ব্লকে ব্লকে নদীশাসন, ব্লকে জড়িয়ে শ্রমিক জীবন

Blok-bg20160513062805পদ্মার বুকে স্বপ্নের সেতু নির্মাণে চলছে মহা কর্মযজ্ঞ। এই সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে চলছে নদীশাসন কাজ। পদ্মার জাজিরা পাড়ের মাঝির ঘাটে চলছে নদীশাসনের প্রধান কাজ কংক্রিটের ব্লক তৈরি। এ কাজের মূল দায়িত্ব পালন করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড।
সিনোহাইড্রোর কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, নদীশাসনের কাজে বিভিন্ন সাইজের রক (পাথর), কংক্রিট ব্লক, সিমেন্ট, বালি, স্টোনপিচ, সিমেন্ট ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী সাইটে মোবিলাইজেশন প্রক্রিয়াধীন। কাজ চলছে জিও ব্যাগে বালি ভরার মেশিন ও কংক্রিট ব্লক স্থাপনের মেশিনে। এছাড়া, গত বর্ষায় মাওয়া প্রান্তে তৈরি হওয়া গর্ত ভরাটের কাজও চলছে সমানে।

ব্লক বানানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মো. খোকনের সঙ্গে আলাপে তিনি জানান, কেবল কংক্রিটের ব্লক বানাতেই এখানে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত দুই শিফটে ব্লক বানানোর কাজ চলছে।
তিনি ব্লক তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, আগে সিমেন্ট ও কংক্রিট মিশ্রিত কাঁচামালগুলোকে আলাদাভাবে পরীক্ষা করা হয়। পরে কাঁচামালগুলোকে ব্লক বক্সে ঢালা হয়।

কাঁচামাল মেশানোর কাজে নিয়োজিত আরেক শ্রমিক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ব্লক তৈরিতে তিন ধাপে চলে প্রক্রিয়া। ‘প্রথম ধাপে’ লেবার শ্রমিকরা স্টিলের ব্লক বক্সে কাঁচামালকে ভরে পুরো করে দেন। ‘দ্বিতীয় ধাপে’ জুনিয়র শ্রমিকরা পাম্প হাইড্রো পাইপের মাধ্যমে ব্লকের কাঁচামালকে ভেতর থেকে পূর্ণ করে দেন, আর ‘তৃতীয় ধাপে’ ‍সিনিয়র শ্রমিকরা ব্লকগুলোর ওপরের স্তরে স্টিল প্লেট শিট দিয়ে সমান করে মাঝে আংটা বসিয়ে দেন।
এভাবে প্রতিদিন দুই শিফটে মোট দুই হাজার ৪০০ ব্লক বানানো হয়। ইতোমধ্যে লাখ লাখ ব্লক তৈরি করে পাশেই রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের জন্য সারি করে রাখা হয়েছে। তৈরির প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও লাখ লাখ ব্লক ব্লক।

ব্লক তৈরির শ্রমিকদের বেতন সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানান, এখানে ঘণ্টাপ্রতি কাজ করেন তারা। লেবার শ্রমিক পান ঘণ্টায় ২৪ টাকা এবং কাঁচামাল মেশানোর শ্রমিক পান ঘণ্টায় ৩৪ টাকা করে।
পাশেই ব্লকে ব্যবহারের জন্য আংটা বানানোর কাজ করছিলেন শাহিন ও রেজাউল। এই আংটাগুলোর কাজ হচ্ছে নদীতে ফেলার সময় ব্লকগুলো ক্রেনের মাথায় ঝুলিয়ে রাখা যাবে।

চীনা কর্মীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রমিক মো. মুজিবুর বলেন, চীনারা কাজে ফাঁকি পছন্দ করেন না। খেয়াল রাখেন সবদিকে। তাছাড়া, আমরাও কাজে মনোযোগী। আমরা দেশের স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণের এই প্রকল্পে কাজ করতে পেরে গর্বিত।

চীনাদের ভাষা জটিলতা সম্পর্কে মুজিবুর বলেন, ইশারা-ইঙ্গিতে কাজ বোঝান চীনা কর্মীরা। হাতের ইশারা, মুখের ভঙ্গি বুঝে কাজ করেন তারা।

তিনি আরও বলেন, নিজ দেশের (বাংলাদেশ) অনেক জেলার ভাষাই বুঝি না, চীনা ভাষা বুঝবো কী করে?
এসময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই উচ্চস্বরে হেসে ওঠেন।

শরীয়তপুরের জাজিরায় নাওডোবা পয়েন্টে নেমেই টানা ১১ কিলোমিটার সড়ক ছুটে গেছে মাদারীপুরের পাঁচ্চর পর্যন্ত। আর এ দীর্ঘ সড়কে রয়েছে- পাঁচটি সেতু, ১৯টি কালভার্ট, ৮টি আন্ডারপাস।

ব্লকগুলো নদীরপাড় রক্ষা ছাড়াও সড়কের রাস্তার দু’পাড়, কালভার্ট, আন্ডারপাস ও ব্রিজগুলোর পাড়সহ নিম্নভাগের ভাঙন রুখতে কাজ করবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.