একটা সময় পৃথিবীর মাটিতে দাপিয়ে বেড়াত বিশালকার প্রাণী ডাইনোসর। কিন্তু পরবর্তীতে কীভাবে এই প্রাণীগুলো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হলো, সেই রহস্য আজও রহস্য হয়েই আছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে অন্তত ১০ কিলোমিটার আকৃতির গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়।
মেক্সিকোর উপসাগরে ১২৫ মাইল জুড়ে যে স্থানে গ্রহাণুর আঘাতে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ সৃষ্টি হয়ে পৃথিবীর পরিবেশ বদলে গিয়ে ডাইনোসরের বিলুপ্ত ঘটেছিল, সম্প্রতি সে স্থানটি খুঁড়ে ওই গ্রহাণুর মুখে পৌঁছাতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।
মানুষের তৈরি নিউক্লিয়ার বোমার চেয়ে ২ মিলিয়ন গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল পৃথিবীর মাটিতে গ্রহাণুর ওই বিস্ফোরণ। এর ফলে ভূমিকম্প, সুনামি, উত্তপ্ত আবহাওয়া তৈরি হয়েছিল, ফলে পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ প্রজাতির মৃত্যু ঘটেছিল, যার মধ্যে ডাইনোসর অন্যতম।
১৯৮০ সালে গবেষকরা মেক্সিকোর উপকূলে সমুদ্র তলে ১২৫ মাইলজুড়ে চিকএক্সুলুব নামক গ্রহাণুর আঘাতে সৃষ্ট আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের ওই অঞ্চলটি শনাক্ত করেন। তবে গত কয়েকমাস ধরে ওই অঞ্চলের সমুদ্র তলে খোড়াখুড়ির পর সম্প্রতি গবেষকরা ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের আলোচিত ওই গ্রহাণুর মাধ্যমে সৃষ্টি সমুদ্র তলে ১২৫ মাইল বিস্তৃত বিশাল আগ্নেয়গিরির দেখা পান। এবং তার নমুনা সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। এর নমুনা পরীক্ষার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়েছে।
গবেষকদের প্রত্যাশা বিশাল ওই গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানার পর কী ঘটেছিল এবং কতটুকু উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে তার সন্ধান এবার পাওয়া যাবে। পাশাপাশি পাথুরে স্তরের আরো নিচে আটকে থাকা সম্ভাব্য জীবাশ্ম, ডিএনএ থেকে জানা যাবে বিভিন্ন প্রজাতির জীবনের গঠন।
যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজের ভূপদার্থবিদ্যার শিক্ষক এবং এই অভিযানের অন্যতম সদস্য যোহানা মর্গান বলেন, ‘সম্ভবত এটা গত ১০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান এবং এর মাধ্যমে বহু কাঙ্ক্ষিত রহস্যের সমাধান হতে যাচ্ছে।’
অত্যাধুনিক সরঞ্জামের সাহায্যে এই খননকার্য চালিয়েছে ইউরোপিয়ান কনসোর্টিয়াম। বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা, ডাইনোসর বিলুপ্তের পাশাপাশি সে সময়ের পরিবেশ, জীবাশ্ম থেকে বিভিন্ন প্রজাতির জীবের গঠন এবং পরবর্তীতে অনেক প্রাণী পৃথিবীতে কীভাবে টিকে গেছে- এসব রহস্য এবার নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব হবে।