বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে প্রায়ই বিলম্বিত হচ্ছে বিমান ফ্লাইট। সরকারি বিমান সার্ভিস ‘বিমান বাংলাদেশ’ থেকে শুরু করে বেসরকারি দুটি সংস্থা নভোএয়ার এবং ইউএস বাংলার ফ্লাইট অধিকাংশ সময়ে ১৫ মিনিট থেকে আধাঘণ্টা বিলম্বে যাত্রা করছে। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে জানা গেছে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, এমপির মতো ভিআইপিদের বিমানবন্দরে বিলম্বে আসা। রোববারও এক এমপির কারণে ২০ মিনিট ফ্লাইট বিলম্ব করে নভোএয়ার। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন সাধারণ যাত্রীরা। তারা অভিযোগ করেছেন, ভিআইপিরা না এলে বিমান ছাড়ার নজির নেই। মাত্র ২৫ মিনিটের ফ্লাইটের জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষায় থাকা খুবই কষ্টকর। তাছাড়া বিমানের যাত্রীসেবা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় বরিশাল বিমানবন্দর থেকে নভোএয়ারের ফ্লাইট যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে ১২টা ৫ মিনিটে। প্রায় ২০ মিনিট বিলম্বের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহান ৬৬ যাত্রী। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বরগুনার এমপি ধীরেন্দ্রনাথ সম্ভু বিলম্বে বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। তার জন্য অপেক্ষার কারণেই ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্ব হয়।
নভোএয়ারের একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, এমপি সম্ভুর মালামাল রাখতে সবাই ব্যস্ত ছিলেন। এটি যেন লোকাল বাস সার্ভিস। যাত্রীরা বলেন, সময় বাঁচাতেই বিমানে যাওয়া। কিন্তু ভিআইপিদের কারণে প্রতি সপ্তাহেই ফ্লাইট বিলম্ব হচ্ছে। আরেক যাত্রী অভিযোগ করেন, নভোএয়ারের এয়ারকন্ডিশন সিস্টেম অত্যন্ত দুর্বল। মান্দাতা আমলের বিমানের সেবার মানও খারাপ। রোববার বিমানটি অবতরণও করে ঝুঁকি নিয়ে। এ ব্যাপারে নভোএয়ারের বরিশাল অফিস ইনচার্জ নেওয়াজ মাহমুদ বলেন, ভিআইপ (এমপি সম্ভু) ছিলেন তাই ফ্লাইটি একটু বিলম্ব হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে বরিশালের যাত্রীরা সময়ের বিষয় বুঝতে চান না। ফলে একজনের জন্য ৬৬ জন দুর্ভোগের শিকার হন। যাত্রীরাও হৈচৈ করেন। এয়ারকন্ডিশনের ত্রুটির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, যেখান থেকে লাগেজ পাস করা হয় সেখানে ফাঁকা হওয়ায় এমনটা হচ্ছে। ২১ এপ্রিল ইউএস বাংলার ফ্লাইটে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বরিশাল থেকে ঢাকা যাত্রা করেন। ওই ফ্লাইটে থাকা একাধিক যাত্রী জানান, এরশাদের জন্য বিলম্বে বিমান ছাড়া হয়। এছাড়া মান্দাতা আমলের বিমান হওয়ায় তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ইউএস বাংলা বরিশাল অফিস ইনচার্জ রিয়াদ হোসেন বলেন, ফ্লাইট ৯০ ভাগই সঠিক সময় যাত্রা করে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের যাত্রার কারণে ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনা সঠিক নয়। অন্য কোনো কারণে এমনটি হতে পারে।
আরেক যাত্রী জানান, বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট আরও বেশি বিলম্ব করে। কয়েকজন এমপি ও মন্ত্রীর কারণে প্রায়ই এমনটি ঘটছে। মাত্র ২৫ মিনিটের যাত্রার জন্য আধাঘণ্টা বসে থাকা খুবই বিরক্তিকর।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হানিফ গাজী বলেন, নভোএয়ারের ফ্লাইট রোববার একটু বিলম্বে ছেড়েছে। নির্ধারিত ফ্লাইট ১১.৪৫ মিনিটের স্থলে ১২.৫ মিনিটে ছাড়া হয়েছে। এ বিলম্ব এমপি সম্ভুর জন্য কিনা সেটা তার জানা নেই। তবে এমনটি হতেই পারে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের জন্য ইউএস বাংলার ফ্লাইট ৯ মিনিট বিলম্ব হওয়ার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেন। বিমানের সেবার মান প্রসঙ্গে অবশ্য তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ ব্যাপারে বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, বিমান সার্ভিস একটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। মানুষ কেন টাকা দিয়ে সময় কিনে বসে থাকবে। এর দায় কোনোভাবেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না। তাদের অব্যবস্থাপনার জন্যই বিমান সার্ভিসের বেহাল দশা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, একজন ভিআইপির জন্য ফ্লাইট ছাড়বে না সেটা ভাবাই যায় না।
সূত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ