উড্ডয়ন অনুমতি বাতিলের মুখে রিজেন্ট

regent-airwaysএভিয়েশন নিউজ: রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বকেয়া আদায়ে উড্ডয়ন অনুমতি (এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেশন) বাতিল, এমনকি উড়োজাহাজ জব্দের কথাও ভাবছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাওনা চেয়ে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে পাঠানো সর্বশেষ চিঠিতে এ হুমকি দিয়েছে বেবিচক।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বিমানবন্দর ব্যবহারের ফলে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি ৫২ লাখ ৬৯ হাজার ২৮০ টাকা।

এর মধ্যে বেবিচকের পাওনা ২২ কোটি ৪১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৪ টাকা। এছাড়া থাই সরকারের ট্রান্সপোর্ট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অ্যারোনটিক্যাল রেডিও অব থাইল্যান্ড লিমিটেড বা অ্যারো থাই কর্তৃপক্ষ পাবে ২ কোটি ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৬ টাকা। বকেয়া অর্থ পরিশোধে রিজেন্ট এয়ারওয়েজকে কয়েক দফা চিঠি পাঠিয়েও তা আদায় করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে অর্থ আদায় না হওয়া পর্যন্ত উড্ডয়ন অনুমতি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন উড়োজাহাজ জব্দের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবিচক।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের সদস্য (অর্থ) মিজানুর রহমান বলেন, দেশে-বিদেশে বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য রিজেন্ট এয়ারওয়েজকে কয়েক দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। তার পরও বকেয়া পরিশোধের পদক্ষেপ নিচ্ছে না এয়ারলাইনসটি। এ অবস্থায় পাওনা আদায়ে এয়ারলাইনসটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বেবিচক।

পাওনার বিষয়টি উল্লেখ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ১১ সেপ্টেম্বর বেবিচকের আইন কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠান এর পরিচালক (অর্থ) মো. তৌহিদ হাসানাত খান। তাতে বলা হয়, বিভিন্ন বিমানবন্দর ব্যবহারজনিত কারণে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে ২২ কোটি ৪১ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৪ টাকা পাওনা রয়েছে বেবিচকের, যা তারা পরিশোধ করছে না। অধিকন্তু বিদেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্যও অ্যারোনটিক্যাল চার্জ পরিশোধ করছে না প্রতিষ্ঠানটি।

অ্যারো থাই কর্তৃপক্ষও বেবিচক চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে। এ অবস্থায় রিজেন্ট এয়ারওয়েজের উড্ডয়ন অনুমতি বাতিলসহ এয়ারলাইনসটির মালিকানাধীন উড়োজাহাজ জব্দ করে বকেয়া রাজস্ব আদায়ের জন্য অ্যাডমিরাল্টি কোর্টে আবেদন করা হবে।

বকেয়া আদায়ে গত ২১ এপ্রিল রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন বেবিচকের পরিচালক (অর্থ)। একই বিষয়ে গত ৩০ এপ্রিলও বেবিচকের পরিচালকের (এটিএস/অ্যারো) সভাপতিত্বে উভয় প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ অ্যারো থাই কর্তৃপক্ষের পাওনা পরিশোধ করে প্রমাণসহ তা বেবিচককে জানাবে— এমন সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। পাশাপাশি ওই সময়ের মধ্যে বেবিচককেও পাওনা থেকে ২ কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় রিজেন্ট।

বাকি অর্থ এক বছরের মধ্যে কীভাবে পরিশোধ করা হবে, তারও একটি পরিকল্পনা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দেয়ার কথা ছিল এয়ারলাইনসটির। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৪ সেপ্টেম্বর রিজেন্ট এয়ারওয়েজকে আবারো চিঠি পাঠায় বেবিচক। চিঠিতে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য বলা হয়। অন্যথা এয়ারলাইনসের উড্ডয়ন অনুমতি বাতিলসহ উড়োজাহাজ জব্দের কথা জানানো হয়। যদিও এখন পর্যন্ত বেবিচককে এ বিষয়ে কোনো কিছু জানায়নি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছ থেকে অর্থ না পেয়ে এ বিষয়ে সহায়তা চেয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান বরাবর সর্বশেষ ১ জুলাই চিঠি পাঠায় অ্যারো থাই কর্তৃপক্ষ। একই সহযোগিতা চেয়ে ১৭ এপ্রিল এবং গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরও বেবিচক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিল তারা।

জানতে চাইলে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এসএম রিয়াজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, বেবিচকের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আর থাইল্যান্ড সিভিল এভিয়েশনের পাওনা অর্থও পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামভিত্তিক হাবিব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট এয়ারওয়েজ (এইচজি এভিয়েশন লিমিটেড) ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রা করে এয়ারলাইনসটি।

অভ্যন্তরীণ রুটে সফলভাবে দুই বছর ফ্লাইট পরিচালনা করলেও আন্তর্জাতিক পরিসরে গিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে বেসরকারি এয়ারলাইনস সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। বহরের উড়োজাহাজগুলোয় নিয়মিত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সূচি। পাশাপাশি অর্থসংকটের কারণে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ দেশে-বিদেশে রয়েছে বড় অঙ্কের বকেয়া।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.