ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি, ছুটি বাতিল

photo-1463679274_128338বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও দক্ষিণাঞ্চলে মংলা উপজেলা প্রশাসন।

দুর্যোগ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম ও মংলা উভয় প্রশাসন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে এবং যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নেওয়া নিম্নচাপটি রূপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’তে। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে।

বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ায় চট্টগ্রামে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম ছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে একাধিক কন্টোল রুম খোলা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জরুরি সভা করে করণীয় নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এক জরুরি সভায় সংকেত বাড়লে যেসব প্রস্তুতি নেওয়া দরকার তা সম্পন্ন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বহির্নোঙ্গরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ করে নিরাপদে সরে আসতে শুরু করেছে লাইটারেজগুলো। একইসঙ্গে মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার ও অন্যান্য যানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে, রোয়ানুর প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মংলা বন্দরসহ সংলগ্ন সাগর ও সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্দরে অবস্থান করা জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ আছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের মেম্বার (অপারেশন) মো. আলতাফ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরে অবস্থানরত ১১টি বিদেশি জাহাজকে পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ বন্ধ রেখে সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী জাহাজগুলো নিরাপদ অবস্থানে আছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় তদারকির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এদিকে নৌপথে পণ্য পরিবহণে নিয়োজিত কার্গো, কোস্টার ও ট্যাংকারসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান বন্দরের হাড়বাড়িয়া, পশুর ও ক্রিক চ্যানেলসহ সুন্দরবনের নদী-খালে নিরাপদে অবস্থান নিয়েছে।

কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী মাসুদ জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ফলে মংলা কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের আওতাধীন সুন্দরবনের অভ্যন্তরের ১২টি স্টেশনকেও সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপদে রাখা হয়েছে কোস্ট গার্ডের যুদ্ধ জাহাজসহ অন্যান্য সব নৌযান। এ ছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার জন্য কোস্ট গার্ড কয়েকটি উদ্ধারকারী জলযান প্রস্তুত রেখেছে। কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকেও খোলা হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম।

মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আলী প্রিন্স বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত জারি হওয়ার পর উপজেলায় জরুরি বৈঠক করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে জরুরি সভার পাশাপাশি মাইকিংয়ের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে উপজেলার মোট ৪২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাদের কাছে আশ্রয় কেন্দ্রের চাবি রয়েছে তাদের আশ্রয় কেন্দ্র খুলে রেখে সেখানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।’

সন্ধ্যায় কক্সবাজার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এক জরুরি সভার মাধ্যমে ঘুর্ণিঝড় মোকাবিলার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট এ নিম্নচাপ কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকলেও কক্সবাজার জেলায় জারি করা হয়েছে সতর্কবার্তা।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ রুয়ানুর প্রভাবে সাগর প্রচ- উত্তাল হয়ে উঠেছে।

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। রেডক্রিসেন্ট কর্মী, মেডিকেল টিম, উদ্ধারকর্মী নিয়োজিত রাখা হয়েছে। কক্সবাজারের ৫১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে ১৬৫ টন খাদ্যদ্রব্য মজুদ রাখা হয়েছে।

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব মাছধরা ট্রলার ও সকল নৌযানকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে চলাচল করতে বলা হয়েছে। জেলা তথ্য অফিস শহরে মাইকিং করে এই সতর্কবার্তা প্রচার করছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.