চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখার দ্বৈত শাসনের অবসান হচ্ছে। এ শাখার পুরো নিয়ন্ত্রণ যাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) হাতে। এতদিন এখানকার কারিগরি সব সহায়তা এসবি দিলেও জনবল পদায়ন করত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। বিমানবন্দরে অদক্ষদের পদায়নের কারণে সেবা দিতে জটিলতায় পড়তে হতো এসবিকে। এ ছাড়া দুটি সংস্থার মধ্যে কাজের সমন্বয়হীনতায়ও সেবা প্রদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। পুরো কার্যক্রম ঢাকা থেকে পরিচালনার লক্ষ্যে ঢাকা এসবির একটি টিম সম্প্রতি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছে।
সিএমপির বিশেষ শাখার উপপুলিশ কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইঞা বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে ঢাকা বিমানবন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনা করবে ঢাকা এসবি। সে লক্ষ্যে ঢাকা এসবির একটি টিম চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পরিদর্র্শন করেছে। আগে থেকেই বিমানবন্দরে কারিগরি সব সহায়তা দিচ্ছে ঢাকা এসবি। শুধু জনবল দেয়া হতো সিএমপি থেকে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে সবচেয়ে পছন্দের এবং লোভনীয় জায়গা হচ্ছে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখা। এখানে পদায়ন পেতে কনস্টেবল থেকে কর্মকর্তা পর্যন্ত চলে টাকার খেলা। সিএমপির জনবল কাঠামো অনুযায়ী বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন শাখায় মঞ্জুরিকৃত ৩১ জনের স্থলে কর্মরত রয়েছে ৬১ জন। এর মধ্যে ৩ জন ওসির স্থলে রয়েছে ১২ জন, ১৯ জন এসআইয়ের বিপরীতে আছে ২৬ জন, ৩ জন এএসআইয়ের বিপরীতে আছে ১৬ জন এবং ৫ জন কনস্টেবলের বিপরীতে আছে ১৫ জন।
প্রশ্ন উঠেছে বিমানবন্দরে ১২ জন ওসির কী কাজ। সিএমপির বিশেষ শাখায় কর্মরতদের ইমিগ্রেশনে পদায়নের নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত অনভিজ্ঞদের পদায়ন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিমানবন্দরে অতিরিক্ত জনবল সম্পর্কে সিএমপির বিশেষ শাখার উপপুলিশ কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইঞা বলেন, ওসি পদে মঞ্জুরিকৃত তিনটি পদ থাকলেও আরও চারটি পদ বৃদ্ধি করে ৭টি ওসির পদ সৃষ্টি করা হয়। তবে নতুন মঞ্জুরিকৃত পদগুলো এখনও অনুমোদন পায়নি।
বিমানবন্দর দিয়ে হচ্ছে মানব পাচার : শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে সক্রিয় রয়েছে মানব পাচারে নিয়োজিত বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রাতে ডবলমুরিং থানার দুবাই হোটেল থেকে পাচার হতে যাওয়া তিন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন : শফিকুল ইসলাম (২৯), নয়ন খান (২৮) ও আবদুর রহিম (৩৮)। এ সময় দুই মানব পাচারকারীকেও গ্রেফতার করা হয়। এর আগেও ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্টসহ মানব পাচারকারী একটি চক্রকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
যাত্রী হয়রানি : শাহ আমানত বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বেলাল উদ্দিন নামে এক দুবাই প্রবাসী অভিযোগ করেছেন, তিনি ব্যবসার প্রয়োজনে ঘন ঘন যাতায়াত করেন। গত সপ্তাহে দুবাই যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। ১০ হাজার টাকা নগদ দাবি করেন এক ওসি। অন্যথায় তদন্ত স্লিপ ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তার দুবাই যাত্রায় বাধা সৃষ্টির হুমকি দেন তিনি। শুধু তাই নয়, এ বিমানবন্দর দিয়ে ভ্রমণ ভিসার যাত্রীরাও চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে নির্র্দিষ্ট হারে অর্র্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ আমানত বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘এ বিমানবন্দর দিয়ে দৈনিক দুই হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। একসময় ব্যাগ টানাটানিসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির অভিযোগ থাকলেও আমি আসার পর থেকে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
আরও খবর