এভিয়েশন নিউজ: হজযাত্রীদের সার্বিক তদারকির জন্য এবার হজ এজেন্সিগুলোকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ স্টিকার বা বারকোড। এজেন্সির মোনাজ্জেমরা এর মাধ্যমে নিজ নিজ যাত্রীদের সার্বিক দেখভাল করবেন। ৮৩৫টি হজ এজেন্সি ও সংশ্লিষ্টদের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে চলতি বছর এক হাজার ২৭০টি বারকোড দেয় ঢাকায় অবস্থিত সৌদি দূতাবাস। এরমধ্যে মাত্র ৫১০টি এজেন্সিকে বিতরণ করে বাকি ৭৬০টি বারকোড নিজেদের কাছে রেখেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ৩২৫টি হজ এজেন্সির মোনাজ্জেমরা এখনও বারকোড হাতে পায়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব বারকোড অসৎ উদ্দেশে রেখে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ কারণে উদ্বিগ্ন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। তাদের দাবি, প্রতিটি এজেন্সিই একটি করে বারকোড পাওয়ার যোগ্য। তবে এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না ধর্ম মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়কমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে জানানো হয়, তিনি বাসায় নেই। অন্যদিকে ধর্ম সচিব চৌধুরী মোঃ বাবুল হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিয়ে তার নম্বরে দুবার এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। জানতে চাইলে হাব-এর সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার যুগান্তরকে বলেন, প্রতিটি হজ এজেন্সি একটি করে বারকোড পাওয়ার কথা। সে মোতাবেক সৌদি দূতাবাসও বারকোড দিয়েছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তা সব এজেন্সিকে দেয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, হজযাত্রীদের দেখভালের জন্য আগে সৌদি দূতাবাস তিন মাসের জন্য মালটিপল ভিসা দিত। তা দিয়েই হজ এজেন্সির মোনাজ্জেমরা প্রয়োজনমত সৌদি আরবে যাতায়াত করতেন। চলতি বছর এ মালটিপল ভিসা তিন মাসের মেয়াদে না দিয়ে এক মাসের জন্য দিয়েছে সৌদি দূতাবাস। এর বিকল্প হিসেবে সার্ভিস প্রোভাইডার ক্যাটাগরিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এক হাজার ২৭০টি স্টিকার বা বারকোড দেয় সৌদি দূতাবাস। ৮৩৫টি হজ এজেন্সিকে একটি করে এবং বাকি বারকোড হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণ করার কথা। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আশকোনা হজ অফিসকে মাত্র ৫১০টি বারকোড হজ এজেন্সির মধ্যে বিতরণ করার জন্য দেয়া হয় বলে ওই অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫১০টি এজেন্সিকে বিতরণের পর বাকি ৭৬০টি বারকোড ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মন্ত্রী-সচিবের জন্য রাখা হয়েছে ২৪৮টি। এ ছাড়াও হজ চিকিৎসক দলের জন্য ১৮১টি, হজ প্রশাসনিক দলের জন্য ৩৫টি, কম্পিউটার অপারেটরদের জন্য ৯টি, সরকারি খরচে হজে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য ১৩০টি, মন্ত্রী-এমপিসহ হজ প্রতিনিধি দলের জন্য ৫০টি, আইটি ও প্রযুক্তি দলের জন্য ২০টি, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন্য ৪০টি, হাব কার্যকরী কমিটির জন্য ২৭টি এবং সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০টি বারকোড বিতরণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় হজ এজেন্সিগুলো বারকোডের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে আশকোনার হজ অফিসে। তাদের ম্যানেজ করতে বলা হচ্ছে, যেসব হজ এজেন্সির যাত্রীর সংখ্যা ৭৫-এর কম হবে তাদের বারকোড দেয়া হবে না।
সর্বনিু ৭৭ জন হজযাত্রী রয়েছে এমন এজেন্সিকে বারকোড দেয়া হয়েছে। অথচ প্রতিটি হজ এজেন্সিরই বারকোড পাওয়ার কথা। এ অবস্থায় হজ অফিস থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আরও ৩২৫টি বারকোড চেয়ে আবেদন করেছেন হজ পরিচালক মিজানুর রহমান। বারকোড না পাওয়া ভুক্তভোগী হজ এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, এসব বারকোড হজ এজেন্সির কাছেই বড় অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হতে পারে। কারণ নিজেদের ব্যবসা ঠিক রাখতে বারকোড না পাওয়া এজেন্সিগুলো কয়েক লাখ টাকায় তা কিনতে বাধ্য হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, আরও ৩২৫টি বারকোড চেয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে সৌদি দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলেও কোনো কাজ হয়নি। তাদের মতে, এসব বারকোড দেয়া হয়েছে হজ এজেন্সি ও হজ সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য। রাজনৈতিক ব্যক্তি বা আমলাদের জন্য নয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে পর্যাপ্ত বারকোড দেয়ার পরও কেন হজ এজেন্সিগুলো পেল না তা রহস্যজনক। তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দাবি করায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা যুগান্তরের কাছে স্বীকার করে বলেন, বারকোড সংকট রয়েছে, তবে সৌদি দূতাবাস আশ্বাস দিয়েছে বারকোড না দিলেও বিশেষ হজ ভিসা দেয়া হবে। এবার বাংলাদেশী হজ যাত্রীর সংখ্যা ৯৮ হাজার ৭৫৭ জন।