এভিয়েশন নিউজ: যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শ্রমিক পাঠানো বন্ধের সুপারিশ করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। একে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাইবে সবাই। একই সঙ্গে ওইসব দেশে আটকে পড়াদের ফিরিয়ে আনতেও যথাযথ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। পরিসংখ্যান বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি শ্রম রফতানি করে বাংলাদেশ। এগুলোর অধিকাংশই যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে সেখানে। সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে গেলে জনশক্তি রফতানি কমে আসবে, যা এ খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আমরা আশা করব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জোর তত্পরতা চালাবে। সন্দেহ নেই, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন এবং আমাদের জনশক্তি রফতানির জন্য উপযুক্ত বাজার খুঁজে বের করতে হবে। ভুললে চলবে না, যুদ্ধবিধ্বস্ত ও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করায় অনেক দেশ থেকে শ্রমিক ফেরতও আসছেন। তাদের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশ আমাদের শ্রমিক আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
প্রবাসীদের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে দেশে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোয় শ্রমিক রফতানি বন্ধ রাখলে সংশ্লিষ্ট খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শ্রমশক্তির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব বাজার ধরতে হলে দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকের জোগান বাড়াতে হবে। এজন্য বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়োগ ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিএমইটি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি নারী কর্মীদেরও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রবাসে পাঠানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, কর্মী গ্রহণকারী দেশের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা দরকার।
২০০৭ সাল থেকে চলে আসা বিশ্বমন্দার কারণে বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা থেকে শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। এতে অনেক কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন গেল কয়েক বছরে। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বিদেশে কর্মী পাঠানো কমে গেলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতির ওপর। জনশক্তি রফতানি বাড়াতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা জরুরি। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত শ্রম কাউন্সিলের-কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনাও দিতে পারে।
গেল কয়েক বছরে জনশক্তি রফতানি হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে এ মুহূর্তে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শ্রমিক প্রেরণ নিষিদ্ধ করাটি ছিল একটি কঠিন সিদ্ধান্ত। এতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে জনশক্তি রফতানিতে। এক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় বাজার সম্পর্কে গবেষণা চালাতে হবে। নতুন সরকার এরই মধ্যে কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে সাফল্য লাভে সরকার একা চেষ্টা করলে হবে না। জনশক্তি রফতানিতে সরকারের লক্ষ্য পূরণ এবং শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিখাতকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে।