মাঈনুল ইসলাম নাসিম, এভিয়েশন নিউজ: সাতখুনের কথা বললেই ইদানিং নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার তথা গডফাদার সহ আরো কত কিছুই না সামনে চলে আসে। না পাঠক, আমরা শীতলক্ষার জলে ডুবতে বসিনি আজ। পুকুরচুরী করা এক ‘গভীর জলের মাছ’ সচিবের সাতখুন মাফের নেপথ্যে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের সুবিধাবাদী সাংবাদিকরা যেন আজ রীতিমতো মুখে কুলুপ এঁটেছেন। হয়তো ভয়, না জানি আকাশে ভাসে নতুন কোন ‘মেঘ’, পরিণতি হয় সাগর-রুনীর।
প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন শতশত কোটি টাকা লুটপাট ও বিদেশে পাচার করলেও কেন আজ বহাল তবিয়তে, তা নিয়ে ‘ক্রাইম ওয়াচ’ বা ‘একুশের চোখ’ কেন আজ অন্ধ ? পত্রিকার ‘আলো’ কেন নিভু নিভু ? দুর্নীতিবাজ এই সচিবের সাতখুন মাফের নেপথ্যে কি স্বয়ং প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, তা কেন সরেজমিনে তুলে ধরছে না বাংলাদেশের ‘সো কল্ড’ প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো ?
এক খোন্দকারের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে আরেক খোন্দকার এখন দুঃসাহস দেখাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একই টেবিলে বসার ! ছবিতে লালবৃত্তে চিহ্নিত সচিব খোন্দকার শওকতের অতীত আমলনামা কি সরকারের কোন এজেন্সি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেবার দুঃসাহস দেখায়নি ? ২৩ নভেম্বর ২০১৪ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ে গেলে সচিব খোন্দকার শওকত যেভাবে ‘ধোয়া তুলসী পাতা’ সেজে গেলেন, তাতে করে তার শক্তির উৎস নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে কি ?
মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাকি পৈত্রিক-আত্মীয় হন সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন, এমন কানাঘুষাও এখন চলছে খোদ ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যান ভবনে। মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সচিবকে ‘শেল্টার’ দিচ্ছেন স্বয়ং মন্ত্রী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সরকারী সূত্র এমনটাই জানিয়েছে। প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ে আসার আগে গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব থাকাকালীন খোন্দকার শওকত নামে-বেনামে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হন, এমন অভিযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণাদি হাতে পেয়ে চলতি বছরই তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অবৈধভাবে অর্জিত অর্থসম্পদের মধ্যে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে পাচারের অভিযোগ রয়েছে বলে জানায় দুদক। দুদকের ফাইলপত্র বলছে, সচিব খোন্দকার শওকত তার স্ত্রী আয়েশা খানমের নামে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে (রোড-৯, বাড়ি-১৩৪) ৬ কাঠা প্লটের ওপর ছয়তলা ভবন করেছেন, যার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। গুলশান-১ এর ১২ নম্বর রোডের ২২০ নম্বর অ্যাপার্টমেন্টে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এর মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। সাভারের আশুলিয়ায় রয়েছে ১২০ বিঘা জমি, যার মূল্য ৭৫ কোটি টাকা। ভালুকায় রয়েছে ৪০ বিঘা জমি, যার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা।
সচিব খোন্দকার শওকত এ ছাড়া রাজধানীর বনানীতে স্ত্রী ও শ্যালকের নামে ৮ কাঠার প্লট কিনেছেন। এর বাজার মূল্য ৩৮ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারে স্ত্রী ও শ্যালকদের বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৩’শ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ৪’শ কোটি টাকার। নামে-বেনামে রাজউকের তিনটি প্লট গ্রহণ এবং আকার পরিবর্তনের অভিযোগে দুর্নীতিবাজ এই সচিব খোন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলা দায়েরের কয়েক মাসের মধ্যেই দুদকের ভাগ্যে জুটলো ‘ওয়াশিং মেশিন’ টাইটেল আর অত্যন্ত নেক্কারজনকভাবে সচিব খোন্দকার শওকত ফুলের মালা গলায় দিয়ে মন্ত্রীর কৃপায় পৌঁছে গেলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সাথে একই টেবিলে।
প্লট বরাদ্দে অনিয়ম সহ শত শত কোটি টাকা লুটপাট ও দুর্নীতির যাবতীয় তথ্য-প্রমাণাদি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর হাতে থাকলেও সচিব খোন্দকার শওকতের মামলার কার্যক্রম থেকে ইতিমধ্যে পিছু হটেছে দুদক। সচিবের বিরুদ্ধে করা ৩টি মামলা থেকেই তাকে অব্যাহতির সুপারিশ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা যতন কুমার রায় দুদকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। উপর মহলের প্রবল চাপের কথা স্বীকার করেছেন দুদকের অন্য কর্মকর্তারা। সেউ ‘উপর মহল’ যে প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই স্বয়ং মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ, তা অবশ্য বলছেন না দুদকের লোকজন চাকরী হারাবার ভয়ে।
দুদক কর্মকর্তা যতন কুমারকে আদর-যতন করার নেপথ্যে কে বা কারা, তা নিয়ে সিরিজ প্রতিবেদন জাতিকে উপহার দিতে পারতেন ঢাকার মিডিয়া জগতের রথী-মহারথী রুই-কাতলা সেলিব্রেটি সাংবাদিকরা। না, কেউই তা করেননি এবং করবেনও না। করলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ হবেন এই ভয়। ব্ল্যাকলিস্টেড হয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে শুধু বিদেশে প্রমোদভ্রমণই হারাম হয়ে যাবে না, একই সাথে গনভবনে চাটুকারিতা আর তোষামোদীর তেলে ভাজা বস্তাপঁচা প্রশ্নটিও করার সব সুযোগ হারাবেন।
বাংলাদেশের আলোকিত মিডিয়া জগতের অন্ধকার দিকটি ঠিক এখানেই। বিজয়ের মাসে শহীদদের আত্মার অভিশাপ তাড়িয়ে বেড়াবে কি এইসব কুলাঙ্গার আমলা-মন্ত্রী আর চাটুকার সাংবাদিকদের?