এইচ এম দেলোয়ার, এভিয়েশন নিউজ: রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) এবার গার্মেন্টস পণ্যের কার্টনের ভেতর থেকে আবারও ৪৩ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকা থেকে ওই সোনা উদ্ধার করা হয়। যার বাজারমূল্য ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে সোনা উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, গতকাল ভোরে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকা থেকে ওই সোনা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ালাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনটি কার্টন ঢাকায় আসে। সেগুলোতে চট্টগ্রাম ইপিজেডের জন্য গার্মেন্ট এক্সেসেরিজ আনার কথা বলা হয় কাগজপত্রে। সোনাগুলো বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে পাচারের উদ্দেশে বের করা হচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দারা তিনটি কার্টনে তলাশি চালিয়ে ভেতরে প্রতিটি এক কেজি ওজনের ৪৩টি সোনার বার পায়। কার্টুন তিনটির ওজন ছিল ৮২ কেজি। তবে চোরাচালানে জড়িত কাউকে আটক করা যায়নি বলে তিনি জানান।
এদিকে ৪৩ কেজি সোনা চালান আটকের কয়েক ঘণ্টা আগেই শাহজালালসহ দেশের চারটি বিমানবন্দরে চোরাচালান রোধে ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। গত দুই বছর ধরে চোরাই সোনার অসংখ্য চালান আটকের মধ্যেই গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়। সা¤প্রতিক সময়ে সোনার সবচেয়ে বড় চালানটি আটক হয় গত বছরের ২৪ জুলাই। ওই চালানে ১২৪ কেজি ওজনের ১ হাজার ৬৫টি সোনার বার ধরা পড়ে, যার মূল্য প্রায় ৫৪ কোটি টাকা।
এছাড়া গত ২৬ এপ্রিল দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ১০৬ কেজি সোনা উদ্ধার করে শাহজালাল বিমানবন্দরের শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ১২৪ কেজি সোনার চালান আটকের দেড় বছর পর গত ৬ ডিসেম্বর বিমানের ১০ কর্মীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এছাড়া গত নভেম্বরে চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক উপ মহাব্যবস্থাপকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।
সে সময় গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, শফিউল আজম নামের এক ব্যক্তি দুবাই থেকে চোরাচালানের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন। আর ঢাকায় এ কাজের সমন্বয় করে বিমান কর্মকর্তা, ঠিকাদার, কেবিন ক্রুসহ সংশ্লিষ্টদের একটি চক্র। শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কারো সহযোগিতা ছাড়া এভাবে নিয়মিত সোনা চোরাচালন যে সম্ভব নয়- শুল্ক বিভিাগের সে সন্দেহ আগে থেকেই ছিল।
দুই বিমান কর্মচারী পালিয়ে গেছে ব্যাংকক
১২৪ কেজি সোন পাচার ঘটনায় বিমানের ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে মামলাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। এদিকে বিমান কর্তৃপক্ষ ঐ ১০ জনকে সাসপেন্ড করেছে বলে বিমান সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনার সাথে আরও ৫ বিমান কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে। এর মধ্যে ২ জন ৩-৪ দিন আগে ব্যাংকক পালিয়ে গেছে। বাকী ৩ জন দেশেই গাঢাকা দিয়েছে।
যে ২ জন ব্যাংকক পালিয়ে গেছে তারা হলো বিমানের ট্রাফিক হেড হেলপার এজাজ (বি শিপ্ট) এবং ডি শিপ্টের ট্রাফিক হেড হেলপার আকরাম হোসেন। যে ৩ জন বহাল তবিয়তে রয়েছে তারা হলো হেড ক্লার্ক ওবায়েদ, কামরুল এবং আতাউর রহমান আতা। অতি স¤প্রতি আতাউর রহমান শাহজালাল বিমান বন্দরে ২কেজি সোনা সহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। প্রভাবশালী এক সংসদ সদ্যসের তদবীরে সে যাত্রায় পার পেয়ে যায়। ২ বিমান কর্মচারী ব্যাংকক পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জি.এম. আতিক সোবহান এভিয়েশন নিউজকে জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। কাগজ পত্র দেখে বলতে হবে।