২০১৭ সাল পর্যন্ত চলবে সম্ভাব্যতা যাচাই

padma-airportসরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় প্রথম প্রকল্প হিসেবে ২০১০ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরবর্তীতে পিপিপি থেকে সরে এসে নিজস্ব অর্থায়ন ও দাতা সংস্থার সহায়তায় দেশের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক এ বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এখন চলছে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ, যা ২০১৭ সালে শেষ হবে।

জানা গেছে, প্রকল্পের স্থান নির্ধারণে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। যার আওতায় এখন আবার নতুন করে চারটি স্থান চিহ্নিত করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এ চার স্থান হচ্ছে— মাদারীপুরের শিবচরের চরজানাজাত, ঢাকার দোহারের চরবিলাসপুর, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের কেয়াইন ও লতব্দি এলাকা। তবে পদ্মা সেতু থেকে দূরত্ব কম থাকায় চরজানাজাতকে তালিকার প্রথমে রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সম্প্রতি জানান, পদ্মার ওপারে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে দেশের বৃহত্তম বিমানবন্দর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। চারটি স্থানের মধ্যে যেকোনো একটি স্থানকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত বছরের ১৯ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীর স্বাক্ষরিত ওই দরপত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসংবলিত আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের জন্য প্রাক্কলিত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৩৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়, দুটি ধাপে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে চারটি জায়গা থেকে যেকোনো একটি জায়গা নির্বাচন করা হবে এবং দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত স্থানের বিস্তারিত সমীক্ষা (ডিএফএস) সম্পাদিত হবে। এ সমীক্ষার মেয়াদ ২০১৭ সালের জুনে শেষ হবে।

চারটি স্থান নির্বাচনের বিষয়ে কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নিমিত্ত বেসামরিক পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার সঙ্গে উত্তম যোগাযোগ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্য সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনপূর্বক স্থান নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়। উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের লক্ষ্যে মোট ৯টি স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করে ঢাকা থেকে দূরত্ব, ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা, জমির পর্যাপ্ততা, আন্তর্জাতিক রুট, সড়ক, রেল ও নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের সম্ভাবনা, পুনর্বাসন, যাতায়াত খরচ ইত্যাদি বিবেচনা করে উপরোক্ত চারটি স্থান নির্বাচন করা হয়।’

প্রসঙ্গত, মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়াকালে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫০ হাজার কোটি টাকা। চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এটি নির্মাণ করতে আগ্রহ দেখায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রাথমিক নকশা অনুযায়ী এটি তৈরি করা হবে প্রায় ৬ হাজার একর জমি নিয়ে। নতুন বিমানবন্দরে ৯ হাজার ফুট করে মোট তিনটি রানওয়ে থাকবে। আধুনিক জাম্বো বিমান তথা এয়ারবাস ৩৮০ চলাচলে সক্ষম রানওয়ে দুটি এবং অবতরণের জন্য অন্য একটি রানওয়ে। এছাড়া সমান্তরাল ট্যাক্সিওয়ে ও অ্যাপ্রোন, তিন লাখ যাত্রী পরিবহনের সুবিধাসম্পন্ন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল কমপ্লেক্স, পর্যাপ্ত স্থানবিশিষ্ট ডিউটি ফ্রি শপ, পাঁচ তারকাবিশিষ্ট হোটেল, তিন তারকাবিশিষ্ট ট্রানজিট হোটেল, পর্যাপ্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার, আধুনিক ও সমন্বিত নিরাপত্তা সিস্টেম এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক থাকবে বিমানবন্দরটিতে। এছাড়া বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি স্যাটেলাইট সিটি তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.