১ জুলাই থেকে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড সংগ্রহ শুরু

2016_05_01_09_28_29_dN089QlpmELCVopUxkSQAHnOWZsHPq_originalরপ্তানিমুখি তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আগামী ১ জুলাই শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ শুরু হবে। পোশাক খাতের কর্মীদের জন্য সরকার গঠিত শ্রমিক কল্যাণ তহবিল পরিচালনা বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তহবিল পরিচালনা বোর্ডের প্রথম সভা রোববার (১৫ মে) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় তৈরি পোশাক খাতের শতভাগ রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠান হতে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের জন্য অর্থ আগামী ১ জুলাই থেকে কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মোট রপ্তানির ০.০৩ শতাংশ হারে কেটে ফান্ড সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া ফান্ডের অর্থ কীভাবে শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে সেসব বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তহবিল পরিচালনা বোর্ড বিজেএমইএ-এর সব সদস্যদের ডাটাবেজের আওতায় আনার জন্যও গুরুত্বারোপ করেছে।

শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তহবিলে সংগৃহীত অর্থ থেকে শ্রমিকরা আপদকালীন সুবিধা অর্থাৎ হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে সহায়তা পাবেন। এ ছাড়া অসুস্থ হয়ে কোনো শ্রমিক মারা গেলে এই ফান্ড থেকে অর্থ দেয়া হবে। পাশাপাশি কোনো শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা পাবে ৩ লাখ টাকা এবং কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে ২ লাখ টাকা এবং গুরুতর অসুস্থ শ্রমিককে দেয়া হবে ১ লাখ টাকা।

এ ছাড়া শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য সামাজিক কাজও করা হবে। কোনো কারণে, বিশেষ করে দুর্ঘটনার কারণে কোনো মালিক শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করতে না পারলে এই তহবিল থেকে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ১ জুলাই থেকে রপ্তানিমুখি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে তহবিলের অর্থ কেটে নেয়া শুরু হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ অর্থ কীভাবে শ্রমিকদের স্বার্থে ব্যয় করা হবে তাও আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি, অসুস্থ শ্রমিকের চিকিৎসা, দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়গুলো সভার আলোচনায় উঠে এসেছে।

এ সম্পর্কে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আখতার বলেছেন, বৈঠকে কেন্দ্রীয় তহবিল পরিচালনা বোর্ডের অফিস নির্ধারণ ছাড়াও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের পোশাক কারাখানাগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের ডাটাবেজ সংগ্রহ করার উপরও বৈঠকে জোর দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘তহবিল গঠনের মাধ্যমে শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এতে কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনায় পড়লে তিনি তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা পেলে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে না।’ সব দিক দিয়ে শ্রমিক তহবিল গঠন সরকারের একটি সুন্দর উদ্যোগ বলে মনে করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য সরকার গত বছর বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং শ্রম আইন বিধিমালা, ২০১৫-এর আলোকে এই তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৭ মার্চ শ্রম ও আইন শাখা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল পরিচালনা বোর্ডের কমিটি গঠন করা হয়। তহবিলের পরিচালনা ১০ সদস্যের চূড়ান্ত কমিটির মধ্যে পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। পদাধিকার বলে সহ-সভাপতি আছেন দুজন। এরা হলেন : শ্রমসচিব মিকাইল শিপার এবং বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান।

এ ছাড়া বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান সদস্য হিসেবে আছেন। পাশাপাশি বিজিএমইএ থেকে আরো দুজনকে সাধারণ সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এরা হলেন বিজিএমইএ সহ সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির ও মাহমুদ হাসান খান বাবু। তহবিল পরিচালনা বোর্ডের সদস্য হিসেবে শ্রমিকদের প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে : জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আখতার, গার্মেন্টস টেইলার্স শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দোজা নিজাম।

এ ছাড়া বোর্ডের সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন আরেকজন সরকারি কর্মকর্তা। কমিটি গঠনের দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত এই বোর্ডের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.