কয়েক মাস আগেও দিল্লির বিলাসবহুল হোটেল সূর্যর কর্মীরা অতিথিদের উজ্জ্বল রঙের শাড়ি পরে স্বাগত জানাতেন। কিন্তু এখন সেই কর্মীদেরই মেডিকেল স্যুটে আবৃত হয়ে শিখে নিতে হবে স্ট্রেচারে রোগী পরিবহনের কৌশল। ভারতের রাজধানীতে বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
মনে করা হচ্ছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দিল্লির হাসপাতালগুলোয় আর কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্থান সংকুলান হবে না। এ অবস্থায় শহরটির বিভিন্ন আবাসিক হোটেলকে আইসোলেশন ও হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর এ অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে হোটেল ব্যবসায়ীদের। খবর এএফপি।
পাঁচ তারকা হোটেল সূর্যর অপারেশনাল ম্যানেজার রিতু যাদব বলেন, মেডিকেল গাউন পরা কিংবা রোগীদের দেখভাল করা চিকিৎসক ও সেবিকাদের জীবন-জীবিকারই অংশ। কিন্তু আমাদের জন্য এটি একেবারেই নতুন ও খুবই কঠিন অভিজ্ঞতা।
রিতু আরো বলেন, কীভাবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পরিধান ও খুলতে হবে, সে বিষয়ে হাসপাতাল থেকে আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তবে সত্যি বলতে, পেশা হিসেবে হসপিটালিটি বেছে নেয়ার সময় আমি কখনই ভাবিনি যে চাকরিজীবনে আমাকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল বস্তিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির অবস্থান দিল্লিতে। এখন পর্যন্ত এখানে কভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৭৫ হাজারের মতো। কিন্তু শহর কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে যে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ এখানে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখে গিয়ে পৌঁছতে পারে।
এদিকে এরই মধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফেরত পাঠানোর খবর প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরো অবনতির দিকে তাকিয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকেই শহরের হোটেলগুলোকে হাসপাতালে রূপান্তরের বিষয়ে জানিয়ে রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। শুধু হাসপাতালই নয়, এ লক্ষ্যে একই সঙ্গে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ওয়েডিং হল এবং কয়েক হাজার রেলওয়ে কোচ।
কিন্তু সরকারের এ পদক্ষেপ হোটেল ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। তাদের দাবি, আগে থেকেই জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে হোটেল ব্যবসা অভাবনীয় ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় হাসপাতালে রূপান্তরের নির্দেশ পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে তুলেছে। তাছাড়া কভিড-১৪৯ আক্রান্তদের সংস্পর্শে হোটেল কর্মীদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হবে।
আর এ কাজের জন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন সূর্য ও আরো চারটি হোটেলের মালিকরা। তারা বলছেন, তাদের হোটেলের বহু কর্মীর বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব। ফলে তারা সংক্রমণ ও মৃত্যুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছেন। তাছাড়া হাসপাতালের রোগীর সেবা কিংবা জৈব মেডিকেল বর্জ্য সামলানোর ক্ষেত্রে তাদের কোনো পূর্বাভিজ্ঞতাও নেই।
হোটেল সূর্যর এক শীর্ষ কার্যনির্বাহী গ্রিশ বিন্দ্রা বলেন, পুরো বিষয়টি একেবারেই হঠাৎ করে ঘটল। আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও করা হয়নি। আমরা সংবাদমাধ্যমের দ্বারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কথা জেনেছি। বিষয়টি এমন যে রাতে আপনি হোটেলে ঘুমিয়ে আছেন, সকালে উঠে দেখলেন হোটেলটি হাসপাতালে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তবে এক্ষেত্রে আদালতের কাছ থেকে কিছুটা হলেও সুবিধাজনক রায় পেয়েছে হোটেল সূর্য। এখন পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুরোপুরি হাসপাতালে রূপান্তরের বদলে হোটেলটি কভিড কেয়ার সেন্টার হিসেবে কাজ করতে পারবে।
এখানে এমন রোগীদের সেবা দেয়া হবে, যারা সুস্থ হওয়ার পথে কিংবা যাদের সংক্রমণ লক্ষণের মাত্রা খুব বেশি নয়। সূর্যর পাশাপাশি এ হাসপাতাল কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হচ্ছে আরো প্রায় ৩০টি হোটেল। এসব হোটেলের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হবে জরুরি সেবার জন্য।
হোটেলগুলো খাবারসহ এ সেবার জন্য একদিনে সর্বোচ্চ ৬৬ ডলার ফি নিতে পারবে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদেরকে শুধু বেডশিট বদলানো কিংবা নিয়মিত রুম সার্ভিসের বাইরে আরো উদ্ভাবনী চিন্তা করতে হবে। ব্যবহার করতে হবে ডিসপোজেবল প্লেট, নিশ্চিত করতে হবে সামাজিক দূরত্ব। একই সঙ্গে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে হোটেলের কর্মীদেরও।