ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরাতে প্রক্রিয়া শুরু

214738_1ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ঢাকার আলোচনা চলছে। পাশাপাশি ইউরোপের কোন দেশে কত বাংলাদেশি আছেন এবং তাদের মধ্যে কতজন যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই বাস করছেন, তার একটি তালিকা তৈরির কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইইউ থেকে প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশির অবৈধভাবে বাস করার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেটিও যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, ইউরোপে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের এখনই খুব শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কাজটি নিয়ে আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি আছে। যে কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি ও মানবাধিকারের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ইইউ। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সমকালকে বলেন, ইউরোপে বেশ কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকের অবৈধ হওয়ার বিষয়টি নজরে আছে। তাদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত এপ্রিলে ইইউর বহির্গমন সেবাবিষয়ক উপ-মহাসচিব ক্রিশ্চিয়ান লেফলার ঢাকায় এসে ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে বাস করা বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ করেন। প্রায় ৮০ হাজার ‘অবৈধ’ বাংলাদেশির তথ্যও দেন তিনি। এর পর বিষয়টি নিয়ে কাজে নামে ঢাকা। সম্প্রতি ইইউভুক্ত

দেশগুলোয় কত বাংলাদেশি আছেন এবং তাদের মধ্যে কতজন যথাযথ কাগজপত্রবিহীন, তার একটি তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ইইউর সঙ্গে ঢাকার কূটনৈতিক চ্যানেলে এ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগও চলছে। সূত্র জানায়, অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা এবং সামাজিক প্রক্রিয়া ও জীবিকায় অংশগ্রহণ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপদ অভিবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বৃহত্তর পরিসরে আলোচনাও চলছে ইইউর সঙ্গে। অবৈধ নয়, বরং বৈধ প্রক্রিয়ায় ইউরোপে বাংলাদেশিদের অভিবাসী হওয়ার সুযোগ বাড়ানোর বিষয়টিই এ আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

বর্তমানে আড়াই লাখের কিছু বেশি বাংলাদেশি নাগরিক ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাস করছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু বাংলাদেশি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বাস করছেন। কেউ কেউ শিক্ষার্থী ভিসায় পড়তে গিয়ে আর দেশে ফেরেননি। ইউরোপের দেশগুলো মানবাধিকারের সাধারণ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করায় অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টি এতদিন এড়িয়ে গেছে। ফলে অবৈধ বসবাসকারীদের কোনো সংকটের মধ্যে পড়তে হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে স্রোতের মতো শরণার্থী প্রবেশ করতে শুরু করলে ইউরোপের দেশগুলো চাপে পড়ে। ২৮ জাতির জোট ইইউতে এদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে তীব্র টানাপড়েন শুরু হয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া ও আফ্রিকার কোন কোন দেশে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিবেশ নেই বা নিরাপত্তা অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে, তার একটি তালিকাও তৈরি করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এ ধরনের তালিকা ইইউর কাছেও পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, ওই তালিকায় বাংলাদেশ নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় সাত হাজার বাংলাদেশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হতে আবেদন করেন। এ ধরনের আবেদনের অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশে বসবাসে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি রয়েছে। পরে ইইউ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি অনুসন্ধান করে একমত হন যে, বাংলাদেশে স্বাভাবিক বসবাসের যথাযথ পরিবেশ রয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের মতো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। ফলে বাংলাদেশি নাগরিকদের শরণার্থী হওয়ার আবেদন করারও যুক্তি নেই। একই সঙ্গে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব বাংলাদেশি শরণার্থী হওয়ার আবেদন করেছেন তাদের বেশিরভাগই গেছেন লিবিয়া হয়ে। এ নাগরিকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ অনেক আগে থেকেই লিবিয়ায় কর্মরত ছিলেন, অনেকে নতুন করে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। এ অনুসন্ধান করতে গিয়েই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশির অবৈধ হওয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে। তারপরই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইইউর বহির্গমন সেবাবিষয়ক উপ-মহাসচিব ক্রিশ্চিয়ান লেফলার গত এপ্রিলে ঢাকায় এসে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত আনার অনুরোধের পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ায় ইইউর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুসন্ধান শুরু করলে আরেকটি তথ্যও উঠে আসে। দেখা যায়, বাংলাদেশের একশ্রেণীর জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউরোপে শরণার্থী হিসেবে বসবাসের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপ যেতে উৎসাহিত করছে। এ ক্ষেত্রে তারা লিবিয়া রুটটি বেশি ব্যবহার করছে। তাদের প্রলোভনে পড়েই অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ দিয়ে ইউরোপ পেঁৗছে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন। অনেককেই ছোট নৌকায় করে ভূমধ্যসাগরও পাড়ি দিতে হচ্ছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.