বিমান খাত স্বাভাবিক হতে দেড় বছর সময় লাগবে: বেবিচক চেয়ারম্যান

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চীন ছাড়া আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে প্রায় দুই মাস ধরে। আগামী ৩১ মে থেকে পুনরায় ফ্লাইট চালুর কথা থাকলেও আদৌ সেটি হবে কি-না, রয়েছে সংশয়। চীনের একটি রুট বাদে দেশের চার এয়ারলাইন্সের সব ফ্লাইটই এখন বন্ধ রয়েছে।

আকাশে উড়াল না দিলেও খরচ কিন্তু থেমে নেই। শুধু উড়োজাহাজের কিস্তির অর্থ পরিশোধ নয়, সিভিল এভিয়েশনের চার্জ, কর্মীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ নানান ব্যয় টানতে গিয়ে এ খাতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। লকডাউনের ফলে বিভিন্ন কোম্পানিকে উড়োজাহাজের পার্কিং চার্জ এবং বিমানবন্দরে থাকা অফিসগুলোর জন্য ভাড়া দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এভিয়েশন খাতে এর চেয়ে বড় বিপর্যয় আর কখনও আসেনি এবং আগে কেউ দেখেনিও।

করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের ওপর পড়া বিপর্যয় নিয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় । পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

দেশের এভিয়েশন খাত ও ফ্লাইট চলাচল কবে নাগাদ স্বাভাবিক হতে পারে?

মফিদুর রহমান : আমার ধারণা এই মহামারি শেষ হওয়ার পরও এভিয়েশন খাত স্বাভাবিক হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লেগে যাবে। বর্তমানে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঊর্ধ্বমুখী। এটি কমতে সময় লাগবে। অর্থাৎ ২০২১ সালের শেষের দিকে বা ২০২২ সালে এভিয়েশন খাত পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারে।

এভিয়েশন খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে বেবিচক কোন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে?

মফিদুর রহমান : এয়ারলাইন্সগুলোর কিছু অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ মওকুফের সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে নেয়া হয়েছে। এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকার তাদের প্রণোদনা দেবে। তবে সরকার সরাসরি প্রণোদনা না দিয়ে বেবিচককে অথরাইজ করবে। তবে সেক্ষেত্রে বেবিচক নিজের রাজস্ব হারাবে।

যদি আমরা এয়ারলাইন্সগুলোকে টাকা ছাড় দেই, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সমপরিমাণ অর্থের জোগান দিতে হবে, আমাদেরও ট্যাক্স-ছাড়সহ নানা সুবিধা দিতে হবে।

এমন সিদ্ধান্ত বেবিচকের রাজস্বে কোনো প্রভাব ফেলবে কি-না?

মফিদুর রহমান : বেবিচকের বার্ষিক রাজস্ব প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার বেশি। টাকাগুলো আবার উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় হয়। যদি ডমেস্টিক ফ্লাইটে ছয় মাসের জন্য ৫০% চার্জ মওকুফ করা হয় তবে আমরা ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাব। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য ৫০% চার্জ মওকুফ করা হলে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হবে। বেবিচকেরও নিজস্ব খরচ চালাতে হয়। আমাদেরও টাকার প্রয়োজন। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ রুটে সীমিত আকারে উড়োজাহাজ চলাচল কবে নাগাদ শুরু হতে পারে?

মফিদুর রহমান : আপাতত ৩০ মে পর্যন্ত ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরপর দেশের ও বিশ্বের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ফ্লাইট চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে যদি সুযোগ সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।

নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও এয়ারলাইন্সগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন কোনো নির্দেশনা দেয়া হবে কি-না?

মফিদুর রহমান : ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি হয়েছে। যদি ফ্লাইট চালু হয় তখন চেক-ইন, ইনফ্লাইট সার্ভিস, ক্রুদের মুভমেন্টসহ নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চেক-ইনের সময় কাউন্টার ও আশপাশের সহযোগীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, ডিস্পোজেবল ক্যাপ পরতে হবে। এছাড়া কাউন্টারের পাশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। চেক-ইনের আগে যাত্রীর শরীরের তামপাত্রা মাপা হবে। তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে তাকে বোর্ডিং পাস বা বিমানে ওঠার অনুমতি দেয়া হবে না। এছাড়া যাত্রীদের উড়োজাহাজে ওঠার আগে প্যাসেঞ্জার হেলথ কার্ড দেয়া হবে। কার্ডে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। উত্তর সন্তোষজনক হলেই কেবল তারা ফ্লাই করতে পারবেন।

ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে কোন ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে?

মফিদুর রহমান : দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ফ্লাইট ছাড়ার আগে উড়োজাহাজকেও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সবাইকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে ‘সার্টিফিকেট অব ডিসইনফেকশন’ নিতে হবে। প্রতিবার জীবাণুমুক্তের পর বেবিচকের প্রতিনিধিরা প্রক্রিয়াটি দেখে সার্টিফাইড করবেন, এরপরই ফ্লাইট ছাড়বে।

করোনা-পরবর্তী ফ্লাইটের ভেতরের পরিস্থিতি কেমন হবে?

মফিদুর রহমান : ফ্লাইটে খাবার সার্ভের বিষয়টি একটু রেস্ট্রিকটেড (নিয়ন্ত্রিত) করা হবে। দেড় ঘণ্টার নিচে কোনো ফ্লাইটে খাবার পরিবেশন করা যাবে না। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সীমিত আকারে পানি ও জুস থাকবে যা আগে থেকেই একটি ইন্টাক্ট বক্সে রাখতে হবে। দেড় ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টার ফ্লাইটের যাত্রীদের শুকনা খাবার দিতে হবে যা প্লেনে ওঠার আগেই সরবরাহ করতে হবে।

ফ্লাইটের সময় যদি চার ঘণ্টার বেশি হয় তবে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রাখতে হবে। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা মাপতে হবে। কারও তাপমাত্রা যদি ৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তবে ক্রুরা আগে থেকেই ডেসটিনেশন এয়ারপোর্টকে জানাবে যাতে প্লেন ল্যান্ড করার সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন।

জাগোনিউজ২৪.কম

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.