বাংলাদেশের দুই মোবাইল ফোন অপারেটর রবি-এয়ারটেল একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে তরঙ্গ ও মার্জার ফি বাবদ ৭৭৩ কোটি টাকা ফি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিটিআরসি। সম্প্রতি সংস্থাটির বিশেষ বৈঠকে এ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে তরঙ্গ একীভূত ফি হিসেবে ৫৭৩ কোটি টাকা এবং মার্জার ফি হিসেবে ২০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে তরঙ্গের মূল্যসহ একীভূতকরণের বিভিন্ন বিষয় পুনরায় বিচার-বিশ্লেষণ করে নতুন মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশনা পাঠানো হয়। চিঠিতে বিটিআরসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, রবি এবং এয়ারটেলের প্রস্তাবিত মার্জারে তরঙ্গের মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করা হবে বা কী পরিমাণ হবে। সরকারের ওই চিঠির ভিত্তিতেই বিটিআরসি প্রায় ৭৭৩ কোটি টাকা আদায়ের সুপারিশ করে। তরঙ্গ একীভূতকরণের এ বিষয়ে বিটিআরসির আগে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মূল্যবান জাতীয় সম্পদ হিসেবে তরঙ্গের জন্য সরকার চাইলে চার্জ হিসেবে অর্থ আদায় করতে পারে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, মার্জারের ফি নির্ধারণের বিষয়ে বিটিআরসিকে দুটি চিঠি দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। প্রথম চিঠিতে বিটিআরসির কাছে টেলিযোগাযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে তরঙ্গ একীভূত করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তরঙ্গ সীমিত এবং জাতীয় সম্পদ। সরকার যদি চায়, এয়ারটেলের তরঙ্গ একীভূত করার ক্ষেত্রে বাড়তি ফি আদায় করতে পারে।
পরবর্তী সময় টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মার্জারের বিষয়ে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, সরকার চাইলে এয়ারটেলের তরঙ্গ রবির সঙ্গে একীভূত করার ক্ষেত্রে বাড়তি ফি আদায় করতে পারে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে ওয়ারিদ টেলিকম (পরবর্তী সময় এয়ারটেল) ১৮০০ মেগাহার্টজ অর্থাৎ টুজি ব্যান্ডে ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনতে ব্যয় করেছিল ৩৪০ কোটি টাকা। ১৫ বছরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া এ তরঙ্গের জন্য প্রতি মেগাহার্টজে ওয়ারিদের খরচ হয় ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০১১ সালে রবি আজিয়াটা টুজি তরঙ্গের লাইসেন্স নবায়নের সময় প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য ব্যয় করেছিল ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মেগাহার্টজ টুজি তরঙ্গের জন্য রবিকে বেশি দিতে হয় ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
২০০৫ সালে ওয়ারিদের কেনা ১৫ বছরের জন্য ওই স্পেকট্রামের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। যেহেতু রবি একই তরঙ্গ ২০১১ সালে ১০ কোটি টাকা মূল্যে কিনেছিল, সে কারণে এয়ারটেলের কাছে থাকা টুজির তরঙ্গ একীভূত করতে হলে ১০ কোটি টাকা মূল্যেই কিনতে হবে। সে হিসেবে রবি আজিয়াটাকে প্রতি মেগাহার্টজে এই অপারেটরকে আরও ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা করে ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য একীভূত কোম্পানিকে দিতে হবে ৫৭৩ কোটি টাকা।
এদিকে রবি ও এয়ারটেলের একীভূতকরণের বিষয়ে চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দিতে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত। এর আগেই এই প্রস্তাব ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেতে হবে।
বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করার জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিটিআরসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে রবি-এয়ারটেল। অপারেটর দুটির ঘোষণা অনুযায়ী ব্যবসা একীভূত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার আজিয়াটা এবং জাপানের এনটিটি ডকোমো মিলে ৭৫ শতাংশের মালিক হবে। বাকি ২৫ শতাংশের মালিকানা থাকবে এয়ারটেলের হাতে। রবি ও এয়ারটেলের তরঙ্গ একীভূত হলে তাদের সমন্বিত তরঙ্গ দাঁড়াবে ৩৯ দশমিক ৮ মেগাহার্টজে। অন্যদিকে অপর বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের কাছে রয়েছে ৩২ মেগাহার্টজ এবং বাংলালিংকের ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল মাসে রবি-এয়ারটেল একীভূত হতে সরকার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ফি নেবে বলে গুঞ্জন উঠেছিল। তবে ৯ এপ্রিল সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছিলেন, এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ফিসের প্রস্তাব করা হয়নি। তিনি বলেন, রবি-এয়ারটেল একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে পাশ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুকরণীয় রীতি-রেওয়াজ অনুসরণ করা হচ্ছে।