এভিয়েশন নিউজ: ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে কড়াকড়ি থাকায় চোরাকারবারিদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
এ কারণে চোরাকারবারিরা বেছে নিয়েছে দুবাই-সিলেট ফ্লাইট। চোরাকারবারিদের একটি গ্রুপ কয়েকদিন ধরে ওসমানী বিমানবন্দর রেকি করছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বড় বড় চালান আটক হওয়ায় চোরাকারবারিরা ছোট আকারে কার্যক্রম শুরু করেছে।
গত ১৫ দিনে ওসমানী অন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে তিনটি স্বর্ণের চালান আটক হয়েছে, সবগুলোই দুবাই-সিলেট ফ্লাইটের যাত্রীদের কাছ থেকে আসা। হাতেগোনা চালান উদ্ধার হলেও গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি চালান কৌশলে বেরিয়ে গেছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। বিমানবন্দরের সার্বিক মনিটরিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও অতীতের চোরাচালান মামলার কোনো কিনারা না হওয়ায় চোরাচালানিরা উৎসাহ নিয়ে দুর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে এ কাজ করছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
গতকাল শনিবার ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের কটু মিয়ার ছেলে দুবাই প্রবাসী রাজু মিয়ার লাগেজ স্ক্যান করে ৩৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে বিমানবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার ওমর মুবিন জানান, বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-০৫২ ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছার পর রাজু মিয়ার লাগেজ স্ক্যান করে ওই পরিমাণ স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়।
গত ২৩ আগস্ট সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী ইউনিয়নের ষাটশোলা গ্রামের ইসাক আলীর ছেলে দুবাই প্রবাসী জয়নাল আবেদীনের লাগেজ তল্লাশি করে দুই কেজি ৯৯ গ্রাম ওজনের ১৮টি স্বর্ণের বার, ১৭টি স্যামসাং গ্যালাক্সি মোবাইল ফোনসেট ও ৪১৪টি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলাও হয়েছে। এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, আমরা কয়েকটি সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আদালত জয়নালের দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বেরিয়ে আসবে মূল তথ্য।
গত ১৫ আগস্ট ১৬ লাখ টাকার স্বর্ণের বারসহ সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ি ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী আবুল কালামকে আটক করে পুলিশ। ওসমানী বিমানবন্দর পার্কিং এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। পুলিশ তার কাছ থেকে ৩২ ভরি ওজনের তিনটি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সিলেট বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিগত সময়ে সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে যত চালান বের হয়েছে, তার বেশিরভাগই ভারতে পেঁৗছে গেছে। সূত্রগুলো জানায়, সিলেটের জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার, সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারা ও তাহিরপুর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, জুড়ি, কুলাউড়া ও বড়লেখা এবং হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাল্লার সবক’টি উপজেলা ভারতের সীমান্তঘেঁষা। এসব উপজেলা দিয়ে বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণ ভারতে চলে যায় বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সমকালকে নিশ্চিত করেছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সিলেট থেকে স্বর্ণ যায়, বিনিময়ে ভারত থেকে আসে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য।
বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা চোরাকারবারিদের মূল টার্গেটে পরিণত হওয়ার কথা স্বীকার করে সমকালকে বলেন, চোরাকারবারিদের একটি চক্র ওসমানী বিমানবন্দর বেছে নিয়েছে। কিছু কিছু যাত্রীর আসা-যাওয়া তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। অবৈধ মালপত্র বিমানবন্দরের বাইরে পেঁৗছে দিতে সিভিল অ্যাভিয়েশন, ইমিগ্রেশন পুলিশ ও বিমানবন্দরের অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে তিনি মনে করেন।