এভিয়েশন নিউজ: ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে দেশের একমাত্র রাস্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কতিপয় অদক্ষ ও অযোগ্য পাইলট এবং ক্রু দিয়ে ফ্লাইট পরিচালণা, চোরাচালানি চক্রে দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি এবং বিমান বন্দরের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এ আশংকা তীব্রতর করেছে। এসব কারণে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। এ পরিস্থিতিতে পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) ক্যাপ্টেন তোফায়ের আহমদের পাইলট লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটসহ সব ধরনের ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে অফলোডের সুপারিশও করেন সিভিল এভিয়েশনের নিযুক্ত বিদেশী ইন্সট্রাকটর ক্যাপ্টেন মারিও ডি বরোডা। রজস্ব বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদন, ভিভিআইপিসহ বিমানের অন্যান্য ফ্লাইটের নিরাপত্তা ত্র“টির একাধিক নজির, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে রাষ্ট্রীয় এই ক্যারিয়ারের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এনবিআর’র চোরাচালান সংক্রান্ত প্রতিবেদনে নিরাপত্তার বিষয় এসেছে। অসাধু পাইলটদের ত্র“টিপূর্ণ ট্রেনিং, যথাযথ প্রশিক্ষন ছাড়াই বিমান চালানো জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।
অনুসন্ধানে জানাগেছে বর্তমানে বিমানের ফ্লাইট অপারেশন, সিডিউলিং ও ট্রেনিং এই ৩টি বিভাগ সবচেয়ে ঝুঁকিপুর্ণ। এই তিনটি বিভাগে কর্মরত পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারাও অনেকে ঝুঁকিপুর্ণ। ইতোমধ্যে পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) পাইলট লাইসেন্স বাতিল করে তাকে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটসহ সব ধরনের ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে অফলোড করার সুপারিশ করেছে সিভিল এভিয়েশনের নিযুক্ত বিদেশী ইন্সট্রাকটর ক্যাপ্টেন মারিও ডি বরোডা। সিডিউলিং বিভাগের প্রধান ক্যাপ্টেন শহীদসহ বেশ কজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিমানের ফ্লাইট বেচাকনার অভিযোগ আছে। আন্তজাতিক চোরাচালান চক্রের সদস্য পলাশের সঙ্গে আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং করে বিমানের এই বিভাগ তাদের ক্রুদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত চোরাচালান করছে। ক্যাপ্টেন শহীদ চাকরীতে যোগাদানের পর ১৯৮৫ সালে এফ-২৫ এর টেকনিক্যাল কোর্সে উর্ত্তীর্ণ হতে পারেননি।
এই ঘটনায় তাকে চাকরী থেকে বহিস্কার করা হয়। পরে তিনি তদবির করে আবারো বিমানে যোগদান করেন। ১৯৯০ সালে তিনি বিএটিসি কোর্সে যোগাদান না করে বিমানকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করান। এই ঘটনায় তাকে অসন্তুষ্টি পত্র দেয়া হয়। পরবর্তীতে এই পরীক্ষার আবারো সিডিউল করা হয়। কিন্তু সেখানেও তিনি যোগদান করেননি। পরবর্তীতে তাকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহনে বাধ্য করা হলে তিনি পরীক্ষা দেন। কিন্তু পরীক্ষা খাতায় কিছু না লিখে শুন্য খাতা জমা দেন। ক্যাপ্টেন শহীদ একটি এটিপি উড়োজাহাজ রাজশাহী বিমান বন্দরে নিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান। তদন্তে দেখা গেছে তিনি কতৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অনুনমোদিতভাবে ওই বিমান দিয়ে একজন পাইলটকে ট্রেনিং দিচ্ছিল। এরফলে বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। তার দুর্বল বিমান পরিচালনার কারণে তাকে একাধিকবার শো-কজও করা হয়। তারপরও তিনি এখন বিমানের সিডিউলিং বিভাগের প্রধান। কারণ তিনিও শামীম ইস্কান্দার গ্র“পের ইলেভেন বাহিনীর সদস্য।
অপর দিকে ট্রেনিং বিভাগের একজন সদস্য আস্বীকৃত রাজাকার পরিবারের সদস্য। তার বাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ আছে। আর ডেপুটি চীফ অব ট্রেনিং শামীম নজরুলের বিরুদ্ধে রযেছে গাদাগাদা অভিযোগ। তিনিই এখন বিমানের অলিখিত গডফাদার। সাবেক ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার শামীম ইস্কান্দারের ইলেভেন বাহীনির মধ্যে শামীমের দায়িত্ব হচ্ছে বিমানের সবগুলো ব্যবসা, উড়োজাহাজ লীজ, পার্টস কেনাবেচার নিয়ন্ত্রন করা। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে শামীম বিমানের সব অদক্ষ, অযোগ্য ও ঝুঁকিপুর্ণ পাইলটদের নানা কৌশলে ট্রেনিংয়ে পাস করিয়ে নতুন নতুন উড়োজাহাজে তুলে দিচ্ছে। যার কারণে মাত্র ২ বছরের মাথায় বিমানের ব্র্যান্ড নিউ উড়োজাহাজগুলো এখন ঝুঁকিপুর্ণ পড়ে পড়েছে।
বিমানের এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহম্মেদ বিমানের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে সরাসরি কিছুই বলেননি। তিনি শামীম নজরুল ও ক্যাপ্টেন তোফায়েলের বিরুদ্ধে মারিও ডি বরোডা’র অভিযোগ হাতে পাননি বলে জানান। জনসংযোগ শাখার মাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেন, বিমানের কোন অসাদু কর্মবর্তা-কর্মচারীর অসাদু আচরণ ঢালাও ভাবে সকল কর্মচারীর উপর চাপানো সঠিক নয়। অসাদু কর্মচারী সব সময়ই সুযোগ সন্ধানী। যারা চোরাচালান ও অন্যান্য অসাদু কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে,গত ওআইসি সম্মেলনে যোগদাানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাইজেরিয়াগামী ফ্লাইট বিনা নোটিশে নির্ধারিত নিরাপত্তা কর্মীসহ ৩ জনের অনুপস্থিতি ছিলেন। ওই ফ্লাইটে নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিকিউরিটি টেগবিহীন ২০ কেজি আমের ঝুড়ি তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিন আগে চীন সফরের সময়ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত একটি কন্টেইনার বিমান থেকে গায়েব হয়ে যায়। একই ঘটনা ঘটেছিল প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ-ঢাকা ফ্লাইটেও। এ ফ্লাইটে ‘ভিভিআইপি’ লেখা দুটি স্যুটকেস এসেছিল। এতে নিরাপত্তা ট্যাগ ছিল না। গত বছরের ১২ নভেম্বর ফ্লাইটটি (বিজি-১০০৪) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত লাগেজ দুটির মালিক পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তা-তলাশি ছাড়া ভিভিআইপি ফ্লাইটে আমের ঝুড়ি, দুটি স্যুটকেস তুলে দেয়ার ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর আকাশ পথের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বেলারোস সফর শেষে ঢাকা ফেরার পথে রহস্যজনক কারণে ফাস্ট অফিসার শামীম নজরুলের ফ্লাইট (টেকঅপ) উড্ডয়নের ঘটনা ছিল খুবই উদ্বেগের বিষয়। এই ঘটনার কোন তদন্তও হয়নি। এসব কারণে বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া ঘুষের বিনিময়ে পাইলট টেনিং ও লাইসেন্স অর্জন, অবৈধভাবে টেনিং’র পর লাইসেন্স নেয়া ও রেগুলেটরি কমিশনের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে আকাশ পরিবহনের নিরাপত্তা ঝুঁকিকে আরো ভয়াবহ করে তুলেছে। চোরাচালানের কাজে ভাড়ায় খাটছে বিমানের অসাদু পাইলট-কেবিন ক্রু থেকে শুরু করে সব বিভাগের দুনীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। নিভিঘেœ বিমানে উঠছে একের পর এক চোরাচালানের পন্য। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, এধরনের ফ্লাইটের স্ক্যানিং ব্যবস্থাও খুবই দুর্বল। এই অবস্থায় স্বর্ণ কিংবা অন্যান্য চোরাচালান পন্যের সঙ্গে যে কেউ নাশকতার জন্য বোমা অথবা বড় ধরনের এক্সপ্লোসিভ নিয়ে ফ্লাইটে উঠলেও কেউ বুঝতে পারবে না।
বেবিচক সূত্রে জানাগেছে, বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) ক্যাপ্টেন তোফায়েল আহম্মেদের ফ্লাইট পরিচালণা মারাত্বক ঝুঁকিপুর্ণ। পাইলট ট্রেনিং মনিটরিং’এ জড়িত বেবিচক নিযুক্ত বিদেশী ইনসট্রাকটর মারিও ডি বরড়া সম্প্রতি একটি মেইল বার্তায় প্রসঙ্গটি উলেখ করেন। গত ১৬ নভেম্বর সিভিল এভিয়েশেনের পরিচালক ফ্লাইট সেফটি গ্র“প ক্যাপ্টেন নাজমুল আনামকে তিনি এই বার্তা পাঠান। এতে ফ্লাইট সেফটি সংক্রান্ত ১৫টি মারাত্বক তথ্য তুলে ধরেন। মারিও অবিলম্বে ক্যাপ্টেন তোফায়েলের পাইলট লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেন। একই সঙ্গে তিনি ক্যাপ্টেন তোফায়েলকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রাস্ট্রীয় ভিভিআইপি’র কোন ফ্লাইট না দেয়ারও সুপারিশ করেন। মেইল বার্তায় তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক ট্রেনিংয়ে ক্যাপ্টেন তোফায়েল সব কিছুতে ফেল করেন। কিন্তু বিমানের ডেপুটি চীফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল অতিরিক্ত সময় দিয়ে ক্যাপ্টেন তোফায়েলকে জোর করে পাস করাতে সহায়তা করান। যে কোন এয়ারলাইন্সের জন্য এটি ভয়ঙ্কর ও মারাত্বক ঝুকিপুর্ণ।
পরিচালক নাজমুল আনাম এই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, চিঠিটি খুবই সম্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীসহ রাস্ট্রীয় ভিভিআইপিদের ফ্লাইট পরিচালণার বিষয়েও বেশ কিছু সুপারিশ আছে। নাজমুল আনাম জানান, তিনি বিমানের ডিএফও ক্যাপ্টেন তোফায়েল আহমেদের ফ্লাইট পরিচালণার বিষয়ে মারিও‘র সুপারিশ শিগগিরই বিমান ম্যানেজমেন্টকে জানাবেন । একই সঙ্গে ক্যাপ্টেন তোফায়েলের পাইলট লাইসেন্স থাকবে কি থাকবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সিভিল এভিয়েশনের একজন ইন্সট্রাকটরকে দিয়ে পরীক্ষা নেবেন। জানা গেছে, ফ্লাইট ম্যানুয়েলের নিয়ম কানুন না মেনেই ক্যাপ্টেন তোফায়েল গত ১৪ নভেম্বর ৩শ যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়া-ঢাকা রুটের একটি বিমান শাহজালাল র. আন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করিয়েছিলেন। টেক্সিওয়ে (হোটেল সাইড) বন্ধ থাকার পরও তিনি ৮৯ নটিক্যাল মাইল বেগে ফ্লাইটটি ওই ট্যাক্সিওয়েতে ঢুকিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন জামান চিৎকার করে গতিরোধ করান। এধরনের যোগ্যতা সম্পন্ন একজন বিমানের চালকের আসনে থাকলে সেই এয়ার ক্রাফট কতটা নিরাপদ থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।
সিভিল এভিয়েশনের এফআই (ফ্লাইট ইন্সফেকশন) শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাম না করার শর্তে বলেন, বিমানের পাইলটদের প্রধান হল ডিএফও ক্যাপ্টেন তোফায়েল। তার ফ্লাইট অপারেশন যদি ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে থাকে তাহলে তিনি কিভাবে অন্য পাইলটদের পরিচালণা করবেন? তিনি অবিলম্বে তোফায়েলকে বিমানের ডিএফও থেকে সরিয়ে তার লাইসেন্স নতুন করে পরীক্ষার দাবি জানান। একই সঙ্গে ২০১৩ সালে ফেল করার পরও ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল কেন তাকে অতিরিক্ত সময় দিয়ে পাস করাতে সহায়তা করলো তা তদন্ত করার দাবি জানান। তার মতে এই তদন্ত করলে বিমানের ট্রেনিং শাখায় পাইলটদের ট্রেনিয়ে কিভাবে শত শত কোটি টাকার আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং হয়েছে তা বেরিয়ে আসবে।
বেবিচকের অপর এক কর্মকর্তা জানান, সিভিল এভিয়েশন ও আইকাও‘র কাছে বিমানের ট্রেনিং শাখার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জমা আছে। এগুলোর মধ্যে অর্থের বিনিময়ে পাইলট-ফাস্ট অফিসারকে ট্রেনিংয়ে পাঠানো, সিনিয়রিটি লঙ্ঘন করা, পছন্দের প্রার্থী না হলে তাকে ট্রেনিংয়ে ফেল করানোর বিষয়ও আছে। এছাড়া একাধিকবার ফেল করা ও দুর্ঘটনা ঘটানো পাইলট ও ফাস্ট অফিসারকে অর্থের বিনিময়ে পাশ করানো, নারী কেলেংকারী, ১৮ ক্যাডেট পাইলটকে ৪ বছরেও ট্রেনিং না করিয়ে নতুন করে ১৬ ফাস্ট অফিসার নিয়োগ দেয়ার ঘটনা অন্যতম। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করে অর্থের বিনিময়ে পাইলট নিয়োগ, বিভিন্ন বিভাগের ডেপুটি চীফদের দিয়ে ফাস্ট অফিসার নিয়োগের যাচাই বাছাই কমিটি গঠন অভিযোগগুলোর অন্যতম।
অনুমোদন ছাড়াই পাইলট ট্রেনিং
ম্যানজমেন্টের অনুমোদন ছাড়াই গোপনে বাংলাদেশ বিমানের ডেপুটি চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল লন্ডন থেকে এটিপিএল (এয়ারলাইন্স ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স) ট্রেনিং সম্পন্ন করেছে। অনুমোদন ছাড়াই আবার লাইসেন্স পেতে বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে আবেদনও করেন। চীফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন ইলিয়াস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই আবেদন জানানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, টেনিং শাখার শীর্ষ পদে থাকায় এই দুই কর্মকর্তার যোগসাজসে গোপনে এধরনের ট্রেনিং করায় বিমানের কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা গেছে। অপর দিকে ট্রেনিং শাখার খোদ ডেপুটি প্রধানের এধরনের অপকর্মের খরবে আইকাও (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন) বিষ্ময় প্রকাশ করে বিমানের ট্রেনিং শাখাকে ব্লাক লিস্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন ইলিয়াস টেলিফোনে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। ক্যাপ্টেন শামীম কার নির্দেশে ট্রেনিং করেছে এবং এটিপিএল লাইসেন্স দিতে আপনি কার নির্দেশে সিভিল এভিয়েশনকে চিঠি দিলেন এ প্রসঙ্গে তিনি কোন তথ্য দিতে পারবেন না বলেও জানান। তবে শামীমের লাইসেন্সের বিষয়ে তিনি শামীমকেই জিজ্ঞাস করার কথা বলেন। ক্যাপ্টেন শামীমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ক্ষুব্দ হয়ে টেলিফোন রেখে দেন। তার বিরুদ্ধে কিছু লিখেও কোন লাভ হবে না বলেও তিনি দ্বম্ভের সঙ্গে জানান।
বেবিচক কতৃপক্ষ ক্যাপ্টেন শামীম নজরুলের দেয়া আবেদন খারিজ করে উল্টো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিমান কতৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের এফআই (ফ্লাইট ইন্সফেকশন) বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আন্তজাতিক সিভিল এভিয়েশন আইন অনুযায়ী কতৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই লাইসেন্স দুরের কথা কোন পাইলটকে এধরনের ট্রেনিংয়ে যাওয়ারও বিধান নেই। বিমানের মতো রাস্ট্রীয় পতাকাবাহী একটি প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার এধরনের ট্রেনিং নেয়া এবং লাইসেন্স পেতে রেগুলেটরী কমিশনের কাছে আবেদন করা গুরুতর অপরাধ। এধরনের অভিযোগ প্রমানিত হলে ক্যাপ্টেন শামীমের ফাস্ট অফিসারের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবার বিধান রয়েছে।
ভিভিআইপি ফ্লাইটে নিরাপত্তা ক্রুটির নজির:
বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটের বিরাজমান নিরাপত্তা ভিভিআইপিদের আকাশপথের যাতায়াত নিরাপদ রাখতে পারবে কিনা তা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে জঙ্গিদের নিশানায় রয়েছেন অনেক ভিভিআইপি। কাজেই তাদের বহনকারী ফ্লাইটের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন। গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, মালামাল বহনকারী ফ্লাইটেই কেবল পচনশীল দ্রব্য বহন করে থাকে। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া খোদ প্রধানমন্ত্রীর নাইজেরিয়াগামী ফ্লাইটে নিরাপত্তা টেগবিহীন ২০ কেজি আম তুলে দেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া যেখানে প্রধানমন্ত্রী ফ্লাইট পরিচালণা করার কথা সিনিয়র পাইলটদের সেখানে সামান্য ফাস্ট অফিসার শামীম নজরুল কিভাবে পাইলটের আসনে বসেন তাও রহস্যজনক। এরপরও কিভাবে ওই কর্মকর্তাকে বিমানের এতবড় পদে (ডেপুটি চীফ অব ট্রেনিং) বসানো হল তা নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানের একজন রাষ্ট্রপতির ফ্লাইটে আমের ঝুঁড়ি তুলে দেওয়া হয়েছিল। আকাশেই সেই আমের ঝুঁড়ির ভেতর থাকা বোমা বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন।
এনবিআর’র তদন্ত রিপোর্ট:
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও আকাশ পরিবহন ব্যবস্থাকে মারাত্বক ঝুঁকিপুর্ণ বলে উলেখ করেছে। বিমান থেকে ১২৪ কেজি স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খানের নেতৃত্বে কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ইতিহাসে চাঞ্চল্যকর এই স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় সংঘবদ্ধ অপরাধসহ নিরাপত্তা ঝুঁকি বিদ্যমান। এসব অপরাধীর সঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় অন্য কোনো অপরাধের সম্পৃক্ততা থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। চোরাচালান সিন্ডিকেটের কারণে গোটা আকাশ পথই এখন বড় ধরনের নিরাপত্তার হুমকীতে আছে । প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব অপরাধী বা সন্ত্রাসী চক্র বিমানের কর্মী ব্যবহার করে সহজেই যে কোনো নাশকতামূলক ঘটনা ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারন যাত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীসহ ভিভিআইপি মুভমেন্টের নিরাপত্তা মারাত্মক বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন শিমুল জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৩টি বড় স্বর্ণের চোরাচালান বিমানের ফ্লাইটে হয়েছে। বিমান কর্মীদের সহায়তা ছাড়া এত বড় চোরাচালান সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এখনই কঠোর না হলে এসব চোরাচালানীদের মাধ্যমে যে কোন সময় বড় ধরনের নাশকতাও হতে পারে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলে ও স্থলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জীবন সব সময় ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটের বিরাজমান নিরাপত্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাশপথ নিরাপদ রাখতে পারবে কিনা তা সন্দেহ রয়েছে। জঙ্গিদের নিশানায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে হত্যার জন্যে যেখানে ২০ থেকে ২৫ বার চেষ্টা করা হয়, সেখানে বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটের নিরাপত্তা শিথিলের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় রয়েছে দেশে-বিদেশে। সুযোগ পেলেই তারা কাজে লাগাতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।
গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, মালামাল বহনকারী ফ্লাইটই কেবল পচনশীল দ্রব্য বহন করে থাকে। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নাইজেরিয়াগামী ফ্লাইটে নিরাপত্তা টেগবিহীন ২০ কেজি আম তুলে দেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া যেখানে প্রধানমন্ত্রী ফ্লাইট পরিচালণা করার কথা সিনিয়র পাইলটদের সেখানে সামান্য একজন ফাস্ট অফিসার কিভাবে পাইলটের আসনে বসে ফ্লাইটটি উড্ডয়ন করাতে পারলো তাও রহস্যজনক। এরপরও কিভাবে ওই কর্মকর্তাকে বিমানের এতবড় পদে বসানো হল তাও রহস্যজনক। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানের একজন রাষ্ট্রপতির ফ্লাইটে আমের ঝুঁড়ি তুলে দেওয়া হয়েছিল। আকাশেই সেই আমের ঝুঁড়ির ভেতর থাকা বোমা বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য অপেক্ষমান রাখা এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ এক বিমান থেকে একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। এই বিমানটিতে (বোয়িং-৭৪৬) করেই জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদির। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে শেষ মুহূর্তে হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এটির পরিবর্তে জাম্বো জেট বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রে যান মোদি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের দুই বছর পর বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। যা বিদেশের একটি পত্রিকাতেও সম্প্রতি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পায়। ওই কর্মকর্তা জানান, বিদেশী একটি গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামীরা দাবী আদায়ে বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা নিয়েছিল। তাদের সাথে এ পরিকল্পনায় ছিল জঙ্গি সদস্যরাও। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারে ভারত সরকার। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ঢাকা এবং কলকাতা বিমান কর্তৃপক্ষকে জরুরি বার্তায় ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে। ওই সময়ে কলকাতা পুলিশ সৌদী আরবের ১১ নাগরিককে গ্রেফতার করে। তারা সবাই বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, বিমানের ভিভিআইপি ও সাধারণ ফ্লাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা। যে কারণে ভিভিআইপি ফ্লাইটের নিরাপত্তা কর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা জরুরি।