এভিয়েশন নিউজ: আকাশপথে রিজিওনাল বা আঞ্চলিক বাজারকে লক্ষ্য রেখেই কার্যক্রমে আসে বেসরকারি এয়ারলাইনস নভোএয়ার। গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পায় উড়োজাহাজ সংস্থাটি। এ উদ্দেশ্যে গত জুনে বহরে একটি উড়োজাহাজও যুক্ত করে তারা। তবে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ না মেলায় এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফ্লাইট চালু করতে পারেনি নভোএয়ার। ফলে অব্যবহূতই পড়ে থাকছে অর্ধেকের বেশি আসন সক্ষমতা।
জানা গেছে, ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয় নভোএয়ার। সে কারণে ন্যারো বডির (ছোট আকৃতির) এমব্রেয়ার ই-১৪৫ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করে এয়ারলাইনসটি।
তাদের পরিকল্পনা ছিল, প্রথমে কলকাতা, ইয়াঙ্গুন ও কাঠমান্ডুর মতো ছোট রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে অভিজ্ঞতা অর্জন। পরবর্তীতে এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওয়াইড বডি (বড় আকারের) উড়োজাহাজ যুক্ত করে বড় রুটগুলোয় কার্যক্রম শুরু করা। তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে কাঙ্ক্ষিত ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ না পাওয়ায় থেমে আছে পুরো প্রক্রিয়া।
এ প্রসঙ্গে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে কলকাতা ও ইয়াঙ্গুনে ফ্লাইট পরিচালনা করে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং পরবর্তীতে কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক বা মধ্যপ্রাচ্যের বড় রুটগুলোয় ফ্লাইট পরিচালনা করা। কিন্তু কলকাতা রুটে আমরা কোনো ফ্রিকোয়েন্সিই বরাদ্দ পাইনি। আর ইয়াঙ্গুন রুটে সপ্তাহে মাত্র একটি ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে; যা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক রুটে কাঙ্ক্ষিত ফ্রিকোয়েন্সি না পাওয়ায় নভোএয়ারের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা হুমকিতে পড়ে গেছে।’
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক রুট চালু করতে না পারায় তিনটি উড়োজাহাজ দিয়েই অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ বেশি হওয়ায় এ মুহূর্তে আসন সক্ষমতার ৬০ শতাংশই অব্যবহূত থাকছে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক চারটি রুটের জন্য ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে নভোএয়ারকে। এর মধ্যে ইয়াঙ্গুনে সপ্তাহে একটি, কুয়ালালামপুরে সপ্তাহে চারটি ও ব্যাংককে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে এয়ারলাইনসটি। এছাড়া কাঠমান্ডুতে সপ্তাহে প্রায় ৮০০ যাত্রী পরিবহনের অনুমতি রয়েছে।
কুয়ালালামপুর ও ব্যাংকক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা প্রসঙ্গে এম মফিজুর রহমান বলেন, এসব রুটে যে এয়ারলাইনসগুলো বর্তমানে কার্যক্রম চালাচ্ছে, তারা ওয়াইড বডি উড়োজাহাজ ব্যবহার করছে। সে কারণে প্রতিযোগিতায় নামতে হলে নভোএয়ারকেও ওয়াইড বডি উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করতে হবে। আর এ ধরনের উড়োজাহাজ ক্রয়ের মতো আর্থিক অবস্থা এ মুহূর্তে নভোএয়ারের নেই।
প্রসঙ্গত, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও জিএমজি এয়ারলাইনসের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটের মূল্যবান ৮১টি ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে সাপ্তাহিক মোট ৬৪টি ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সির ২১টিই দখল করে রেখেছে জিএমজি। ফলে কার্যক্রমে থাকা অন্যান্য দেশী এয়ারলাইনস আবেদন করেও ভারত রুটের ফ্রিকোয়েন্সির অনুমতি পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের পরিচালক উইং কমান্ডার এসএম নাজমুল আনাম জানান, চাহিদা অনুযায়ী নভোএয়ারকে কয়েকটি রুটের ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর ভারত রুটে অতিরিক্ত ফ্রিকোয়েন্সি না থাকায় তাদের দেয়া সম্ভব হয়নি। জিএমজি এয়ারলাইনসের অনুকূলে বরাদ্দ ফ্রিকোয়েন্সির বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে।
উল্ল্যেখ্য, গত ২ জানুয়ারি বেবিচক থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার এয়ার অপারেটরস সার্টিফিকেট (এওসি) পায় নভোএয়ার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মিয়ানমারে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে এয়ারলাইনসটি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটের বহর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১২ জুন ৫০ আসনের জেট ইঞ্জিনচালিত তৃতীয় এমব্রেয়ার ই-১৪৫ উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত করে তারা।
২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে নভোএয়ার। এর আগে ২০১২ সালের মার্চে বেবিচক থেকে এয়ারলাইনস হিসেবে কার্যক্রম চালুর অনাপত্তি (এনওসি) সনদ পায় উড়োজাহাজ সংস্থাটি। নভোএয়ারের বহরে ব্রাজিলের তৈরি ৫০ আসনের জেট ইঞ্জিনচালিত তিনটি এমব্রেয়ার ই-১৪৫ উড়োজাহাজ রয়েছে। বর্তমানে এয়ারলাইনসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।