এভিয়েশন নিউজ: চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০১৪ সালের আট মাসে ২৫৫ কেজি অবৈধ সোনার চালান ধরা পড়েছে। আটক হওয়া এই অবৈধ সোনার ৯০ শতাংশই এসেছে দুবাই থেকে আসা ফ্লাইটে। ফ্লাইট তালিকার শীর্ষে আছে বাংলাদেশ বিমানের দুবাই-চট্টগ্রাম ফ্লাইট। এরপর ফ্লাই দুবাই, এয়ার অ্যারাবিয়াসহ অন্য বিমানগুলো। কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও বিমানবন্দর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে সবচেয়ে বেশি সোনা আসার কারণ হিসেবে কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের অনেকগুলোই দুবাই বিমানবন্দর হয়ে আসে। আর দুবাই ফ্রি পোর্ট বিধায় সেখান থেকে সোনা ও সোনার বার কেনা বেশ সহজ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইতিহাসে ১০৭ কেজির সর্ববৃহৎ চালানটিও আসে বাংলাদেশ বিমানের দুবাই ফ্লাইটে। কাস্টমসের হাতে ধরা পড়ে ২০১৪ সালের মার্চে। আটকের সময় কর্তব্যরত ছিলেন কাস্টমস সহকারী কমিশনার পারভেজ জামান। তিনি বলেন, ‘দেশে সোনার অবৈধ চালান আসে মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে। দুবাই থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি ফ্লাইট থাকায় চোরাচালানিরা এই রুটকেই বেছে নিয়েছে।’ তবে বাংলাদেশ বিমানকে কেন চোরাচালানিরা বেছে নিচ্ছে তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমানবন্দরের প্রকৌশল ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কিছু কর্মচারী বাংলাদেশ বিমানের সোনা চোরাচালানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিমানের সিট কেটে ভেতরে ঢোকানো, টয়লেটের মধ্যে লুকিয়ে রাখা, যাত্রীদের শরীরের মধ্যে কৌশলে লুকিয়ে রাখা- এসব কাজ করে থাকে চক্রটি। তাদের সহযোগিতা ছাড়া কখনোই এই কাজ করা সম্ভব নয়। ফলে সহজেই চোরাচালানে এই চক্রটি বিমানকেই বেছে নেয়।’
শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের এই বক্তব্যের প্রমাণ মেলে বিমানবন্দরে আটক হওয়া সর্ববৃহৎ চালানে। সে সময় নিয়মিত তল্লাশির সময় বিমানের ভেতর একটি সিটের নিচে কালো ব্যাগে ভর্তি কয়েক প্যাকেট সোনার বার পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে আরো কয়েকটি সিটের নিচ থেকে একই ধরনের প্যাকেটসহ মোট ৯০৫টি সোনার বারের সন্ধান মেলে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে ৮০ কেজি সোনা ও সোনার বার আটক করে কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দা দল। এর বেশির ভাগ চালান ধরা পড়ে বাংলাদেশ বিমানে। আর ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসেই এই বিমানবন্দর দিয়ে মোট স্বর্ণালংকার ও সোনার বার আটক হয় ২৫৫ কেজি ৮৫ গ্রাম। প্রতিদিনই অবৈধ সোনা আটকের পরিমাণ বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এর আগে মাঝেমধ্যে সোনার চালান আটকের খবর মিলত। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে সোনা আটকের চিত্র পাল্টে যায়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো চালান আটকের ঘটনা ঘটে। সে বছর ৪৯ কেজির সোনার সর্ববৃহৎ চালান আটক করলে তোলপাড় শুরু হয়।
সে সময় দায়িত্ব পালনকারী ও সদ্য বদলি হওয়া সহকারী কমিশনার মশিউর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘এই বিমানবন্দর দিয়ে এর আগেও সোনার চালান এসেছে কিন্তু আমাদের সময়ে তদারকি বেশি ছিল ও চোরাচালানের কৌশলগুলো আমরা জেনে ফেলেছিলাম। ফলে সবাই ধরা পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘চোরাচালানিরা একটি নির্দিষ্ট কৌশল বেশি সময় ধরে অবলম্বন করে না। ফলে তাদের ধরতে আমাদের আরো বেশি কৌশলী ও সতর্ক হতে হয়েছে।’
জানা গেছে, মূলত কাস্টমসে নতুন ক্যাডার কর্মকর্তারা যোগদানের পর থেকেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সোনার চালান আটকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এই সফলতার হার দিন দিন বাড়ছে।