ১৬ লক্ষ শলাকা সিগারেট ও প্রায় ১১ লক্ষ শলাকা। এই পণ্য আটক কমিশনারেট এর অভূতপূর্ব সাফল্যের সাক্ষ্য বহন করছে।

ইটভাটা: পর্যাপ্ত যানবাহনের স্বল্পতা সত্ত্বেও দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফল ১৮৫ টি অভিযান পরিচালনা করে ৩.৫০ কোটি বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হয়।

স্থান ও স্থাপনা খাত: গত অর্থবছরে এ খাতে রাজস্ব আদায় কম থাকলেও এ সময়ে বিভিন্ন সেক্টর হতে স্থান ও স্থাপনা খাতে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা হয়। এ খাতে হতে ৫৬ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়; যা কর্মকর্তাদের সরেজমিন পরিদর্শন নিবীড় ও তদারকির ফসল।

দাখিলপত্র যাচাই: রাজস্ব ফাঁকির বের করার অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে দাখিলপত্র যাচাই করা। অনলাইন/হার্ডকপি রিটার্ন যাচাই করে কুমিল্লা কমিশনারেট প্রায় ৮ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উৎঘাটন ও ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। এছাড়া বাণিজ্যিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে ৬২ লক্ষ টাকা মূসক ফাঁকির মামলা রুজু করা হয়। তন্মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়।

মামলা নিষ্পত্তি: ৭০ টি সফল অভিযান পরিচালনা করে ভ্যাট সংক্রান্ত ৪৩ টি এবং কাস্টমস সংক্রান্ত ১০ টি মামলা রুজু করা হয়। ইতোমধ্যে ০৯ টি মামলা নিষ্পত্তি করে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সার্টিফিকেট মামলা হতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার রাজস্ব আদায় করা হয়েছে;

জরিপ সংক্রান্ত: বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল এবং প্রতিটি সেক্টর সরেজমিন পরিদর্শন করে গত ২৫-৮-২০২০ খ্রিঃ তারিখ হতে ৯-৯-২০২০ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত ১৮২৩ টি প্রতিষ্ঠান জরিপ করে ১৫৬টি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়। নিবন্ধনযোগ্য ৬৬১ টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পুরস্কার: কর্মকর্তাদের কাজে উৎসাহ প্রদানের জন্য গত ২৬-০৮-২০২০ খ্রিঃ তারিখে  Cumilla Customs Performance award-2020 আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত পুরস্কার অনুষ্ঠানে সেরা কর্মকর্তাদের সনদ প্রদান করা হয়।

মনিটরিং: প্রতিটি বিভাগ এবং সার্কেলে প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সম্পূর্ণ করার বিষয়ে সদর দপ্তর, কুমিল্লা হতে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হয়।

সুস্থ প্রতিযোগিতা : করোনার প্রাদুভাবের মধ্যেও দেশমাতৃকার ডাকে সরকারের রাজস্ব ভান্ডার সমৃদ্ধের লক্ষ্যে কুমিল্লা কমিশনারেটের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ মধ্যে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.