কাতারে বাংলাদেশিদের ঐক্যের অভাবে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে

qatar-lrg-220160512234648পারস্য উপসাগরের ছোট দেশ কাতার, গরম ও মরুভূমির দেশ কাতার, মাথাপিছু আয়ে বর্তমানে পৃথিবীর সবচাইতে ধনী দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের পারস্য উপসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভারতীয় কেরালারা এখানকার স্থায়ী ব্যবসার বেশির ভাগ দখলে নিয়েছে। এছাড়াও নির্মাণ খাতে পাকিস্তান, নেপালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রয়েছে বেশ বড় অংশ বাংলাদেশি।

আধুনিক ডিজিটাল কাতার বিনির্মাণে বাংলাদেশিদের রয়েছে বড় অবদান, এখানে বাংলাদেশিদের ঠাট্টা করে ‘বাঙলী’ নামে ডাকা হয়, পরিশ্রমের দিক থেকে যেমন সুনাম কুড়িয়েছে বাংলাদেশিরা, তেমনি কিছু বাংলাদেশির অপকর্ম আত্মমর্যাদাও ক্ষুণ্ন করেছে। এখানে বাংলাদেশিদের কিছু সমালোচনা এবার তুলে ধরা হলো। এসব স্বভাব ও আচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে, হয়তো বাংলাদেশিরা ও এখানে মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

কাতারে আইন অমান্যের প্রবণতা: বাংলাদেশিদের চেয়ে আফ্রিকান ও আরবদের আইন অমান্যের প্রবণতা অনেক বেশি। তবে এই দুই জাতির শারীরিক গঠন তাদেরকে অনেক হয়রানি থেকেই রেহাই দেয় এবং দাপুটে করে তোলে। এরপরই বাংলাদেশিদের অবস্থান বলা যায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পান বিক্রি, সবজি বিক্রি থেকে শুরু করে অনেক কাহিনী রয়েছে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশিই বাংলাদেশিদের শত্রু: এখানকার বহুল প্রচলিত বাক্য এটি। ঠুনকো কারণে শত্রু একজন আরেকজনের অনেক বড় ক্ষতি করে। যেমন অনেক সময় অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীর খবর আরেকজন বাংলাদেশি দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে হলেও শত্রুভাবাপন্নকে আটক করানো হয়।

মারামারি-হানাহানি: কাতারে বাংলাদেশিদের তুলনায় অন্য জাতিগোষ্ঠীর নিজেদের মধ্যে মারামারি-হানাহানির খবর কমই পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেক সময় পান থেকে চুন খসা থেকেও মারামারির শুরু হয়, কাতারে ন্যাশনাল এরিয়াতে প্রতিদিন বাংলাদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের মারামারি হয় কোনো না কোনো কারণে। এরপর পুলিশ ধরে নিয়ে যায় উভয়পক্ষকেই। সহনশীলতার অভাবে ক্ষুণ্ন হয় আত্মমর্যাদা।

কাতারে বাংলাদেশিদের ঐক্যের অভাব: তিন লক্ষাধিক বাংলাদেশি কাতারে অবস্থান করলেও নিজেদের মধ্যে ঐক্যের অভাব রয়েছে। এখানে কোনো শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে ওঠেনি, যে দায়িত্বটা ছিল শিক্ষিত ও ব্যবসায়ী সমাজের। শিক্ষিতদের অনেকেই শ্রমিক শ্রেণি থেকে দূরে থাকেন নিজেদের পরিচয় আড়াল করে রাখেন মূলত আমাদের শিক্ষিত সমাজ হিংসুক। তবে নিজেদের চোর হিসেবে পরিচালিত করার এ পদ্ধতি শিক্ষিতদের জাতিগত মর্যাদা বা ব্যক্তিগত মর্যাদা কোনোটাই বাড়াতে পারেনি।

কাতারে রাজনীতির নোংরামি: এ দেশের বিরোধী দলের আন্দোলনে মিছিল না হলেও, বাংলাদেশে সরকারি দল ও বিরোধী দলের সংঘাত এখানেও রমরমা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির, অনুসারীরা এখানে দলাদলি করে বেশ দুর্নাম কুড়িয়েছে। দলে দলে বিভক্ত হয়ে রমরমা চলছে দেশের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতিটি সংগঠনেই রয়েছে বেশ কয়েটি ভাগ।

দ্রুত ধনী হওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশিদের: দ্রুত ধনী হওয়ার একটি প্রবণতা রয়েছে বাংলাদেশিদের। কাতার আসার কিছুদিন থাকার পর বেশিরভাগ প্রবাসী আদম ব্যবসায়ী বনে যায়। আদম ব্যবসা কিছু প্রবাসীর প্রথম টার্গেট থাকে।

কাতার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা সফিকুল ইসলাম প্রধানের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, কাতারের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাসুদ খন্দকার আদম ব্যবসায়ীদের কাছে কাছে রাখতেন। তার কারণে ভিসার ব্যবসায়ীরা সহজে পাড় পেয়ে গেছে, নতুন রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ আশার পর থেকে আদম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছেন।

কাতার আওয়ামী লীগে বিভক্ত নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমিও চাই কাতার আওয়ামী লীগ বিভক্ত না থাকুক, কাতার আওয়ামী লীগের ঐক্যের জন্য আমি প্রয়োজনে আমার সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবো, তার পরও আমি চাই কাতার আওয়ামী লীগ ঐক্যে বৈধ হক, আসুন আমরা সম্মেলনের আয়োজন করি কাতার আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করে নতুন দের সুযোগ করে দেই।

কাতার বিএনপির সিনিয়র নেতা নাছির উদ্দিন জানান, কাতারে বিএনপি তিন ভাগ বিভক্ত হয়ে আছে শুধু সভাপতির চেয়ারের জন্য, কাউকে কেউ কোনো ছাড় দিতে রাজি না, সবাই পদপদবি নিয়ে পাগল, এভাবে দলাদলি করে নিজেরা নিজেদের ছোট করছি।

সংবাদকর্মী ছফি উল্লাহ জানান, আমি কাতারের রাজধানী ন্যাশনাল এরিয়াতে থাকি, ন্যাশনাল এরিয়াতে প্রতিদিন বাংলাদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের মারামারি হয় বেশির ভাগ ভিসা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে। যেসকল বাংলাদেশি ফ্রি ভিসা নিয়ে কাতার আসেন তারা বেশি প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন, বেশিরভাগ ফ্রি ভিসার লোক বেকার, নানান অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে বাংলাদেশের মানসম্মান ক্ষুণ্ন করে।

এসব দোষের মধ্যেও বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে ভালো করার অদম্য স্পৃহা। সবাই নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্যে অর্থ আয় করছেন। বিপদে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বাংলাদেশিকে আরেক জন বাংলাদেশি বিপদে ফেলে যেমন সত্যি, আবার রক্ষাও করেন আরেকজন বাংলাদেশি। সবাই মনে করেন, যখন আরো শিক্ষিত বাংলাদেশি এখানে প্রবেশ করবে এবং দেশের প্রতিনিধিত্ব শুরু করবে, আত্মমর্যাদায় উদ্ভাসিত হবে বাংলাদেশের।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.