প্রবাসীদের ব্যক্তিগত নথি দূতাবাসের রাস্তায়

bdnews-pic-of-ny-CONSULATE-যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অনেকের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত পাসপোর্টের আবেদনপত্র নিউ ইয়র্কের কনস্যুলেট ভবনের সামনের রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।

কুইন্সের নর্দার্ন বুলভার্ডে এসব নথি পড়ে দেখে একাধিক প্রবাসী নিরাপত্তার শঙ্কা প্রকাশ করে ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করেছেন।

ঘটনাটিকে ‘অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি’ আখ্যায়িত করে এর পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অনেকের মতো নিউ ইয়র্ক প্রবাসী মো. নাসিরও বুলভার্ডের রাস্তায় দূতাবাসের নথি পড়ে থাকতে দেখেন।

তিনি বলেন, “এস্টোরিয়ায় যাওয়ার পথে দেখি ছবিসহ শত শত কাগজ বাতাসে উড়ছে। তুলে দেখি, এগুলো সব বাংলাদেশিদের পাসপোর্টের আবেদন। অনেকগুলোতে ডেলিভারি দেওয়ার স্বাক্ষরও আছে।

“এ ধরণের নথি ব্যবহার করে অনেক অপকর্মই সংঘটিত করতে পারবে দুর্বৃত্তরা। কারণ, এগুলোর মধ্যে প্রবাসীদের নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখসহ ছবি রয়েছে।”

নিউ ইয়র্কে হলুদ ট্যাক্সির চালক নাসির ‘গুরুত্ব বুঝতে পেরে’ বেশিরভাগ কাগজ তুলে নিয়ে একটি রেস্তোরাঁয় বসে নথিগুলোতে থাকা ব্যক্তিদের ফোন দিয়ে ঘটনা জানান।

যেসব নথি ‘দূতাবাসে সুরক্ষিত’ থাকার কথা, তা রাস্তায় পড়ে থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রবাসী। তাদের দাবি, এসব নথি ব্যবহার করে খুব সহজেই ভুয়া গ্রিনকার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ক্রেডিট কার্ড বানিয়ে প্রতারণা করা সম্ভব।

মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) জন্য আবেদন করেছিলে প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া। এমআরপি হাতে পাওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যে নিজের আবেদনপত্র রাস্তায় পড়ে থাকার খবর শুনে ‘শঙ্কিত’ হয়ে যান এই প্রবাসী।

“আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে রাস্তায় উড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কনস্যুলেট কী মেসেজ দিল? এসব তথ্য ব্যবহার করে আমাদেরকে বিপদে ফেললে সে দায় কে নেবে? এজন্যে দায়ীদের শাস্তি চাই।”

নাসিরের কাছ থেকে খবর পেয়ে ব্রংকস থেকে কুইন্সে ছুটে আসেন আরেক প্রবাসী ইকবাল ফারুক।

তিনি বলেন, “২৪ এপ্রিল এমআরপি ডেলিভারি নিয়েছি, আর ৬ দিন পরই সে আবেদন রাস্তায়? এটি মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি অফিসে এমন গুরুত্বপূর্ণ নথি সংরক্ষণের কী কোনো নিয়ম নেই? বিনষ্ট যদি করতেই হয়, তাহলে তা প্রকাশ্য রাস্তায় কেন?”

প্রবাসীদের আবেদনে স্যোশাল সিকিউরিটি নম্বর না থাকলেও, নথিতে থাকা তথ্য দিয়ে সহজেই নম্বর বানানো সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।

“এগুলো ব্যবহার করে অনেক অপকর্ম করতে পারবে দুর্বৃত্তরা। কারো কারো আবেদনে স্টেট আইডির কপি রয়েছে। এসব তথ্য দিয়ে সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বরও সংগ্রহ করা যায়। এর আগেও সংশ্লিষ্টদের সর্বনাশ করার ঘটনা অনেকবার ঘটেছে।”

রাস্তায় পড়ে থাকা এসব তথ্য এর মধ্যে দুর্বৃত্তদের হাতে পড়েছে কি না তা নিয়েও শঙ্কার কথা জানান তিনি।

ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক ও অনিচ্ছাকৃত’ আখ্যায়িত করে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে।

“পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। এরপর তা ডিসপোজ করার নিয়ম। কিন্তু এবার যা ঘটেছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না, এটা মারাত্মক ত্রুটি।

“এমন ভুল আর যাতে না হয় সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে,” বলেন তিনি।

অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে অনেক নথি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.