বিদেশগামীদের টাকার বিনিময়ে ভুয়া করোনা নেগেটিভ সনদ দিতো ডা. সাবরিনা: ৩ দিনের রিমান্ডে

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে বহিষ্কৃত ডা. সাবরিনা আরিফের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ আদালতে পুলিশ চার দিনের রিমান্ড চাইলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।

এর আগে গতকাল দুপুরে তাকে (সাবরিনা) তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ কামশনার (ডিসি) কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর আজ সকালে চার দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

এদিকে রবিবার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত এক অফিস জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে সাবরিনাকে বহিষ্কার করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, বিদেশগামী যাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙকের টাকা নিয়ে ভুয়া করনো নেগেটিভ সনদ দিতেন এই ডাক্তার। একারণে বাংলাদেশ বহিবিশ্বে ভাবমুর্তি হারিয়েছে। বিদেশের সংগে বাংলাদেশের ফ্লাইট যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে। ৩ মাসে ডা. সাবরিনা সনদ বাণিজ্য করে ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারের কাছ থেকে।

ওই আদেশে বলা হয়, ডা. সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট ও অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারের অনুমতি ব্যতীত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকা এবং অর্থ আত্মসাৎ সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল), বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে জন্য ডা. সাবরিনাকে সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ১২ (১) বিধি অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

ডা. সাবরিনা চৌধুরী পেশায় একজন হৃদরোগ সার্জন। টেলিভিশনেও পরিচিত মুখ। টকশোতে স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনায় নিয়মিত অংশ নিতেন। দিতেন সুস্থ থাকার নানা টিপস। সবকিছু ছাড়িয়ে ভয়ঙ্কর এক প্রতারণার অভিযোগে এখন তিনি আলোচনায়। খলনায়ক তার স্বামী আরিফ চৌধুরী। যার চতুর্থ স্ত্রী হিসেবেই সাবরিনা পরিচিত। আরিফের দুই স্ত্রী থাকেন রাশিয়া ও লন্ডনে। আরেক স্ত্রী দেশেই থাকেন। স্ত্রীর অধিকার পাওয়ার জন্য স্বামীর পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছেন।

এসব বিষয়ে কম যান না সাবরিনাও। আরিফ চৌধুরী তাকে একদিন এক চিকিৎসকের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটানো অবস্থায় পেয়েছেন। পরে আরিফের মারধরের শিকার হন ওই চিকিৎসক। এ নিয়ে সাবরিনা শেরেবাংলানগর থানায় একটি জিডি করেছিলেন। এসব নিয়ে সেই সময় আলোচনার কমতি ছিল না। সম্প্রতি এই দম্পতি নতুন করে আলোচনায় এসেছেন।

জানা গেছে, জেকেজি হেলথ কেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা ২৭ হাজার করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই ১৫ হাজার ৪৬০টি মনগড়া ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছেন। বাকি ১১ হাজার ৫৪০টি রিপোর্ট দিয়েছে আইইডিসিআরের মাধ্যমে।

জেকেজির গুলশানের অফিস থেকে ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে এই দম্পতি হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৮ কোটি টাকা। করোনার রিপোর্ট জালিয়াতির কারণে সাবরিনা চৌধুরীর স্বামী আরিফ চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির তেজগাঁও ডিভিশন। তারা এখন কারাগারে। পুলিশি তদন্তে তাদের ভুয়া রিপোর্ট প্রদানের সত্যতাও মিলেছে। এমনকি জালিয়াতির কাজে সংশ্লিষ্টতা মিলেছে ডা. সাবরিনা চৌধুরীর।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.