স্লো ওয়াই-ফাই কানেকশন সমস্যার সহজ কিছু সমাধান

slow-wifi-644x250ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাব – ইত্যাদি সকল স্মার্ট ডিভাইসের সাথে সাথে যেন ওয়াই-ফাই কানেকশনও আজকাল আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই অতি প্রয়োজনীয় ওয়াই-ফাই সিগন্যালই মাঝে মধ্যে অনেকের কিছুটা ধীর গতির মনে হয়, যেন যেরকম স্পিড পাওয়ার কথা সচরাচর, সেরকমটা পাওয়া যায়না আর এমন হলে সত্যিই খুব বিরক্ত লাগে। সত্যি কথা বলতে অনেক কারণ কাজ করতে পারে ওয়াই-ফাই সিগন্যালের এই ধীর গতির পেছনে। কিন্তু তার মধ্যে থেকেও সহজ কিছু কারণ যেগুলো আমরা অনেকেই খুব সহজ দেখে খেয়াল করিনা সেই সকল কারণগুলো আজ আপনাদের সামনে সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করব যাতে করে কিছুটা হলেও আমরা এই ধীর গতির সিগন্যাল সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারি।

১। রাউটারের পজিশন বদলান – অনেকেই রাউটারের প্লেসমেন্ট নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না, কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে সামান্যতম জায়গা বদল করেও আপনি আপনার রাউটারটি থেকে বেশ ভালো পারফর্মেন্স পেতে পারেন। রাউটারের প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ। যেমন –

উচ্চতা – রাউটার যত উপরে রাখবেন ঠিক ততটাই রাউটারটি তার রেডিও ওয়েভগুলো সর্বোচ্চভাবে ব্রডকাস্ট করতে সক্ষম হবে! তাই সম্ভব হলে রুমের সবচাইতে উঁচু স্থানে রাউটারটি রাখা উচিৎ।
কনক্রিট এবং মেটাল – কনক্রিট এবং মেটালের মত ম্যাটারিয়ালগুলো ওয়াই-ফাই এর ওয়েভেকে বাঁধা দিয়ে থাকে! তবে শুধু যে এই দুটি ম্যাটারিয়ালই রেডিও ওয়েভকে বাঁধা প্রদান করে তা কিন্তু নয় বরং এই জাতিয় অনেক ম্যাটারিয়ালের তৈরি বস্তুও একই ভাবে সিগন্যালকে বাঁধাগ্রস্ত করতে সক্ষম, যেমন ধরুন – ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সমূহ! তাই রাউটারটি রাখার সময় এমন একটি স্থানে রাখা উচিৎ যেন রাউটারটির আশেপাশে এরকম কোন কিছু না থাকে।
দূরত্ব – রাউটার থেকে আপনি যত দূরে যাবেন আপনার ডিভাইসে উক্ত রাউটারের সিগন্যালটি ততটাই দুর্বল হয়ে যাবে। তাই চেষ্টা করবেন রাউটারটি আপনার রুম বা ফ্ল্যাটের ঠিক মাঝখানে রাখার জন্য যাতে করে সম্পূর্ণ এরিয়াটি রাউটারটি কভার করতে পারে।

২। ওয়্যারলেস ইন্টারফেরেন্স এবং নয়েজ – আপনি কি জানেন যে আপনার চারপাশে বিভিন্ন রকম ওয়্যারলেস সিগন্যাল রয়েছে? কীভাবে? যেমন ধরুন – ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সমূহ, ওয়াই-ফাই রাউটার সমূহ, স্যাটেলাইট, সেল টাওয়ার এবং আরও ইত্যাদি! এসকল ওয়্যারলেস ইন্টারফেস এবং এদের দ্বারা সৃষ্ট এই নয়েজগুলোও কিন্তু আপনার ওয়াই-ফাই স্পিডকে কিছুটা হলেও কমাতে সম্ভব! বুঝতে পারছেন না?? আচ্ছা, কিছুটা বিস্তারিতই জানা যাক চলুন।

মাইক্রোওয়েভ – আপনার ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে ইন্টারফেরেন্স সৃষ্টি করতে যে আপনার ঘরে থাকা মাইক্রোওয়েভ ওভেনই যথেষ্ট তা কি আপনার জানা আছে? এই সমস্যাটি আরও বেশি হয়ে থাকে পুরাতন রাউটারগুলোর সাথে। কেননা, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ২.৪৫ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে থাকে যা ২.৪ গিগাহার্জের ওয়াই-ফাই ব্যান্ডের খুবই কাছাকাছি!
বেশীরভাগ মাইক্রোওয়েভ ওভেন এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন এর ওয়েভগুলো বাইরে ডিটেক্ট করা না যায় তবে যদি কোন ডিভাইসে ফলটি অথবা নিম্নমানের শিল্ড থাকে তবে সেটি খুব সহজেই আপনার ওয়াই-ফাই সিগন্যালে ইন্টারফেরেন্স তৈরি করতে সম্ভব!

ব্লুটুথ ডিভাইস – ব্লুটুথ প্রযুক্তিও অপারেট হয়ে থাকে ২.৪ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে! বাকীটা বুঝতেই পারছেন নিশ্চয়ই? তাই, ব্লুটুথ ডিভাইসগুলোও আপনার ওয়াই-ফাই সিগন্যালকে দুর্বল করে তুলতে পারে।
ক্রিসমাস লাইট – অদ্ভুত হলেও সত্যি যে ক্রিসমাস লাইটগুলো আপনার ওয়াই-ফাই ব্যান্ডে ইন্টার-ফেয়ার করতে সক্ষম, কেননা প্রতিটি লাইটই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে থাকে।

৩। আপনার প্রতিবেশী – আপনার আশে পাশে সবাই নিশ্চয়ই রাউটার ব্যাবহার করে থাকে, তাই না? আর একারণে অনেকগুলো রাউটার প্রায় কাছাকাছি অবস্থানে থাকার ফলে চ্যানেল ওভারল্যাপের সৃষ্টি হতে পারে। আর এভাবেই প্রতিবেশীদের রাউটারের কারণে আপনার ওয়াই-ফাই ব্যান্ড কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এছাড়াও এমন যদি কেউ থেকে থাকে আপনার প্রতিবেশীদের মধ্যে যে আপনার ওয়াই-ফাই সেবা কোনভাবে আপনাকে না বলেই উপভোগ করছে তবে আপনার রাউটার সেটিংসের দিকে আপনার লক্ষ্য রাখাটাই শ্রেয় হবে বলে অন্তত আমি মনে করি!

৪। আপনার কম্পিউটারটিতে ভালো করে খেয়াল করে দেখুন – এরকম হতেই পারে যে আপনি টরেন্টে অনেক কিছু ডাউনলোড কিউইতে রেখে দিয়েছেন এবং আপনার হয়ত খেয়াল নেই আর এভাবেই আপনার ওয়াই-ফাই এর স্পিড কমে যাচ্ছে! এছাড়াও আপনি টাস্ক ম্যানেজার থেকে রানিং থাকা প্রতিটি অ্যাপলিকেশনেও চেক করে দেখতে পারেন যে ব্যাক গ্রাউন্ডে কোন অ্যাপ বা সফটওয়্যার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ টেনে নিচ্ছে কিনা!!

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.