বাংলাদেশের শ্রমবাজারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়েছে মালয়েশিয়া। সাত লাখেরও বেশি বাংলাদেশি এখানে বসবাস করে। নানা প্রয়োজনে তাদের যোগাযোগ করতে হয় এখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে। দূতাবাসে রয়েছে নিবেদিত কর্মকর্তাগণ যারা আন্তরিকভাবে বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে মালয়েশিয়া দূতাবাসে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি ছাত্র এবং শ্রমিকরা তাদের পাসপোর্ট ও ভিসার সমস্যা সমাধান করতে এসেছে। দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন তাদের সহযোগিতা করতে। কথা হয় দূতাবাসের প্রথম সচিব এমএসকে শাহীনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি মাস থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা দূতাবাসকে ঢেলে সাজিয়েছি। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিতে পারি অন্তত কুয়ালালামপুরে অবস্থিত এই দূতাবাসে আসতে সাধারণ মানুষের এখন আর দালালের হাত-পা ধরতে হবে না।’
দূতাবাসে নতুন সেবার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি ছাত্রদের মধ্যে ১০ জনকে এখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছি। যার ফলে আগে যেখানে ফটোকপির জন্য ১০ রিঙ্গিত নিয়ে নিতো দালালরা, সেখানে এখন মাত্র ১০ সেন্ট দিয়ে ফটোকপি করতে পারছে। ছবি তুলতে যেখানে আগে ২০ রিঙ্গিত নেয়া হতো সেখানে মাত্র ৩ রিঙ্গিতে ফটো তোলা এবং ২ কপি প্রিন্টও দেয়া যাচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবীদের বসার জন্য আমরা চেয়ার টেবিল এবং তাবুর ব্যবস্থা করেছি। মোবাইল অপারেটরের সহযোগিতায় আগত দর্শণার্থীদের জন্য আমরা ছাউনির ব্যবস্থা করেছি।’
আগে যেখানে পাসপোর্ট সংক্রান্ত অথবা অন্য সমস্যা সমাধানের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অথবা দালালদের ধরে সিরিয়াল নিতে হতো সেখানে এখন দেয়া হচ্ছে তাৎক্ষণিক সেবা। গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার মানুষের পাসপোর্ট সমস্যার সমাধান করা হয় এখানে।
পাসপোর্ট সেবার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রথম সচিব বলেন, ‘আগে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হতো দিনে একবার। আমরা এই নিয়ম বদলে প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার নিয়ম চালু করেছি। বর্তমানে ছাত্র এবং শ্রমিকদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) করার জন্য ১১৬ রিঙ্গিত এবং অন্যান্যদের পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে ৩৮৫ রিঙ্গিত নেয়া হচ্ছে। যেটা আগে দালালদের কারণে অনেক বেশি খরচ করতে হতো।’
দূতাবাসে আগত বাংলাদেশিদের জন্য আগে ছিল মাত্র দুটি টয়লেট। বর্তমানে ৬টি টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমএসকে শাহীন আরো জানান, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন ৩০০ মানুষকে সার্ভিস প্রদান করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবু আমরা ভুক্তভোগীদের কথা চিন্তা করে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার মানুষকে সেবা দিচ্ছি। দূতাবাসের ভবন ও এলাকা এতো মানুষের সেবা দেয়ার অনুপযোগী। আমরা চেষ্টা করছি যেখানে একসঙ্গে অনেক মানুষকে সেবা প্রদান করা যায় এমন স্থানের ব্যবস্থা করতে।’
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন পাসপোর্ট করতে আসা জয়নুল একজন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো প্রয়োজনে সহজেই দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি এবং খুব দ্রুত সেবা পাই। আগে চাইলেই প্রথম সচিবের সাথে কথা বলা সম্ভব ছিলো না। তবে এখন পাসপোর্ট এবং ভিসার ব্যাপারে সহজেই প্রথম সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। এ ব্যাপারটা আমাদের বেশ সহযোগিতা করে। আমরা আরো উন্নত দূতাবাসের দাবি করি।’
দালাল বলতে এখন আর মালয়েশিয়া দূতাবাসে কাউকে দেখা যায় না। আগে যেখানে সাধারণ মানুষের জন্য দূতাবাসে প্রবেশ করা কঠিন ব্যাপার ছিল সেখানে এখন চিত্র ভিন্ন। দালালদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না এখন দূতাবাসের ভেতরে। আর যেকোনো সমস্যা সমাধানে ফোনেও সমাধান দিয়ে যাচ্ছে কর্মকর্তাগণ।