২৭ ট্রাভেল এজেন্সির কর ফাঁকি: ব্যবস্থা নিচ্ছে এনবিআর!

nbrএভিয়েশন নিউজ: ২৭ ট্রাভেল এজেন্সির আয়কর ফাইল তলব ও বেশ কয়েকটি এজেন্সির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।আয়কর ফাঁকির অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেল (সিআইসি) তদন্ত করে আয়কর ফাঁকির ‘অভিনব’ তথ্য পেয়েছে।

বিমান পরিবহন সংস্থা, বিভিন্ন সেবা ও কমিশন হিসেবে যে ইনসেনটিভ পেয়েছে তা থেকে আয়কর ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে সিআইসি।

২৭ এজেন্সির আয়কর ফাঁকির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। জরিমানাসহ ফাঁকির টাকা পরিশোধে ইতোমধ্যে এজেন্সিগুলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর-এর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি, বিমান পরিবহন সংস্থা ও জিএসডি (গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম) থেকে পাওয়া ইনসেনটিভ ও অন্যান্য কমিশন থেকে অর্জিত আয় থেকে আয়কর গোপন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত সিআইসি ট্রাভেল এজেন্সির আয়কর ফাইল তদন্ত করে ২৭ ট্রাভেল এজেন্সির আয়কর ফাঁকির এই অভিনব কৌশল খুঁজে বের করে। এরপর এসব এজেন্সিকে জরিমানাসহ ফাঁকির অর্থ ফেরত দিতে চিঠি দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, ফাঁকির অর্থ দিতে অস্বীকার করায় আয়কর বিভাগ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। কয়েকটি এজেন্সি অর্থ ফেরত দেওয়ায় হিসাব খুলে দেওয়া হয়েছে। ১০-১২টি এজেন্সি অস্বীকার করায় তদের হিসাব জব্দ রয়েছে।

অপরদিকে, এনবিআর’র দাবিকৃত ‘আয়কর’ ফাঁকিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও আইনজীবীর (উপদেষ্টা) ভুলের কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছে ট্রাভেল এজেন্সি সমূহের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস বাংলাদেশ (অ্যাটাব)। সম্প্রতি অ্যাটাব-এর পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে এনবিআরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে সমস্যা সমাধানে অ্যাটাব নেতারা সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। অর্থমন্ত্রী বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভুল স্বীকার করে এনবিআরকে দেওয়া চিঠিতে অ্যাটাব উল্লেখ করেছে, ট্রাভেল এজেন্সির ইচ্ছাকৃত ভুল নয়। একই সঙ্গে আয়কর নির্ধারণের সময় ব্যাংক সুদসহ ৬০ শতাংশ ব্যয় হিসাবে দেখানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অভিযুক্ত এয়ার ট্রিপ ইন্টারন্যাশনাল, ভিক্টোরি ট্রাভেলস, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল কর্পোরেশন, আল গাজী ট্রাভেল ও সায়মন ওভারসিস ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ আয়কর ফাঁকি দেয়নি বলে জরিমানা দিতে অস্বীকার করেছে। ইনসেনটিভ পাওয়া অর্থ বিমান পরিবহন সংস্থার প্রচারণামূলক কাজে ব্যয় হয়েছে বলে তারা দাবি করে। তবে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজী হয়নি।

এসব এজেন্সি বলছে, বিমান পরিবহন সংস্থা ও জিএসডি কোম্পানিগুলো এজেন্সিকে টিকেট বিক্রির টার্গেট দেয়। এই টার্গেট ও অন্যান্য সেবার ওপর কমিশন হিসাবে ৭ শতাংশ ইনসেনটিভ দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে সাব এজেন্সি দেখিয়ে কমিশনের ওপর ১ শতাংশ ইনসেনটিভ দেওয়া হয়েছে। এ আয়কে করযোগ্য আয় দেখানো হচ্ছে।

এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি, ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট বিক্রি, হোটেল রুম ব্যবহার, গাড়ী ভাড়া, ভ্রমণ সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা থেকে সাধারণ এয়ারলাইন্স, জিডিএস কোম্পানিগুলো থেকে ইনসেনটিভ পেয়ে থাকে।

আয়কর আইন অনুযারী, ইনসেনটিভ বা কমিশন থেকে আয় করযোগ্য আয়। এ খাত থেকে আয়কর ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চলতি অর্থবছর ইনসেনটিভ বা বোনাস আয়ের ওপর ৩ শতাংশ করারোপ করেছে। বিমান পরিবহন সংস্থা ও জিএসডি কোম্পানিগুলো এখন থেকে ট্রাভেল এজেন্সিকে বিল পরিশোধের সময় এই কর কেটে রাখবে।

বাংলাদেশ পর্যটন এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে দেশে ২ হাজার ৫০০ ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। ২৭টি এজেন্সির আয়কর ফাইলে ফাঁকি পাওয়ায় বর্তমানে অন্য এজেন্সির ফাইল তদন্ত করছে সিআইসি।

অ্যাটাব সভাপতি এসএন মঞ্জুর মোরশেদ মাহবুব বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কর আইনজীবীদের কারণে এই ভুল হয়েছে। যে ইনসেনটিভ পাওয়া যায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে সেটা যাত্রীদের পেছনে ব্যয় করা হয়।

তিনি বলেন, এজেন্সিকে ৩৭.৫ শতাংশ কর্পোরেট কর দিতে হয়। এরমধ্যে জরিমানা যোগ হলে ৫০ শতাংশ কর দিতে হবে যা খুবই কষ্টসাধ্য। এ খাতকে বাঁচাতে এনবিআর-এর সহযোগিতা চান তিনি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.