শাহজালালে স্বর্ণ চোরাচালানের ৫৬ জনের সিন্ডিকেট: কেবিন ক্রুর জবানবন্দি

Biman-Goldএভিয়েশন নিউজ: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৫৬ জনের সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতো বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক ওরফে পলাশ। পলাশ নিজেকে বিমানের চেয়ারম্যানের ধর্মপুত্র বলে পরিচয় দিত। এ কারণে সবাই তাকে সমীহ করতো। আর তার কথার অবাধ্য হলে বদলির হুমকি দিত। ফলে বাধ্য হয়েই স্বর্ণ চোরাচালানে অনেককে সহায়তা করতে হয়েছে। তবে প্রতি চালানে নির্ধারিত হারে কমিশন দেন পলাশ। আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বিমানের কেবিন ক্রু মতিউর রহমান।

শনিবার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি এ জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দি শেষে তাকে আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। গত মঙ্গলবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিমানবন্দরে ২ কেজি ৬শ’ গ্রাম স্বর্ণ আটকের মামলায় মতিউর রহমানকে গ্রেফতার করে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়। এ নিয়ে এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছে বিমানের ৬ কর্মকর্তাসহ ৮ জন। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃতরা সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মতিউর রহমান জানান, বিমানে চাকরি করছেন আট বছর ধরে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। বিমানের ঠিকাদারি পাওয়ার পর থেকেই স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেট তৈরি করে পলাশ। তার প্রভাবের কারণে বিমানসহ অন্যান্য সংস্থার অনেকেই স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে যুক্ত হতে বাধ্য হয়।

জবানবন্দিতে তিনি আরো জানান, পাচারের ৩০ শতাংশ স্বর্ণ আটক হয়। তবে এসব স্বর্ণ আটকের ক্ষেত্রে কাজ করে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ। কোন গ্রুপ কমিশন থেকে বঞ্চিত হলে তারাই মূলত এসব স্বর্ণের চালান ধরিয়ে দিতে সহায়তা প্রদান করে থাকে।
গত ১২ নভেম্বর দুই কেজি ৬শ’ গ্রাম স্বর্ণ ও বেশ কয়েকটি আইপ্যাডসহ গ্রেফতার হয় বিমানের কেবিন ক্রু মাজহারুল ইসলাম রাসেল। গত ১৭ নভেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দিতে স্বর্ণ পাচারের ৫৬ জনের সিন্ডিকেটের নাম প্রকাশ করেন।

সে তালিকায় বিমানের পাশাপাশি রয়েছে সিভিল এভিয়েশন, কাস্টমসসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য। ঐ তালিকা অনুযায়ী গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন, ফ্লাইট ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, শিডিউল ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন, বিমানের ঠিকাদার মাহবুবুল হক পলাশ, রাজধানীর উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুন অর রশিদ। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গত ২৪ নভেম্বর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ঐ তালিকা অনুয়ায়ী গত ১৩ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন বিমানের শিডিউল ইনচার্জ নাসিরউদ্দিন। তাকে দু’দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার নাসিরউদ্দিন স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তার দেয়া তথ্য মতে সর্বশেষ গ্রেফতার হন বিমানের ক্রু মতিউর রহমান।

তিনি আরো জানান, বিমান বন্দরে স্বর্ণ পাচারের ঘটনায় ঘুরে ফিরে ৫৬ জনের নাম আসছে। এদের মধ্যে আরো কয়েকজন স্বর্ণ আটক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে। বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়ে আত্মগোপন করেছে। তাদেরসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.