স্টাফ রিপোর্টার : ছয় দফা দাবিতে ছাত্রদের নজিরবিহীন আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেয়া হয়। এর আগে গত বুধবার থেকে চলা আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে হেফাজত আমির আল্লামা আহমদ শফীর কার্যালয় ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। খবর নয়াদিগন্ত।
ছয় দফা দাবিতে গত বুধবার আন্দোলন শুরু করে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। মাদরাসার সবগুলো গেট ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। খবর পেয়ে পুলিশ বাইরে অবস্থান নেয়।
ছাত্রদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানিকে অবিলম্বে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার, ছাত্র প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বাস্তবায়নে সব প্রকার হয়রানি বন্ধ, বয়োবৃদ্ধ আল্লামা শফী শারীরিকভাবে অসুস্থ ও চলতে অক্ষম হওয়ায় তাকে
মহাপরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা বানানো, মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগ কিংবা অপসারণের ক্ষমতা মজলিসে শূরাকে প্রদান, বিগত শূরার হক্কানি আলেমদের পুনরায় নিয়োগ এবং শূরা থেকে বিতর্কিত ও চিহ্নিতদের বহিষ্কার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে হাইয়াতুল উলইয়ার মাস্টার্স সম্মানের দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্তও পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি। তা ছাড়া ভর্তির সময়েও কিছু ছাত্রকে ভর্তি করা হয়নি।
এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুদিন ধরেই ক্ষোভ বাড়ছিল। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বুধবার। ছাত্ররা তাদের ভর্তি ফরম ও প্রবেশপত্র খুঁজতে থাকেন। পরে সহকারী শিক্ষাসচিব মাওলানা আনাস মাদানির কক্ষে তা পাওয়া যায়। এ কারণে ছাত্ররা মাওলানা আনাস মাদানি ও মাওলানা ওসমান গনির কক্ষ ভাঙচুর করেন।
এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা ও ইসলামী ঐক্যজোট যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী ওই মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন। তার ওপরও হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। নানাসময় তার অযাচিত প্রভাব বিস্তারের কারণে ছাত্ররা তার ওপর আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন।
ছাত্রদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সন্ধ্যার পর মাদরাসার শূরার দুই প্রভাবশালী সদস্য এবং পার্শ্ববর্তী মেখল মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা নোমান ফয়জী ও নানুপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী মাদরাসায় উপস্থিত হয়ে মাওলানা আহমদ শফীসহ সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে সভায় বসেন।
সভা শেষে শূরা সদস্য মাওলানা নোমান ফয়জী ছাত্রদের সমাবেশে গিয়ে জানান, মাওলানা আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তাদের অবশিষ্ট দাবি দাওয়ার ব্যাপারে ১৯ সেপ্টেম্বর শনিবার মজলিসে শূরার পূর্ণাঙ্গ বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঘোষণা দেন। ছাত্ররাও দুই দিনের জন্য বিক্ষোভ স্থগিত করেন।
তবে মাওলানা আহমদ শফী শিক্ষকদের মিটিং ডেকে মাদরাসা ছুটি দেয়ার কথা বলছেন, এই সংবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার ছাত্ররা পুনরায় মাঠে নেমে আসেন। তারা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আল্লামা আহমদ শফীর কক্ষের সামনে ভাঙচুর করেন।
এ ছাড়া নায়েবে মুহতামিম মাওলানা শেখ আহমদ, সিনিয়র শিক্ষক মুফতি জসিমউদ্দিন, মাওলানা ওমর প্রমুখের রুমে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। তাদের বিক্ষোভের মুখে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর পূর্ণাঙ্গ শূরা বৈঠক ডাকেন আল্লামা শফী। শেষ খবর পর্যন্ত হাটহাজারিতে শূরা বৈঠক চলছিল।
এর আগেই গতকাল বিকেলে হাটহাজারী মাদরাসা বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব সৈয়দ আসগর আলী স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ২৪ আগস্ট কওমি মাদরাসার কিতাব বিভাগের কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কিছু শর্তসাপেক্ষে অনুমতি প্রদান করা হয়।
কিন্তু আরোপিত শর্তগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসাটি পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্দেশক্রমে বন্ধ করা হলো।
-নয়াদিগন্ত