বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার আগে শ্রমিকদের মেডিক্যাল চেকআপের (স্বাস্থ্য পরীক্ষার) নামে চলছে ভয়াবহ প্রতারণা। এক শ্রেণির জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান (আদম বেপারি অফিস) নির্দিষ্ট কিছু মেডিক্যাল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বলেন। সেসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলে বলা হয়, “আপনার লাংসে স্পট, ইনফেকশন হয়ে গেছে। টাকা দেন ঠিক করে দেই।” টাকা না দিলে ‘আনফিট’, সঙ্গে খারাপ ব্যবহার।
জানা গেছে, রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ১৫০টি মেডিক্যাল সেন্টারের অনুমোদন দিয়েছে। তবে অধিকাংশ মেডিক্যাল সেন্টার স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। এই মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর অধিকাংশেরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা দূতাবাসের অনুমোদন নেই। এসব মেডিক্যাল সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নেই কোনো যন্ত্রপাতি। আর পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। বৈধ মেডিক্যাল সেন্টারেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে ফিট আর আনফিটের বাণিজ্য চলছে প্রকাশ্যে। এসব পরীক্ষার জন্য আসা অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলের অসহায় নিরীহ মানুষ।
এসব সেন্টার প্রতি শ্রমিকের কাছ থেকে ফি হিসেবে নেয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে। কখনো তার চেয়ে বেশি। শ্রমিকদের রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্তসহ নমুনা ঠিকই সংগ্রহ করে কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যোগ্য ও অযোগ্য বলে সার্টিফিকেট দেয় তারা।
জানা যায়, এই প্রতারণায় জড়িত রয়েছে এক শ্রেণির ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আর তাদের পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। আর বিদেশে চাকরির আশায় এদের খপ্পরে পড়ে শত শত যুবক প্রতারিত হচ্ছে।
মেডিক্যাল আনফিট (শারীরিক অযোগ্য) বলে প্রার্থীদের শারীরিক যোগ্য (ফিট) বানিয়ে দেয়ার কথা বলে কিংবা চিকিত্সার নামে অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা ধরনের ভুল চিকিত্সা দিয়ে দফায় দফায় টাকা আদায় করে যাচ্ছে চক্রটি। মেডিক্যাল চেকআপের ক্ষেত্রে দূতাবাসের নির্ধারিত রেটের তিনগুণ প্রার্থীর কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে।
অবৈধভাবে টাকা আদায়ের সঙ্গে কোনো কোনো দূতাবাসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সব কর্মকর্তা দূতাবাসের তালিকাভুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে কমিশন পেয়ে থাকেন।
এই প্রতারণা ঠেকাতে ব্যর্থ স্বাস্থ্য প্রশাসন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, মেডিক্যাল চেকআপের নামে বিদেশগামী যুবকরা প্রতারিত হচ্ছে—এই ধরনের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। অভিযুক্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগে ফকিরাপুলে এসব বেশি হতো। এখন গুলশাান, বনানীতেও এসব প্রতারণা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
যশোরের এনামুল নামে এক যুবক জানান, তিনি বিদেশে যাওয়ার জন্য জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট মেডিক্যাল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে যান। সেখানে তাকে আনফিট বলা হয়। তবে তিনি নামিদামি একাধিক প্রতিষ্ঠানে একই পরীক্ষা করালেও কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। নির্দিষ্ট মেডিক্যাল সেন্টার থেকে তাকে বলা হয়, টাকা দেন তাহলে ফিট করে দেই, না হলে আনফিটই থাকবেন। আর বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না।
র্যাব সদর দফতরের একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট জানান, আমরা অনেক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তারপরও এদের অবৈধ বাণিজ্য থেমে নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এসব প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অনেকেই প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের শেল্টার পান। তাই তাদের বিরুদ্ধে অনেক সময় ব্যবস্থা নেয়া যায় না।