এভিয়েশন নিউজ: ২০০৭ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আবার চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট। বিমান বলছে, এক মাসের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট শুরু করতে পারবে সংস্থাটি।
গত ২৫ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে বিমানকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু করতে বলেন কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান। সে হিসেবে ২৫ অক্টোবরের মধ্যেই বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু করার কথা।
উল্লেখ্য, আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটের বাজার ক্রমেই বাড়ছে। বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো এ খাতে উল্লেখযোগ্য যাত্রী পরিবহন করছে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস যাত্রী পরিবহন করছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২০১৩ সালে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন হয় ৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯ জন। ২০১২ সালে সংখ্যাটি ছিল ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১০৮, ২০১১ সালে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০, ২০১০ সালে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৩৩ ও ২০০৯ সালে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬১৭। এসব যাত্রীর বেশির ভাগই পরিবহন হয় বেসরকারি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে। গত বছরের মার্চে বন্ধ থাকা অভ্যন্তরীণ রুট চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রাজশাহী ও সৈয়দপুরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ।
উড়োজাহাজ সংকট ও ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০০৭ সালের বিভিন্ন সময়ে অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটের মধ্যে চারটিই বন্ধ করে দেয় বিমান। বন্ধ করে দেয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা-যশোর রুটে সপ্তাহে পাঁচটি, ঢাকা-বরিশাল রুটে দুটি ও ঢাকা-রাজশাহী-সৈয়দপুর রুটে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট চালু ছিল। পরে ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুটের সংযোগ ফ্লাইট হিসেবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
বিমানের ফাইন্যান্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তারা ৬৮ শতাংশ কেভিন ফেক্টর ধরেই অপারেটিং খরচ নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ ৭২ আসনের একটি ফ্লাইটে ৪৮ জন যাত্রী হলেই বিমান লাভজনক হবে। কিন্তু সম্প্রতি অপারেশনে আসা ইউএসবাংলা এয়ারলাইনসের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা একই সিরিজের দুটি উড়োজাহাজ এনেছেন। তবে জাহাজগুলো বিমানের চেয়েও পুরনো। তিনি বলেন, একটি জাহাজের অপারেটিং খরচ তৈরি করতে হলে উড়োজাহাজের ভাড়া, মেনটেনেন্স রিজার্ভ, জ্বালানি তেল, মবিলাইজেশন, ক্রু ও স্পেয়ার্স পার্টসের খরচ ধরে তারপর নির্ধারণ করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, তার প্রতিটি এয়ারক্রাফটের অপারেশন কস্ট বর্তমানে প্রায় ১ লাখ মার্কিন ডলার। তারপরও তাদের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালিয়ে লাভের মুখ দেখতে কষ্ট হচ্ছে। সেখানে বিমানের ভাড়াসহ সব মিলিয়ে অপারেটিং খরচ পড়বে কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ থেকে ২ লাখ মার্কিন ডলার। সেখানে তারা কিভাবে লাভ করবে এটা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেন না। তবে লাভ করতে হলে বিমানকে অন্যান্য অপারেটরের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করতে হবে অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে।
তিনি বলেন, যেহেতু বিমানের আনা এয়ারক্রাফটগুলো তাদের চেয়ে নতুন, সেক্ষেত্রে যাত্রীরা কিছুদিন টেস্ট ফ্লাই করতে পারেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে এটা কোনোভাবেই লাভজনক হবে না। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, বিমান যখন গত ৭ মার্চ ঢাকা ফ্রাংকফুর্ট (জার্মান) রুটে অপারেশন শুরু করে, তখন তারা কেভিন ফেক্টর ধরেছিল ৬০ শতাংশ। কিন্তু ৮ মাস পর বিমানের সব ধরনের হিসাব-নিকাশ উল্টে যায়। দেখা গেছে, সব তথ্যই বোগাস। বর্তমানে ঢাকা জার্মান রুটে প্রতি ফ্লাইটে বিমানের লোকসান হচ্ছে ৮৫ লাখ টাকা। এ কারণে আজ থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিমানের এ রুটটি। তবে জার্মান রুট বন্ধ হয়ে গেলেও বিমান আবারও লোকসানে শুরু করেছে ঢাকা-লন্ডনের নতুন একটি ফ্লাইট।