এশিয়ার আকাশ সেবা খাতে পাইলট সংকট তীব্র: এয়ারবাস সিইও
এশিয়ায় আকাশ সেবার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এর সঙ্গে সমানতালে বাড়ছে এয়ারলাইনারগুলোর বৈমানিক সংকট। বর্তমানে এশিয়ায় সুপ্রশিক্ষিত পাইলটের অভাব চরম পর্যায়ে রয়েছে। উড়োজাহাজ নির্মাতা এয়ারবাসের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ফ্যাব্রিস ব্রেজিয়ার গতকাল এ কথা বলেছেন। খবর সিএনবিসি।
ব্রেজিয়ার বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগামী ২০ বছরে এশিয়ায় প্রায় দুই লাখ পাইলটের চাহিদা তৈরি হবে। বর্তমানে এ অঞ্চলে বৈমানিকের সংখ্যা মাত্র ৬৫ হাজার।’
ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলার লক্ষ্যে সম্প্রতি এয়ারবাস ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এয়ারবাস এশিয়া ট্রেনিং সেন্টার (এএটিসি) এখন পর্যন্ত এয়ারবাসের সর্ববৃহৎ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তুলুজ, মিয়ামি ও বেইজিংয়ে কোম্পানিটির আরো তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রটিতে আটটি ফুল-ফ্লাইট সিমুলেটর ও ছয়টি ককপিট ট্রেনিং ডিভাইস বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতি বছর ১০ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থী তাদের দক্ষতা বাড়াতে পারবেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে এয়ারবাসের ৫৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।
এএটিসিতে বক্তব্য দানকালে ব্রেজিয়ার বলেন, ‘এশিয়ায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত পাইলটের সংকট তৈরি হয়েছে। অঞ্চলটির দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধি এর অন্যতম কারণ। প্রশিক্ষণের জন্য পাইলটদের ফ্রান্স বা যুক্তরাষ্ট্রে না পাঠিয়ে এশিয়ায়ই একটি কেন্দ্র চালু করা সবার জন্যই মঙ্গলজনক ও কার্যকর হবে।’
২০ বছরে গতিশীল প্রবৃদ্ধির কারণে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মানুষের আয়সীমা বেড়েছে। এতে মধ্যবিত্তদের ভ্রমণ চাহিদায় এক প্রকারের জোয়ার তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি উদার বাজার ব্যবস্থা স্বল্প খরচের আঞ্চলিক এয়ারলাইনারগুলোর (এলসিসিএস) উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এমনকি বৈশ্বিক পর্যটনের অন্যতম মূল প্রভাবক চীনের শ্লথগতির প্রবৃদ্ধিও আকাশ সেবা সংস্থায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে ব্রেজিয়ার জানান।
তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে চীনে উড়োজাহাজ চলাচলের আকার বাড়বে প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে। এটি এশিয়ার অনেক দেশেই আকাশ সেবার প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার মতে, ‘২০১৬ সালের শুরুটা বেশ ধীরগতির দেখা গেছে। তবে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, চলতি বছরেও বুক-টু-বিল (একটি মানদণ্ড, যার মাধ্যমে চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত সরবরাহ নির্দেশ করা হয়) একের ওপরে থাকবে। সুতরাং বলা যায় যে, আকাশ সেবার বাজার ভালো অবস্থানে আছে ও ক্রমেই বড় হচ্ছে।’
এয়ারবাসের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বোয়িং ধারণা করছে, ভবিষ্যতে এশিয়ার এভিয়েশন বাজারে নতুন করে আরো ১০ কোটি যাত্রী যোগ হবে। শিকাগোভিত্তিক কোম্পানিটিও গত বছর পাইলট সংকটের ব্যাপারে সতর্ক করেছিল। বোয়িং পূর্বাভাস দিয়েছে, পরবর্তী ২০ বছরে এশিয়ায় ২ লাখ ২৬ হাজার নতুন পাইলটের প্রয়োজন দেখা দেবে, যা অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি।
এদিকে জ্বালানি মূল্যের সাম্প্রতিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে ব্রেজিয়ার জানান, এ ব্যাপারে তিনি শঙ্কিত নন। তিনি বলেন, ‘জ্বালানির নিম্নমূল্য এভিয়েশন বাজারের জন্য আশীর্বাদ হিসেবেই বিবেচিত হয়। এয়ারবাসও এর সুবিধা নেবে।’