দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বে এরিয়ায় মালপত্র নামানোর সময় একটি উড়োজাহাজের স্পর্শকাতর স্থান ফেটে গিয়ে জ্বালানি তেল বেরিয়ে রানওয়ের একটা অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লেগে গেলে কয়েকটি উড়োজাহাজ পুড়ে যেতে পারত, বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
সিভিল এভিয়েশনের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী কর্মচারী জানান, উড়োজাহাজটির ফিরতি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সেটিকে মেরামতের জন্য হ্যাঙ্গারে নেওয়া হয়েছে। ফিরতি ফ্লাইটের যাত্রীদের নির্ধারিত হোটেলে রাখা হয়েছে। তাঁরা জানান, দুর্ঘটনার ফলে বে এরিয়ায় জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঢাকা-গোয়াংজু রুটে চলাচলকারী চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের একটি বোয়িং রানওয়ের বে এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। ফলে এটির ফিরতি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এখন এটির মেরামতের কাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে বিকল্প এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাবে তাহলে তারা সেটা করতে পারে।’
এ বিষয়ে জানার জন্য সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কেউ কেউ ঘটনার কথা স্বীকার করতে চাননি। কেউ কেউ বলেন, এটা তেমন কোনো ঘটনা নয়। উড়োজাহাজের লেজের দিকে সামান্য আঘাত লেগেছে। সহজেই ঠিক হয়ে যাবে।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের (সিএএবি) প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমকে কিছু বলতে পারব না। আমাকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। যা জানার পরিচালক টার্মিনালের কাছে জেনে নেবেন।’
এ ব্যাপারে পরিচালকের (টার্মিনাল) বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘স্যার মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে জরুরি সভা করছেন। এ মুহূর্তে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না।’ ফোনে যোগাযোগ করা হলে সিএএবির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্রিফিং করবেন পরিচালক টার্মিনাল। কিন্তু তিনি এখন মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে জরুরি সভায় আছেন। বিষয়টি জেনে পরে আপনাদের জানাব।’
সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের ৭৩৭ বোয়িং উড়োজাহাজ সকাল সোয়া ১১টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে; ১২৫ জন যাত্রী ছিল। যাত্রীদের নেমে যাওয়ার পর মালপত্র নামানোর সময় বিপত্তি ঘটে। উড়োজাহাজটির কার্গো হোল্ডে বেল্ট লাগিয়ে বেল্ট অপারেটর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বেল্ট ধীরে ধীরে ঘুরছিল বলে সুপারভাইজার এর গতি বাড়াতে গিয়ে অসাবধানতাবশত বেশি বাড়িয়ে ফেলেন। ফলে বেল্টটি এর ডান পাশে সরাসরি আঘাত করে। এতে উড়োজাহাজের জ্বালানি লাইন, ইলেকট্রিক পাইপ ও হাইড্রোলিক পাইপ ছিঁড়ে যায়।
বাংলাদেশ বিমানের একাধিক প্রকৌশলী জানান, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দুর্বলতার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। গিয়ার বদলানোর সময় বেল্টটি উড়োজাহাজের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনা রয়েছে। এ ঘটনা বিষয়টিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।
সূত্রঃ ইত্তেফাক