করোনা ভাইরাস ঠেকাতে দেশের তিন বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার সচল করা হচ্ছে

করোনা ঠেকাতে হযরত শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিকল চারটে থার্মাল স্ক্যানার সচল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খুব শ্রীঘ্র এগুলোকে সচল করার পাশাপাশি বিমানবন্দরে করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হচ্ছে। এ জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করা হয়েছে। নতুন দুটো থার্মাল স্ক্যানার সংগ্রহের পাশাপাশি অপর দুটোকে মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র। উল্লেখ্য, হযরত শাহজালালসহ দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে মাত্র একটি থার্মাল স্ক্যানার সচল রয়েছে। বাকি চারটেই অচল। এতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যাত্রী প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং কার্যক্রমে বর্তমানে ভরসা শুধু হাতে ধরে ব্যবহারের স্ক্যানার। এ স্ক্যানার সঙ্কটে সব যাত্রীকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। শুক্রবার সরজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে- হযরত শাহজালালে তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের মধ্যে দুটিই নষ্ট হয়ে গেছে। এ সম্পর্কে বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসান জানিয়েছেন- শাহজালালে তিনটি থার্মাল স্ক্যানারের মধ্যে একটি চালু আছে। বাকিগুলো সম্প্রতি নষ্ট হয়েছে। এগুলো দ্রুত আনার জন্য আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়েছি। তবে এখন হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়েও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে হযরত শাহজালালে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডাঃ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন- আগের মতোই রুটিনমাফিক কাজ চলছে। কিছু এয়ারলাইন্স হেলথ ডিক্লারেশন ফরম ঠিকমতো পূরণ করছে না। তারা অবতরণের পর বোর্ডিং ব্রিজে এসব ফরম পূরণ করছে। এতে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। তিনটে থার্মাল স্ক্যানারের মধ্যে মাত্র একটি থার্মাল স্ক্যানার চালু থাকায় আমরা এর সঙ্গে ইনফ্রারেড হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করছি। এখন পর্যন্ত আমরা এক লাখ ৮০ হাজার জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। কাজের চাপও বাড়ছে।

এদিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরেরও একই অবস্থা। ওই বিমানবন্দরে বিপুলসংখ্যক আন্তর্জাতিক যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য থাকা আধুনিক থার্মাল স্ক্যানারটি ৯ মাস ধরেই বিকল। এখন দূর থেকে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়েই হচ্ছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই পরীক্ষা করতে গিয়ে যাত্রীদের দীর্ঘলাইন লেগে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা। এই সুযোগে অনেকেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেই বিমানবন্দর ছাড়ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টার মধ্যে শিফটে স্বাস্থ্য পরীক্ষার লোকবল থাকে দুজন। ফলে সেই শিফটে বেশির ভাগ যাত্রীকে স্ক্রিনিং সঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না। এই সুযোগে অনেক যাত্রী স্ক্রিনিং না করেই পার হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে গত ২৬ জানুয়ারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় জনবলের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দিয়েছিলেন শাহ আমানত বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার এ বি এম সারওয়ার-ই-জামান। কিন্তু গত এক মাস পেরিয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল পাননি তিনি। বেবিচকের চেয়ারম্যানকে দেয়া ওই চিঠিতে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে চীনের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য আমদানি-রফতানির কারণে ঢাকা হয়ে অনেক চীনা নাগরিক অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে শাহ আমানতে আগমন ও প্রস্থান করে থাকেন। ইদানীং আমাদের চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে লোকবল সঙ্কটের কারণে যাত্রীদের যথাযথ সেবা প্রদান করা যাচ্ছে না। এখানে নিয়মিত পদে একজন এবং সংযুক্তিতে মাত্র একজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন।

এদিকে ওসমানী বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার মেশিনটি প্রায় দেড় বছর ধরে বিকল। যদিও এখানে চীনের যাত্রী সরাসরি আসছে না। কিন্তু লন্ডনসহ অন্য এলাকার যাত্রীরা তো নিয়মিত যাতায়াত করছে। সেদিক থেকে এখানেও মানতে হচ্ছে বিধিনিষেধ। রয়েছে জানিয়ে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন বলেন, এটি সচল করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ায় সেটি এখনও সচল করা যায়নি। এদিকে দেশের প্রধান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রবেশপথগুলোতে করোনাভাইরাস ইস্যুতে যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি আগত যাত্রীদের দেয়া হেলথ ডিক্লারেশন ফরমও ঠিকমতো না পড়া, থার্মাল স্ক্যানারের সব যাত্রীর ইমেজ ঠিকমতো না দেখার অভিযোগ রয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.