জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে বিদেশি সহায়তার প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই জাতির জঙ্গিবাদ দমনে কারও সহায়তা প্রয়োজন পড়বে না।
বৃহস্পতিবার (০৫ মে) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এরশাদ বলেন, এক বিদেশি এসে বলেছেন বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারে যদি প্রয়োজন হয় তারা সহায়তা করতে চান। আমি বলতে চাই; রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। নিজেরাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। জঙ্গিবাদ দমনেও একাই যথেষ্ট। কারও সহায়তার প্রয়োজন নেই।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কোনো বিদেশি কথা বললে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথার চেয়েও অনেক গুরুত্ব দেই! আর কোনো দেশে বিদেশিরা এমন গুরুত্ব পান না। আমাদের বিষয়টি রুচিকর নয়। আমাদের দেশ আমরা পরিচালন করবো। আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ।
‘খুন-হত্যা সব দেশেই হয়। পৃথিবীর কোন দেশে খুন হয় না? আমাদের দেশেও হচ্ছে, তবে এটি অস্বাভাবিক। আমরা নিজেরাই পারবো এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। আমরা কারও কাছে মাথানত করতে শিখিনি। কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই বাঙালির’।
কারও নাম উল্লেখ না করে এরশাদ বলেন, আমি বাংলার ছাত্র ছিলাম। মুক্তমনা বলে কিছু শুনিনি। মুক্তমনা মানুষ প্রথম শুনলাম।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কেন যে দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করা হলো, আমি বুঝি না! এমন নির্বাচন তো আমরা চাইনি। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারণে গ্রামে আর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ নেই। গ্রামে এখন শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি গ্রামের সেই পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
১৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাপার কাউন্সিল সফল করার অনুরোধ জানিয়ে এরশাদ বলেন, আমি আর বেশি দিন নেই। কাউন্সিল সফল করো এটা আমার শেষ চাওয়া। আমরা মানুষ খুন ও আগুনে পুড়ে মারার বিশ্বাসী নই। মানুষ আমাদের অনেক ভালোবাসে।
দীর্ঘদিন পর এদিন জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন বৈঠকে যোগ দেন রওশন এরশাদ। নিজের বক্তব্য শেষ করেই ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে চলে যেতে চান। রওশন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমার অন্য একটি প্রোগ্রাম রয়েছে তাই চলে যেতে হচ্ছে।
তখন এরশাদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, নিঃসঙ্গ অন্ধকারে জেগে আছি, ‘কোথায় ঊষার জ্যোতি কতদূর…’।
জবাবে রওশনও রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন, ‘আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর, কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান…’।
কবিতা আবৃত্তি শেষ করেই সোজা চলে যান রওশন।
তার এই উপস্থিতিকে ঊষার জ্যোতি হিসেবে মন্তব্য করেন এরশাদ। তিনি বলেন, অন্ধকারে ছিলাম তার উপস্থিতিতে আলো জ্বলে ওঠেনি?
নেতারা সমস্বরে জবাব দেন ‘জ্বি;।
রশাদ বলেন, আজ কোনো বিভেদ নেই। আমরা সবাই এক, হৃদয় এক, মন এক।
জাতীয় পার্টির কাউন্সিলের ফান্ড প্রসঙ্গ টেনে বলেন, নয় বছর ক্ষমতায় থাকাকালে কতজনকে কতভাবে সহায়তা করেছি। আজকে কাউন্সিলের জন্য ভিক্ষুকের মতো হাত পাততে হয়। লজ্জা করে।
এর আগে রওশন এরশাদ তার বক্তব্যে বলেন, পার্টি অফিসকে ঢেলে সাজাতে হবে। নেতাকর্মীরা যেন পার্টি অফিসকে নিজের বাড়ি মনে করতে পারে। গ্রামের নেতাকর্মীরা কিছুই পায় না। তারা অনেক কষ্টে দলকে ধরে রেখেছে। তারা যদি পার্টি অফিসকে নিজের বাড়ি মনে করতে পারে তাহলে অনেক প্রশান্তি পাবে।
রওশন বলেন, অনেকে জাতীয় পার্টি ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। অনেকে ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন। সবাইকে নিয়ে দলকে সংগঠিত করতে হবে। আমরা কারো জায়গা দখল করতে চাই না। আমরা আমাদের মতো করে স্থান করে নিতে চাই।
রওশনের পাশাপাশি রওশনপন্থি বলে পরিচিত, প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, ফকরুল ইমাম এমপি, সেলিম উদ্দিন এমপিসহ অনেককে দেখা গেছে বৈঠকে।