এভিয়েশন নিউজ: বাংলাদেশ বিমানের এক কেবিন ক্রু‘র ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ধামাচাপার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। জানা গেছে এই ঘটনার নেপথ্যে থেকে অভিযুক্তদের সহায়তা করছেন খোদ বিমান এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের ডেপুটি চীফ ইন্সট্রাকট (বিএটিসি)র ডালিয়া।
অভিযোগ উঠেছে, যৌন নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে বড় ধরনের আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং করে ডালিয়া কেবিন ক্রুর ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাটি তদন্ত না করেই ফাইল ফেরত পাঠিয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলেও রিপোর্ট উলেখ করেছে।
তবে প্রশাসন বিভাগের একটি সুত্র ইতোমধ্যে ডালিয়ার এই আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংয়ের তথ্য জানতে পেরে তার তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। একই সঙ্গে ডালিয়াকে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে অপর একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই ঘটনায় বিমানের রহস্যকন্যা ডালিয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জাানগেছে এধরনের ভয়াবহ ঘটনার কোন সুষ্ঠু তদন্ত না করেই মিথ্যা ও পক্ষপাতদুষ্ট একপেশে তদন্ত রিপোর্ট তৈরী করে ডালিয়া রাস্ট্রীয় পতাকা খচিত বিমানকে কলঙ্কিত করেছে। এই কারণে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত আইনী ব্যাখ্যাও নিয়ে নিয়েছে প্রশাসন বিভাগ।
বিমানের আইন শাখা সুত্রে জানাগেছে বিমানের লন্ডন অফিসে একজন নারী কেবিন ক্রুর ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত না করেই একপেশে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ায় ডালিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের। চাকরী থেকে সাময়িক বহিস্কার ও বর্তমান পদ থেকে ডিমোশনের বিধান আছে। দু‘এক দিনের মধ্যে ডালিয়ার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও প্রশাসন সুত্রে জানাগেছে। নাম প্রকাশ না করে লিগ্যাল শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, বিমানে প্রতিনিয়ত এধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটে আসছে।
কিন্তু ভিকটিমদের অভিযোগ না থাকায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অভিযুক্তরা ভিকটিমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তাকে দিয়ে মামলা তুলে নেয়ারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু সেই চেষ্টায় কেউ ষফল হবে না।
বিষয়টি বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ও বিমান বোর্ড সদস্য আবুল কালাম আজাদ, চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিনসহ সব বোর্ড মেম্বারদের অবহিত করা হয়েছে। কাজেই অভিযুক্তরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে লন্ডন অফিসে গিয়ে তদন্ত করা হবে।
গত ২৫ ডিসেম্বর বিমানের ক্রুদের থাকার জন্য ভাড়া করা লন্ডনস্থ হোটেলে বিমানের দৈনিক ভিত্তিতে নিযুক্ত একজন কেবিন ক্রু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। বিমানের একজন চীফ পার্সার ও একজন স্টুয়ার্ড ওই কেবিন ক্রুকে তাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করে।
অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের টাকায় ভিযোগটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। যার কারণে ভিকটিম কেবিন ক্রু বিমানের প্রশাসন শাখায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার ১৮দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এমনকি অভিযুক্ত চীফ পার্সার মোঃ নুরুজ্জামান রনজু ও স্টুয়ার্ড অপুক মুমের সিনহার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা এমনকি শোকজ পর্যন্ত করা হয়নি। তাদের ফ্লাইট পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত দুই পুরুষ কেবিন ক্রু বিমনের কেবিন ক্রু এসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য হওয়ায় পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে অভিযুক্ত চীফ পার্সার এবছর বিমনের কেবিন ক্রু এসোসিয়েশনের সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। একারণে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জানাগেছে এর সঙ্গে বিমানের একজন প্রভাবশালী পরিচালক ও বিমান এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের ডেপুটি চিফ ইন্সট্রাকটর ডালিয়াকে ম্যানেজ করা হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নারী কেবিন ক্রু জানান, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা নির্বিঘ্নে ফ্লাইট করায় মহিলা কেবিন ক্রুরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ইতোমধ্যে ভিটটিম কেবিন ক্রুকে তার অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য হুমকী দেয়া হচ্ছে।
অন্যথা তাকে বিমানের সব ধরনের ফ্লাইট থেকে সরিয়ে দেয়া, চাকরীচ্যুত এমনকি প্রাননাশের হুমকীও দেয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় পুরো বিমান জুড়ে আতঙ্গ নেমে এসেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে ভিকটিম কেবিন ক্রুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হাতজোর করে এনিয়ে লেখালেখি না করার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, যদি এনিয়ে মিডিয়ায় বেশি লেখালেখি হয় তাহলে তার চাকরী চলে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমি একজন ক্যাজুয়াল ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া একজন এয়ার হোস্টেজ। চাকরী চলে গেলে আমি বড় ধরনের সমস্যায় পড়বো।
পরিচালক প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের কাজ চলছে। লন্ডনস্থ হোটেলের ওই কক্ষের সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহের জন্য হোটেল কতৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হবে। হোটেল ফুটেজ থেকে ওই মহিলা কেবিন ক্রুর কক্ষে সেদিন কারা ঢুকেছিল তা বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর হওয়ায় ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধাস্ত নেয়া হচ্ছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য পরিচলক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) ও সিডিউলিং বিভাগ নানা চেষ্টা তদবির করে যাচ্ছেন। জানাগেছে মহিলা কেবিন ক্রুদের পক্ষ থেকে ডিএফও ক্যাপ্টেন তোফায়েলকে বিষয়টি জানালেও তিনি কোন কর্নপাত করেননি।
বর্তমানে বিমানের কেবিন ক্রু বিভাগ পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের আওতাধীন। সিডিউলিং বিভাগকে অভিযুক্ত চীফ পার্সার ও স্টুয়ার্ডকে ফ্লাইট না দেয়ার জন্য বলা হলেও জানাগেছে তাদেরকে নিয়মিত ফ্লাইট দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিমানের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কাইল হেউডকে তার অফিসিয়াল মেইলে জানতে চাইলে ও তিনি কোন উত্তর দেননি। অভিযুক্ত চিফ পার্সার নুরুজ্জামান রনজুর সঙ্গে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। কেবিন ক্রু এসোসিয়েশনন সুত্রে জানা গেছে বর্তমানে তিনি ফ্লাইট নিয়ে দেশের বাইরে আছেন।