সপ্তাহে ১৭ হাজার যাত্রী নিতে চায় দিল্লি

দিল্লি : করোনা ভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সুবিধাসহ জরুরি কাজে গমনাগমনে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে নতুন ফ্লাইট চালু হচ্ছে। উভয় দেশের মধ্যে এয়ার ট্রাভেল বাবল চুক্তির আওতায় বিমানে এই যাত্রী পরিবহন সুবিধা চালুর বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফ্লাইট পরিচালনা পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবে দেশটি সপ্তাহে ১৬টি ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে ১৭ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে চায় বলে জানিয়েছে।

এয়ার বাবল ফ্লাইট’ বলতে দুটি দেশের মধ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রবিধান মেনে বিমানসেবা চালুকে বোঝায়। গত ১৮ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ সফরে এসে এয়ার বাবল ফ্লাইট পরিচালনার মৌখিক প্রস্তাব দেন। এ পর্যন্ত ৮টি দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করেছে ভারত।

সিভিল এভিয়েশন (সিএএবি) সূত্র জানায়, প্রস্তাবে ভারত পাঁচটি এয়ারলাইন্সে ঢাকা শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই রুটে সপ্তাহে ১৬টি ফ্লাইটে ১৭ হাজার ১২০ জন যাত্রী বহনের কথা বলেছে।

এমনিতে করোনাকালে চাহিদার ওপর নির্ভর করে ফ্লাইটের সিট নির্ধারণ করা হয়। তবে এসব ফ্লাইটে টিকিটের দাম, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য চার্জ এয়ার ট্রাভেল বাবল চুক্তির অন্তর্র্ভুক্ত হবে না।

সূত্রটি আরও জানায়,  এয়ার ট্রাভেল বাবল ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে এয়ার ইন্ডিয়া (দিল্লি ঢাকা দিল্লি) দুটি ফ্লাইটে সপ্তাহে ৩৪৬ সিট, একই ফ্লাইটের কলকাতা ঢাকা কলকাতা রুটে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইটে ৩৪৬ সিটের প্রস্তাব দিয়েছে।

এ ছাড়াও গো এয়ারের দিল্লি ঢাকা দিল্লি রুটের ৭টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ১ হাজার ৩০২ সিট, একই ফ্লাইটের কলকাতা ঢাকা কলকাতা রুটের ৭টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ১ হাজার ৩০২ সিট রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের কলকাতা ঢাকা কলকাতা রুটে ৭টি ফ্লাইটে প্রস্তাব রয়েছে সপ্তাহে ১ হাজার ৩০২ সিট, একই ফ্লাইটের দিল্লি ঢাকা দিল্লি রুটে ৭টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ১ হাজার ৩০২ সিট, চেন্নাই-ঢাকা-চেন্নাই রুটে সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইটে ৫৫৮ সিট রাখার।

স্পাইস জেট কলকাতা চট্টগ্রাম কলকাতা রুটে ৭টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ৫৪৬ সিট, কলকাতা-ঢাকা-কলকাতা রুটে ৭টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ৫৪৬ সিট, দিল্লি ঢাকা দিল্লি রুটে ৩টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ৫৫৮ সিট, মুম্বাই-ঢাকা-মুম্বাই রুটে ৩টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ৫৫৮ সিট, চেন্নাই ঢাকা চেন্নাই রুটে ৩টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ৫৫৮ সিট রাখতে চায়।

ভিস্তারা এয়ারে প্রস্তাব রয়েছে দিল্লি ঢাকা দিল্লি রুটে ১৪টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ২ হাজার ৬৩২ সিট, কলকাতা ঢাকা কলকাতা রুটে ১৪টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ২ হাজার ৬৩২ সিট, মুম্বাই ঢাকা মুম্বাই রুটে ৭টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ১ হাজার ৩১৬ সিট, চেন্নাই ঢাকা চেন্নাই রুটে ৭টি ফ্লাইটে সপ্তাহে ১ হাজার ৩১৬ সিট নির্ধারণের।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান  বলেন, এয়ার বাবল চুক্তির জন্য আমরা ভারতের সিভিল এভিয়েশন বরাবর চিঠি দিয়েছি।

আমরা কোন কোন রুটে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাই তারও একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। তারাও কোন কোন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় এ বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাব সমন্বয় করে ‘এয়ার ট্রাভেল বাবল’ ফ্লাইট চালু করা হবে।

এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর বেবিচক চেয়ারম্যান ভারতের সিভিল এভিয়েশনের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের করোনা পরিস্থিতি এখনো আশঙ্কাজনক এবং উভয় দেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারপরেও দুই দেশের মানুষের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় চুক্তির বিষয়ে তারা আগ্রহী।

বিশেষ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা দিল্লি, দিল্লি ঢাকা, ঢাকা কলকাতা ও কলকাতা-ঢাকা রুটে, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা কলকাতা, কলকাতা ঢাকা, ঢাকা চেন্নাই, চেন্নাই ঢাকা রুটে এবং নভোএয়ার ঢাকা কলকাতা ও কলকাতা ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। এ ছাড়াও ‘এয়ার ট্রাভেল বাবল’ চুক্তি চূড়ান্তে কিছু তথ্যও চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।

সেগুলো হলো ভারত থেকে কতটি ফ্লাইট পরিচালনা হবে এবং এর বিপরীতে বিমান সংস্থাগুলোর কত ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ প্রয়োজন। এ ছাড়া বিমান সংস্থাগুলোর জন্য টিকিটের দাম, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, এয়ারপোর্ট ফি নির্ধারণ প্রয়োজন কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়।

গত ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এয়ার বাবল ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর এক যৌথ সভায় চাওয়া হয় এই পরামর্শ। সভায় জানানো হয়, এয়ার বাবল ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তাবনায় ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে কেবল চিকিৎসা ও ব্যবসার কাজে বৈধ ভিসাধারী ও কূটনৈতিক ব্যক্তিরা দেশটিতে ভ্রমণ করতে পারবেন।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর সঙ্গে যেতে পারবেন একজন সহায়তাকারী।

-দৈনিক আমাদের সময়

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.