এভিয়েশন নিউজ: মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে গত ৯ মাসে ২১০ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে বিমান। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই উড়োজাহাজ দুটি নিউইয়র্ক রুটে চালানোর কথা বলে মিসর থেকে ভাড়া নেয়া হয়। ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও মিথ্যাচার করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভাড়া নেয়া হলেও শুধু হজ মৌসুমে উড়োজাহাজ দুটি শতভাগ ব্যবহৃত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাকি সময় বসিয়ে রেখেই মাসে ২৪ কোটি টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। ৯ মাসে এয়ারক্রাফটের ভাড়া মেরামতসহ অন্যান্য খাতে এই ২১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা বিমানের কোনো কাজে আসবে না। বিমানের অসাধু কর্মকর্তারা মিসর থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ সিরিজের এয়ারক্রাফট দুটি ভাড়া নেয়ার সময় অনৈতিক উপায়ে আয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে চুক্তি সম্পাদন করে। চুক্তির সময় তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির কথা বিবেচনায় নেয়নি। ফলে বিমান উড়োজাহাজ দুটি চালাক বা না চালাক প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট মালিককে আড়াইশ’ ঘণ্টা হারে প্রায় ২৪ কোটি টাকা ভাড়া দিতেই হবে। চুক্তি বাতিলের ক্ষমতাও রাখা হয়নি। ফলে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত উড়োজাহাজ দুটি ভাড়ার দায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমানকেই বহন করতে হবে। এয়ারক্রাফট দুটি আগের অবস্থায় (ভাড়া নেয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল) এনে ফিরিয়ে দিতে হবে। বিমানের এই সিন্ডিকেট প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ওয়েট লিজে (এয়ারক্রাফট, ক্রু, মেনটেনেন্স, ইন্স্যুরেন্সসহ) উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার অনুমতি নেয়। কিন্তু পরে তারা তথ্য গোপন করে ড্রাই লিজে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে সরকারপ্রধানের সঙ্গে মিথ্যাচার করে বলে জানা গেছে।
বিমান পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিন জানান, বিমানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করে থাকে। নানা অজুহাতে এয়ারক্রাফট ভাড়া নেয়া বিমানের এ সিন্ডিকেটের কাজ। পরিচালনা পর্ষদের কাছে তারা এমনভাবে প্রস্তাব উপস্থাপন করে যা ফেরত পাঠানো সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, এয়ারক্রাফট ভাড়ার ক্ষেত্রে বিমানের সিন্ডিকেট এমনভাবে চুক্তি করেছিল তাতে উড়োজাহাজ দুটি ৫ বছরের আগে ফেরত দেয়ার বিধান ছিল না। বিষয়টি তিনি জানতে পেরে সেই চুক্তি পরিবর্তন করেন। এরপর সেটা ৫ বছরের পরিবর্তে ২ বছর করা হয়। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আহম্মেদ এই অবস্থার জন্য বিমানের সাবেক বিদেশী এমডি কেভিন জন স্টিলকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, কেভিনই এ দুটি জাহাজ ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু ভাড়া নেয়ার মধ্যে প্রক্রিয়াগত মারাÍক ভুল থাকায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জাহাজ দুটিকে নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি। যার কারণে বর্তমানে জাহাজ দুটি অলস পড়ে আছে।
জানা গেছে, হজ মৌসুমের দুই মাস এয়ারক্রাফট দুটি শতভাগ ব্যবহৃত হয়েছে। সে হিসাবে গত ৭ মাসে (হজের ২ মাস ছাড়া) জাহাজ দুটি বসিয়ে রেখে ১৬৮ কোটি টাকা স্রেফ পানিতে ফেলেছে বিমান। বিমানের মার্কেটিং বিভাগ বলছে, আগামী ৭ নভেম্বর ফিরতি হজ ফ্লাইট শেষে হয়ে গেলে আবার আগের মতো এয়ারক্রাফট দুটি বসিয়ে রেখে ফাও ভাড়া গুনতে হবে। অন্যথা বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজ বসিয়ে রেখে ভাড়া জাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। তাতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়বে বিমান। এ অবস্থায় দু’কূল হারানোর আশংকায় রয়েছে বিমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। বিমানের ফাইন্যান্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী এয়ারক্রাফট দুটি ৫ বছরের জন্য ভাড়া নিলেও ২ বছরের আগে ফেরত দেয়া যাবে না। ফেরত দিতে হলে বড় অংকের অর্থ জরিমানা দিতে হবে। আর যদি ২ বছর উড়োজাহাজ দুটি রেখে দিতে হয় তাহলে এ সময়ে শুধু ভাড়া বাবদ জাহাজ দুটির পেছনে বিমানের অহেতুক খরচ হবে ৫৭৬ কোটি টাকা। আর চুক্তি অনুযায়ী মেয়াদ শেষে এয়ারক্রাফট দুটির অবস্থা আগের পর্যায়ে ফেরত নিতে কমপক্ষে আরও ২শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। মারাত্মক আর্থিক সংকটে থাকা রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের জন্য ইজিপ্ট এয়ারলাইন্স থেকে ভাড়ায় আনা এই দুটি এয়ারক্রাফট এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালক (প্রকৌশল) উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান ইজিপ্ট থেকে ভাড়া আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ দুটি টেকনিক্যালি ত্র“টির কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, এই ত্র“টি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সহনীয়। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে বিমানের রুট অনুযায়ী উড়োজাহাজ বেশি থাকলেও শিগগিরই বিমান লন্ডন ও জেদ্দা রুটে ফ্লাইট বাড়াচ্ছে। এছাড়া টরেন্টো, সিডনি, গুয়াংজুসহ ৪-৫টি নতুন রুট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু এগুলো কখন খোলা হবে তা তিনি বলতে পারেননি। আর এ সময় পর্যন্ত বিমান ইজিপ্টকে অহেতুক মাসে ২৪ কোটি টাকা ভাড়া দিয়ে যাবে কেন এ প্রশ্নেরও তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে মারাত্মক তথ্য। অভিযোগ রয়েছে, বিমান ম্যানেজমেন্ট সবকিছু জেনেশুনে শুধু কমিশন বাণিজ্যের জন্য এই এয়ারক্রাফট দুটি ভাড়া নিয়েছিল। একদিকে ভাড়া নেয়ার সময় মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য, অপরদিকে মাসিক ভাড়ার টাকা থেকে আরেক দফা কমিশন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে সিন্ডিকেটের গড় আয় ১০ কোটি টাকার বেশি। এ টাকার মূল জোগানদাতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের হোতা ইজিপ্ট এয়ারলাইন্সের ভিপি হাসান ও বিমানের সাবেক এমডি কেভিন জন স্টিল। অভিযোগ, এমডি না থাকলেও বর্তমানে কেভিন স্টিল প্রতি মাসে ২-৩ কোটি টাকা মাসোয়ারা পাচ্ছে বিমানের বিভিন্ন সেক্টর থেকে। এর মধ্যে ইজিপ্ট থেকে আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া, জেদ্দা, জার্মান, ইউরোপ ও আমেরিকায় কার্গো ও যাত্রীর জিএসএ নিয়োগ থেকেও টাকা আসে। আর এই আন্তর্জাতিক চক্রের সহযোগী হিসেবে আছে বিমানের ৩ পরিচালক, ২ প্রভাবশালী বোর্ড মেম্বার, টেকনো ফাইন্যান্স কমিটির ৩ জন প্রভাবশালী সদস্য, অপারেশন ও ট্রেনিং বিভাগের দুজন প্রভাবশালী সদস্য। এরাই কৌশলে কমিশন বাণিজ্যের জন্য কোনো প্রয়োজন ছাড়াই বোয়িং ৭৭৭-২০০ এয়ারক্রাফট দুটি ভাড়া নিয়েছিল।
এদিকে হজ ফ্লাইট শেষ হয়ে গেলে যাতে এয়ারক্রাফট দুটি ফেরত পাঠাতে না হয় সেজন্য প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা লোকসানে ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা সরাসরি একটি ফ্লাইট বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে প্ল্যানিং বিভাগ। একইভাবে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে দুটি ফ্লাইট ও ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকার নতুন রুট খোলার পাঁয়তারা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগটি। মার্কেটিং বিভাগ বলছে, কোনো ধরনের বহর পরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ করে আগামী মৌসুমে যদি নতুন করে রুট খোলা ও ফ্লাইট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তবে বিমান আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়বে। তাদের ধারণা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মাসে বিমানকে শুধু এই খাতে লোকসান গুনতে হবে কমপক্ষে ২ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা ছাড়া ধুমধাম করে দুটি নতুন রুট চালু করেও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বিমান। এর মধ্যে ঢাকা-ইয়াংগুন রুট ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ মাসেই বন্ধ হচ্ছে বিশাল লোকসানি রুট ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট। জানা গেছে, ঢাকা-জার্মানি রুটে প্রতি ফ্লাইটে বিমানকে ৮৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছিল।
বর্তমানে বিমানের বহর পরিকল্পনায় সাড়ে ৩টা উড়োজাহাজের ব্যবহার নেই : বর্তমানে বিমানের বহরে ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ২টি এয়ারবাস, ২টি ৭৩৭-৮০০সহ ৮টি উড়োজাহাজ আছে। আগামী বছর আরও দুটি নতুন বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ যোগ হবে বহরে। আগামী ১ মাসের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুট চালুর জন্য আনা হচ্ছে দুটি টার্বো প্রপ উড়োজাহাজ। এগুলো দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুট ছাড়াও কলকাতা, রেঙ্গুন, ব্যাংককসহ বোয়িং ৭৩৭ এয়ারক্রাফটের রুটগুলোও পরিচালনা করা সম্ভব হবে। সব মিলিয়ে বর্তমান যে ফ্লাইট সিডিউল তৈরি করা হয়েছে তাতেও কমপক্ষে আড়াইটি এয়ারক্রাফটের কোনো ব্যবহার নেই। সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্টের (জার্মানি) মতো বড় একটি রুট। এতে আরও এয়ারক্রাফটের ব্যবহার কমে যাবে। ফ্রাঙ্কফুর্ট রুট বন্ধ করার নেপথ্যে ছিল প্রতি ফ্লাইটে ৮৫ লাখ টাকা লোকসান। মূলত ইজিপ্টের বোয়িং ৭৭৭-২০০ দুটির ব্যবহার দেখানোর জন্য ওই সময় কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ঢাকা-জার্মানি রুটটি খোলা হয়েছিল। বিমানের মার্কেটিং বিভাগ বলছে, হজের পর যদি ইজিপ্ট থেকে লিজ আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেয়া না হয় তাহলে কমপক্ষে সাড়ে ৩টি জাহাজের কোনো ব্যবহার থাকবে না। সেগুলো বসিয়ে রেখে ভাড়া দিতে হবে বিমানকে। উড়োজাহাজ দুটি ভাড়া নেয়ার সময়ও বলা হয়েছিল সেগুলো স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। অর্থাৎ কোনো এয়ারক্রাফট টেকনিক্যাল কিংবা ক্রুটির কারণে নষ্ট হলে ব্যবহার করা হবে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমানের বহরে বর্তমানে যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এয়ারক্রাফট আছে সেগুলো ব্র্যান্ডনিউ ও অত্যাধুনিক। এ ধরনের উড়োজাহাজের জন্য মাসে ২৫ কোটি টাকা ভাড়া দিয়ে কোনো স্ট্যান্ডবাই উড়োজাহাজের প্রয়োজন নেই। আন্তর্জাতিক সিডিউল অনুযায়ী একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজ দিনে ২ ঘণ্টা ব্রেক দিয়ে কমপক্ষে ২২ ঘণ্টা চালানো সম্ভব। কিন্তু ইজিপ্টের ভাড়া করা জাহাজ থাকায় বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ব্যবহার হচ্ছে গড়ে মাত্র ১৩ ঘণ্টা। এতে বিমানের লোকসান প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা। অপরদিকে বোয়িং ৭৩৭ এয়ারক্রাফট দিনে ১৩ ঘণ্টা ও এয়ারবাস দিয়ে ১১ ঘণ্টা ফ্লাইট চালানো সম্ভব। সেখানে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ এয়ারক্রাফট ৯ ঘণ্টা, বোয়িং ৭৩৭ কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা ব্যবহার করা হচ্ছে না। এর স্থলে আড়াইশ’ ঘণ্টা চুক্তির বাধ্যবাধকতা থাকায় ভাড়ায় আনা উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট চালাচ্ছে বিমান। এতে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে বিমানের। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি উড়োজাহাজকে সম্পূর্ণভাবে ফ্লাই করাতে না পারলে কোনোভাবেই লাভ করা সম্ভব নয়। অপরদিকে ৭৩৭ দিয়ে আগে জেদ্দা, রিয়াদ, কুয়েত ফ্লাইট চালানো হলেও এখন ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কাঠমান্ডু ছাড়া আর কোনো রুটে চালানো হচ্ছে না। এসব রুটে চলছে ইজিপ্টের ভাড়ার জাহাজ বোয়িং ৭৭৭-২০০। এতেও বিমানের লোকসান বাড়ছে।
মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভাড়ায় ২ এয়ারক্রাফট :
ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট চালুকরণের জন্য গত বছরের শুরুতে তৎকালীন বিমান এমডি কেভিন স্টিলের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন এজেন্সির (এফএএ) নিষেধাজ্ঞা থাকায় নিজস্ব উড়োজাহাজ থাকা সত্ত্বেও তারা ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট চালু করতে পারছেন না। রুট চালু করতে হলে ক্যাটাগরি-১ দেশ থেকে ওয়েট লিজ ভিত্তিতে অর্থাৎ এসিএমআইর (এয়ারক্রাফট, ক্রু, মেনটেনেন্স, ইন্স্যুরেন্স) মাধ্যমে ভাড়া নিতে হবে। তারপর ওই উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট চালাতে হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিমানের এই সিন্ডিকেট প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ওয়েট লিজে উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার অনুমতি নিয়ে পরবর্তীকালে তথ্য গোপন করে ড্রাই লিজে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়। এক্ষেত্রে বিমানের সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট ইজিপ্ট এয়ারলাইন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিপি হাসানের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুরো ভাড়া কার্যক্রমটি সম্পন্ন করে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা-নিউইয়র্ক রুট নয়, মূলত চক্রটির মূল টার্গেট ছিল উড়োজাহাজ লিজ বাণিজ্য। এতে তাদের বড় অংকের টাকা আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং হয়েছে।
জানা গেছে, ইজিপ্ট থেকে ওই দুটি এয়ারক্রাফট লিজ নিতে চক্রটি এর আগে অন্তত চার দফায় দরপত্র আহ্বান করেও চুক্তি করেনি। তিন দফা তারিখ চূড়ান্ত করেও নিউইয়র্ক রুট চালু করেনি। শেষ পর্যন্ত গত ফেব্র“য়ারি মাসে উড়োজাহাজ লিজ নিলেও গত ৯ মাস পর্যন্ত রুটটি চালু করতে পারেনি। জানা গেছে, এক্ষেত্রে একমাত্র বড় অংকের কমিশন বাণিজ্য ছাড়া এ প্রকল্পে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইজিপ্ট এয়ার থেকে নেয়া উড়োজাহাজ দিয়ে নিউইয়র্ক রুট চালুর অনুমতি দেবে না তারা। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি না পেয়ে বিমানের সিন্ডিকেট দিশেহারা হয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে (বেবিচক) ড্রাই লিজকে গোপনে ওয়েট লিজ করে দেয়ার জন্য চিঠি দেয়। রহস্যজনক কারণে বিষয়টি কিছুদূর এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি টের পাওয়ায় বেবিচক বিমানের ডাকে সাড়া দেয়নি।
লিজকৃত উড়োজাহাজ দুটি লক্কড়ঝক্কড় : ফ্লাইট চালাতে গিয়ে গত ৯ মাসে কমপক্ষে ২০ বারের বেশি কারিগরি ক্রটির কারণে উড়োজাহাজ দুটি দিয়ে ফ্লাইট চালানো সম্ভব হয়নি। এতে ফ্লাইটপ্রতি ৫০ লাখ টাকার বেশি লোকসান হয়েছিল বিমানের। এর মধ্যে কমপক্ষে দুবার জার্মানিতে গিয়ে ত্র“টিজনিত কারণে নষ্ট হয়ে পড়েছিল। এছাড়া উড়োজাহাজ দুটি ঢাকা আসার পর দেখা গেছে এর কনস্ট্রাকশন বোয়িং কোম্পানির অন্যান্য ৭৭৭-২০০ এর মতো নয়। এ কারণে বিমানের ট্রেনিংকৃত ক্রুদের পক্ষে এই উড়োজাহাজ পরিচালনায়ও নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এটি সারাতে বিমানের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ক্রুদেরও নানাভাবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। নাম প্রকাশে একজন পাইলট জানান, বিশেষজ্ঞ পাইলট ও কেবিন ক্রু ছাড়া এ ধরনের অপরিচিত উড়োজাহাজ চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, বিমান কর্তৃপক্ষ ও যারা ইন্সপেকশনে গিয়েছিলেন তারা কিভাবে জাহাজ দুটিকে রেসপন্সিভ করেছে তা রহস্যজনক।
– মুজিব মাসুদ