বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

759c481a95c3843aa1586b88480fb8ef-Pic-5প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা মেধার বিনিয়োগ ঘটিয়ে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন সর্বত্র। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি অব এনএসইউ। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৩০ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সিডনিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই সংগঠনের জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বার্ষিক নৈশভোজ। শহরের ওয়েন্ট অর্থভিল সাবারবের রেডগাম সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছিল এই অনুষ্ঠানটির।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ ও বনভোজনে সিডনিতে বসবাসকারী প্রায় সকল প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক, তাদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবেরা যোগ দেন। তাঁদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। কর্মব্যস্ততার অবসরে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের এ মিলনমেলা সকলকে অফুরন্ত আনন্দ এনে দিয়েছিল। এদিন তারা মেতেছিলেন উৎসবের আমেজে। আর ছিল নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনকে আরও দৃঢ়তর করার। গল্প-আড্ডাতে মুহূর্তেই মুখরিত হয়ে উঠেছিল প্রাণের মিলনমেলায়। সবার সহযোগিতায় এই মিলনমেলা আক্ষরিক অর্থেই পরিণত হয়েছিল প্রবাসের মাটিতে এক টুকরো বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, নিউ সাউথ ওয়েলসে বসবাসকারী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের প্রায় প্রত্যেকেই বিভিন্নভাবে দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন এই সুদূর প্রবাসে থেকেও। আনুমানিক প্রায় চার শ জন বাংলাদেশি চিকিৎসক বসবাস করছেন নিউ সাউথ ওয়েলস এ। সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ২৫০ জনেরও বেশি।

সংগঠনের কার্যকরী পরিষদের কর্মকর্তারাসংগঠনের সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ডা. সাব্বির সিদ্দিক শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন। নৈশভোজের পর শুরু হয় মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উপস্থাপনা করেন ডা. সিমিন শামিম ও ডা. ফাহাদ আল ইসলাম।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে সাজানো হয়েছিল। প্রথম পর্বে ছিল অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব শিল্পীদের নাচ ও গান। দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপার একক সংগীতানুষ্ঠান। প্রবাসের কর্মব্যস্ততায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নেচেগেয়ে সংগীতানুষ্ঠানটি উপভোগ করেন কয়েক শ সিডনিপ্রবাসী বাংলাদেশি। অনুষ্ঠানে কনক চাঁপার স্বামী সুরকার ও গীতিকার মইনুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন। কনক চাঁপার পরিবেশনার আগে ডা. সাব্বির সিদ্দিক তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন উপস্থিত দর্শকদের কাছে।
এ ছাড়া সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি ডা. রফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ডা. রশিদ আহমেদ। অনুষ্ঠান শেষে অতিথি শিল্পীদের হাতে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা পুরস্কার দেওয়া হয়।
ডা. রফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, নদী ভাঙন, অগ্নিকাণ্ড ও ভূমিধসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে মানুষকে বেঁচে থাকার লড়াই করতে হয়। বিভিন্ন সময়ে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ঢাকা আহসানিয়া মিশনের উদ্যোগে নির্মীয়মাণ ক্যানসার হাসপাতাল (আহসানিয়া মিশন ক্যানসার ও জেনারেল হাসপাতাল) এবং পাঁচ বছর আগে আইলা বিধ্বস্ত জনপদসহ সাম্প্রতিক রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পঙ্গু মানুষের সাহায্যার্থে সিআরপিকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস। সর্বশেষ নেপালের শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে সংগঠনটি ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করে।
শিল্পী কনক চাঁপার সঙ্গে কয়েকজন অতিথিডা. রশিদ আহমেদ বলেন, প্রবাসে পেশাগত নানা ব্যস্ততা থাকলেও দেশের জন্য কিছু করার মানসিক তাগিদ থেকে আমরা প্রতি বছর বিভিন্ন আয়োজন করে থাকি। বার্ষিক নৈশভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বার্ষিক সাধারণ সভা, সায়েন্টিফিক মিটিং ও বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করা হয়। বার্ষিক সাধারণ সভায় নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা আমরা পরস্পরের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে থাকি। এতে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়ে সহায়ক হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার্থে ও অভিবাসন ভিসা নিয়ে অনেক চিকিৎসক অস্ট্রেলিয়া আসছেন। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা একে অপরকে পরামর্শ সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি। বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসকেরা অস্ট্রেলিয়া সরকার অনুমোদিত মেডিকেল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) হিসেবে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারেন। আত্মীয়স্বজন ছেড়ে এসে প্রবাসের ব্যয়বহুল জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকরি পাশাপাশি উচ্চহারের মেডিকেল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফি সংগ্রহের জন্য অনেকে দিশেহারা হয়ে যান। তাদের জন্য এ প্রতিষ্ঠান থেকে সুদহীন ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সংগঠনের কয়েকজন কর্মকর্তাসংগঠনটির কার্যকরী কমিটির অন্যান্যরা হলেন সহসভাপতি ডা. মতিউর রহমান, ডা. শফিকুর রহমান ও ডা. শায়লা ইসলাম। যুগ্ম সম্পাদক ডা. মইনুল ইসলাম ও ডা. কাজী শাহরিয়ার, কোষাধ্যক্ষ ডা. জেসমিন শফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শামসুল আলম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা. খালেদুর রহমান, শিক্ষা সম্পাদক ডা. নাজমুন নাহার। কার্যকরী সদস্য ডা. জেসি চৌধুরী, ডা. আয়াজ চৌধুরী, ডা. শরীফ উল্লাহ, ডা. রেজা আলী, ডা. আমীন মুতাসিম, ডা. ফাইজুর রেজা, ডা. কামাল আহমেদ, ডা. জান্নাতুল নাইম, ডা. মামুন চৌধুরী, ডা. মিরজাহান মিয়া, ডা. মেহেদী ফারহান ও ডা. জাকির হোসেইন পারভেজ। সহযোগী সদস্য ডা. নুরুল ইসলাম, ডা. ইফতেকার জোহা ও ডা. শফিকুল বারী চৌধুরী।
উল্লেখ্য, শিল্পী কনক চাঁপা অস্ট্রেলিয়ায় আরও কয়েক স্থানে একক সংগীত পরিবেশন করবেন। ইতিমধ্যে ১ মে রোববার নিউক্যাসল বাংলাদেশি কমিউনিটি ইনক (এনবিসি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সংগীত পরিবেশন করেছেন। আগামী ৭ মে শনিবার বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া ও ৮ মে রোববার সুর-ছন্দ, মেলবোর্ন আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সংগীত করবেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.