এভিয়েশন নিউজ: অন্যান্য দুর্ঘটনার চেয়ে বিমান দুর্ঘটনা সবসময়ই বেশি আলোচিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিমান দূর্ঘটনার মূল কারণ থেকে যায় রহস্যাবৃত। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে তুলনামূলক কম বিমান দুর্ঘটনা হয়েছিলো। এই দুই বছরই দুটি করে বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। কিন্তু বিমান যাত্রার ইতিহাসে ২০১৪ সালটি একটি কালো বছর হিসেবে লেখা থাকবে। এবছর বেশ কয়েকটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা হতে হতে বেঁচে গিয়েছে আরো বেশ ক’টি বিমান। বছরের আলোচিত এসব বিমান দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ মারা গেছেন, নিখোঁজ আছেন আরো কয়েকশ।
এক নজরে ২০১৪ সালের বিমান দুর্ঘটনার দিকে চোখ বুলানো যাক:
১১ ফেব্রুয়ারী: আলজেরীয় সেনাবাহিনীর বিমান এ হারকিউলিস C-130 ৭৮ জন যাত্রী নিয়ে আলজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়। এই যাত্রীদের সবাই সেনাবাহিনীর সদস্য, তাদের পরিবারের সদস্য এবং ক্রু ছিলেন। কেবলমাত্র ১ জন যাত্রীই এই দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পেরেছেন।
৮ মার্চ: মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ইন্দোনেশিয়ান উপকূল দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মালয়শিয়ান এয়ারলাইনসের এমএইচ৩৭০। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই বিমানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বিমানটি উদ্ধারে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উদ্ধার অভিযান চালাপনো হয়। উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহন করেছে পিথিবীর ২০ টিরও বেশি দেশ। কিন্তু কোনোভাবেই বিমানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বিমানটিতে যাত্রী ও ক্রুসহ মোট ২৩৯ জন মানুষ ছিলেন। এটি শুধু বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাই নয়, বিমান চলাচলের ইতিহাসেও এই ঘটনা অন্যতম কালো অধ্যায় হিসেবে অভিহিত হয়ে থাকবে।
১৭ জুলাই: রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে মালয়শিয়ান এয়ারলাইনসের এমএইচ ১৭ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে ২৯৮ জন যাত্রী ছিলো, যাঁদের মধ্যে ১৯৩ জনই ছিলো নেদারল্যান্ডের নাগরিক। এই ঘটনা যখন ঘটে তখন রাশিয়া-ইউক্রেন বিরোধ একেবারে তুঙ্গে। ইউক্রেনে অবস্থানরত রুশপন্থি বিদ্রাহীদের ভূমি থেকে অাকাশে নিক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে বিমানটি বিধ্বস্ত করার জন্য দায়ী করা হয়, যদিও তারা এটা অস্বীকার করে আসছে।
২৩ জুলাই: তাইওয়ানের অভ্যন্তরীন রুটে চলাচরের সময় ৫৪ জন যাত্রী ও ৪ জন কেবিন ক্রু নিয়ে ATR-72 প্লেনটি সাগরে বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় বিমানের ৪৮ জন যাত্রী মারা যায়। ঝড়ো আবহাওয়ার কারনে বিমানটি প্রথমবার অবতরন করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। দিব্তীয় দফা অবতরনের সময়ই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
২৪ জুলাই:বারকিনা ফাসোর সীমান্তের কাছে মালির উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটি নিখোঁজ হয়ে যায় এয়র আলজেরি AH5017। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সময় ঝড়ো আবহাওয়া চলছিলো। বিমানে ১১৬ জন যাত্রী ছিলো যাঁদের মধ্যে ৫১ জনই ফ্রান্সের নাগরিক। এখন পর্যন্ত বিমানের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিমানের সবাই মারা গেছে বলেই ধারনা করা হচ্ছে।
২৮ ডিসেম্বর:এবার ১৬২ যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ হয়েছে এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইট। বিমানটি ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া শহর থেকে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলো। ইন্দোনেশিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হারিয়ে যাওয়ার আগে বিমানটির পাইলট পুরু মেঘ এড়িয়ে যেতে ৩৮ হাজার ফুট (১১ হাজার মিটার) উপরে ওঠার অনুমতি চায়। বিমানে ৭ ক্রু ছাড়া ১৫৫ যাত্রীর মধ্যে ১৪৯ জনই ইন্দোনেশিয়ান। বাকি ছয়জনের মধ্যে একজন ব্রিটিশ, একজন মালয়েশিয়ান ও তিনজন কোরিয়ান। কোরিয়ান তিনজনের মধ্যে একজন নবজাতকও রয়েছে। বিমানটির ফ্লাইট নাম্বার QZ8501
এছাড়া এবছর আরো কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে।
১৭ ফেব্রুয়ারী ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ৭০২ আদ্দিস আবাবা থেকে মিলান যাওয়ার পথে কো-পাইলট দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়। পরে বিনাটেকে জেনেভায় অবতরন করাতে বাধ্য করা হয়। বিমানের ২০২০ যাত্রীর কারোই অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। ১৭ মে উত্তর লাওসে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৪ জন যাত্রীর সবাই মারা যায়।