এভিয়েশন নিউজ: গ্রুপ লিডারের প্রতারণার শিকার ১০০ হজযাত্রীর টাকা ফেরতে নিজেদের ব্যবসায়িক সংগঠন হাবের (হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সিদ্ধান্তও মানছে না এক এজেন্সি।
উল্টো তাদের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন হক ট্রাভেল সার্ভিসেস নামের ওই এজেন্সি। ফলে এজেন্সির স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে হাজিদের সার্বিক কল্যাণ ও নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন হাবও।
জানা গেছে, এবারের হজে যেতে ইচ্ছুক ১০০ জনের প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন শফিকুল আমিন নামের এক গ্রুপ লিডার। ২০০৭ সাল থেকে তিনি হক ট্রাভেল সার্ভিসেস নামের একটি এজেন্সির জন্য হাজি সংগ্রহের কাজ করে আসছিলেন। এরই মধ্যে তিনি হাজিদের থেকে নেয়া
বিপুল অঙ্কের টাকা পরিশোধ না করে বাকি রাখেন। এবারো তিনি হজে যেতে ইচ্ছুক ১০০ জন থেকে মোয়ালি্লম ফিসহ অন্যান্য খরচের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা আদায় করেন। কিন্তু মোয়ালি্লম ফি বাবদ হক ট্রাভেল সার্ভিসেসকে কমপক্ষে ৬০ লাখ টাকা দেয়ার পর ওই এজেন্সি তাকে বের করে দেন। পরে শফিকুল হাজি সংগ্রহে যোগ দেন শরীফ এয়ার সার্ভিসেস নামে আরেকটি এজেন্সিকে। এখানেও লিখিত আইনি কোনো চুক্তিপত্র ছাড়াই হজে যেতে ইচ্ছুক আরো ১০০ জন থেকে কমপক্ষে ২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। উক্ত এজেন্সিকে মোয়ালি্লম ফি বাবদ প্রায় ২৮ লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে তিনি পালিয়ে যান। পরে তাকে মিয়ানমার থেকে ধরে আনা হয়। তখন বিষয়টি নিয়ে হাব হক ট্রাভেল সার্ভিসেস ও শরীফ এয়ার সার্ভিসেসকে নিয়ে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেন।
হাব তখন টাকা পরিশোধে উভয় এজেন্সির মধ্যস্থতায় প্রতারক শফিকুল আমিনকে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেয়। এতে শরীফ এয়ার সার্ভিসেস রাজি হয় এবং শফিকুল আমিনের হয়ে ১০০ জনের হজে যাওয়ার ব্যবস্থার আশ্বাস দেয়। সে লক্ষ্যে শরীফ এয়ার সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান সৌদি আরবে যান এবং ১০০ জনের বাড়ি ভাড়া ও খাবারের টাকা পরিশোধ করেন বলে জানান। কিন্তু রোববার পর্যন্ত ওই ১০০ জনের কারোই ভিসা হয়নি বলে শরীফ এয়ার সার্ভিসেসের কোঅর্ডিনেটর ওমর ফারুক জানান।
এদিকে গ্রুপ লিডারের প্রতারণার শিকার হওয়া ১০০ জনের হজযাত্রা নিশ্চিত করতে শনিবার সন্ধ্যায় হাব নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠকে হক ট্রাভেল সার্ভিসেস লিমিটেড শরীফ এয়ার সার্ভিসেসকে ৬২ লাখ ৫২ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয় হাব। এজন্য হাব হক ট্রাভেলসকে একটি চিঠিও পাঠায়।
এ ব্যাপারে হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ যায়যায়দিনকে বলেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বৈঠকে হক ট্রাভেল সার্ভিসেস শরীফ এয়ার সার্ভিসেসকে পাওনা বাবদ ৬২ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, গ্রুপ লিডার শফিকুল যেহেতু শরীফ এয়ার সার্ভিসেসের নামে চলতি বছরের হজের টাকা নিয়েছেন, তাই হক ট্রাভেলস তার পুরানো পাওনা ধরে এ বছরের হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের টাকা আটকানো অনৈতিক বলে মনে করা হয়েছে। সেজন্য হক ট্রাভেল সার্ভিসেস উক্ত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য।
কিন্তু হাবের এ সিদ্ধান্ত জবরদস্তিমূলক বলে তা মানতে নারাজ হক ট্রাভেল সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, তার অনুপস্থিতিতে হাব নেতারা এক পক্ষের বক্তব্য শুনে তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, শফিকুল আমিন আগের পাওনা প্রায় দেড় কোটি টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এ বছর তাকে বাদ দেয়া হয়। তার সঙ্গে এ বছর হজের কোনো লেনদেন হয়নি। তাই হাবের এক তরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শনিবার বিকালেই তিনি উল্টো রিভিউ পিটিশন করেছেন। আর শফিকুল আমিনের সঙ্গে পাওনা পরিশোধে করা সব চুক্তির কাগজপত্র রোববার সাবমিট করেছেন।
মূলত গ্রুপ লিডার শফিকুল আমিনের সঙ্গে শরীফ এয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের আইনি কোনো চুক্তি বা লিখিত শর্ত না থাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাই গ্রুপ লিডারের এ ধরনের প্রতারণার কোনো দায় নিতে নারাজ সংশ্লিষ্ট এজেন্সি, হাব ও ধর্ম মন্ত্রণালয়। শফিকুল আমিন জানান, শুধুমাত্র বিশ্বাসের ওপর ভর করেই তাকে হাজি সংগ্রহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। শফিকুল আমিন বর্তমানে শরীফ এজেন্সিতে আটকা রয়েছেন। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসিন্দা শফিকুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও এ ঘটনার পরই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।