করোনা মহামারীতে এয়ারলাইন শিল্প এখনও কম্পমান। ৪৩টি এয়ারলাইন্স দেউলিয়া হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ছোট এয়ারলাইন্স মালিকরা তাদের ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন। বোয়িংয়ের সিইও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে যখন বললেন ‘বড় বড় কোম্পানিগুলোর কয়েকটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে’- তার বক্তব্য এয়ারলাইন্স কর্তাদের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন ‘এয়ারলাইন্স ফর আমেরিকা’র প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড সিইও নিকোলা ক্যালিও বলছেন, বড় কোম্পানি বন্ধ হওয়ার মতো কিছু ঘটবে না। অবশ্য এয়ারলাইন্সের সমস্যা হঠাৎ করে সমাধান হওয়ার নয়। তবে ক্রিসমাসের আগে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন হবে। নিকোলাস দুইবার হোয়াইট হাউজের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি এখন এয়ারলাইন্স ফর আমেরিকা (এ৪এ) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ট্রেড গ্রুপের কর্ণধার।
নিকোলাস ক্যালিও এখন এয়ারলাইন্সে করদাতাদের সহায়তা প্যাকেজের জন্য তদবিরে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি বলছেন, করোনাকালে এয়ারলাইন্সগুলোকে শক্তিশালী রাখা দরকার। কারণ জাতির ওপর চেপে বসা অর্থনৈতিক মন্দা ঘোচাতে এই সহায়তা প্যাকেজ কাজে লাগবে।
মার্কিন কংগ্রেসে এয়ারলাইন্সের জন্য দ্বিতীয় দফা সহায়তা প্যাকেজ পাস হয়নি। এ কারণে এয়ারলাইন্সে কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে আমেরিকান এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ৩২০০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে। তারপরও তারা আশাবাদী। তারা বলছে, যদি আগামীতে কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা আবার সহায়তা প্যাকেজ পাস করে তাহলে চাকরিচ্যুত কর্মীদের তারা ফিরিয়ে আনবে।
সম্প্রতি এপির সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন নিকোলাস ক্যালিও। তিনি এয়ারলাইন্সের জন্য সহায়তা প্যাকেজ সংগ্রহ, এয়ারলাইন্স শিল্পের অবস্থা এবং মহামারীকালে দেউলিয়াত্ব কিভাবে ঠেকানো যায় ইত্যাদি বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি এবিসি নিউজে ১১ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রশ্ন : এখন করদাতাদের সহায়তা প্যাকেজ খুঁজছেন। ভাল সময়ে অর্থ জমা করেননি কেন?
নিকোলাস : মার্চের ১ তারিখ এ৪এ’র সদস্যরা মনে করেছিলেন কোম্পানিগুলোর যে অর্থ আছে তা যথেষ্ট। তারা ভেবেছিল কোম্পানিগুলোর অবস্থা যদি নাইন ইলেভেনের চেয়ে তিনগুণ খারাপও হয় তাহলে সেই অর্থ দিয়ে পরিস্তিতি সামাল দেয়া সম্ভব। কিন্ত পরিস্থিতি এত খারাপ হবে তা অনুমান করা যায়নি। গত দশকে যাত্রীবাহী বিমানসংস্থাগুলো তাদের কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করে ৪২৪ বিলিয়ন ডলার, বহরে ব্যয় হয় ১৪৩ বিলিয়ন। এছাড়া উৎপাদন বিনিয়োগ ও ঋণের পেছনে ব্যয় হয় ৯১ বিলিয়ন, এবং শেয়ারহোল্ডারদের দেয়া হয় ৫৬ বিলিয়ন ডলার। সুতরাং আয়ের অধিকাংশ ব্যয় হয়ে যায় কোম্পানি পরিচালনা ও কর্মীদের বেতনে।
প্রশ্ন : এয়ারলাইন্সের ভবিষ্যত নির্মাণে মহামারী কী ভূমিকা রাখবে?
নিকোলাস : কোম্পানিগুলো ভাল অবস্থায় ছিল। বহু যাত্রী বহনে তারা সক্ষম ছিল। অনেক এয়ারপ্লেন উৎপাদন হচ্ছিল। এক্ষেত্রে বিমান কোম্পানি ও যাত্রীরা অনেক প্রযুক্তিগত সুবিধাও পেয়েছে। এখানে কারও কোনো ভুল ছিল না। কিন্তু করানা মহামারী সব উলটপালট করে দিয়েছে। এরকম হবে কেউ ভাবতে পারেনি।
প্রশ্ন : প্রথম রাউন্ডের সরকারি সহায়তা প্যাকেজ দিয়ে পরিস্থিতি উত্তরণের আগ পর্যন্ত চালিয়ে নেয়ার কথা ছিল, কিন্তু কি ঘটেছে?
নিকোলাস : মহামারী লম্বা সময় নিয়েছে। আমাদের কাছে এটা প্রত্যাশিত ছিল না। আমরা দেখলাম ভ্রমণ ও বুকিং উভয় ক্ষেত্রে ধীর গতিতে উত্তরণ ঘটছে গরমকালে। কিছুদিন পরিস্থিতি আরও ভালোর দিকে ছিল। কিন্তু এখন আমরা বুঝতে পারছি আমরা গত বছরের তুলনায় ইনকামে ৭০ শতাংশ নেমে গেছি। আমাদের আশা ছিল একটি সমন্বিত ভ্যাকসিন পাব। এ ব্যাপারে হার্ভার্ড স্কুল অব পাবরিক হেলথের সঙ্গে কাজও করেছি। আমাদের জরিপে যাত্রীদের আগ্রহ ধরা পড়েছে। আগামী কয়েকমাসেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে বলে আশা করি।
প্রশ্ন : ক্রিসমাসের ছুটিতে কি পরিস্থিতি ভাল থাকবে?
নিকোলাস : অক্টোবর ও নভেম্বরের শুরুতে পরিস্থিতি উত্তরণে ধীর গতি থাকছে। জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে স্বাভাবকিভাবেই একই গতি থাকবে। কিন্তু ক্রিসমাসের আগে আগে আমরা ব্যাপক প্রত্যাশা করছি। যাত্রীদের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্ন : কোম্পানিগুলো বহু লোকসান দিচ্ছে। কোনো বড় কোম্পানি কি দেউলিয়া হতে পারে?
নিকোলাস : এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটবে না। প্রতিটি কোম্পানি এখন ভাল করছে। তাদের তারল্য ধরে রাখতে কাজ করছে। আমরা প্রচুর মানুষকে পেয়েছি যারা বিমান ভ্রমণে ফিরতে চায়। কর্মীদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তবে সবকিছু ফিরতে একটু দেরি হবে। এয়ারলাইন্সের এ সমস্যাটি হঠাৎ করে সমাধান হওয়ার নয়।
প্রশ্ন : ২০২৩ কিংবা ২০২৪ সালে কোম্পানিগুলোর অবস্থা কেমন দাঁড়াবে?
নিকোলাস : যাত্রী ও ফ্লাইট বেড়ে গেলে কোম্পানিগুলোর প্রত্যাশাও আগের মতো বেড়ে যাবে। ২০১৯ সালে কোম্পানিগুলোর ভাল অবস্থা রেকর্ড পর্যায়ে ছিল। আগামী জানুয়ারি ফেব্রুয়ারির পর থেকে আমরা আগেই অবস্থায় পৌছাব। আমরা কোম্পানিগুলোকে লাভজনক ও কার্যকর দেখতে চাই।