কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে লাগোয়া প্রতিরোধ দেয়াল ভেঙে ধসে পড়েছে সড়কের এক পাশ। কোথাও দেবে গেছে, কোথাও পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম নগরের বিমানবন্দর সড়কের রূপ এখন ‘বীভৎস’। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশমুখ থেকে মোস্তফা কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউ পর্যন্ত এই সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই সড়কটি বিমানবন্দরে যাতায়াতের বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, বিমানবন্দর সড়কের এই অংশটি নৌবাহিনী রক্ষণাবেক্ষণ করে। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ গতকাল বিকেলে বলেন, নৌবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সড়কটি সংস্কার করা হবে। সড়ক সংস্কারে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হলে করপোরেশন তা করবে। তিনি বলেন, এই সড়কটি সংস্কারের জন্য নতুন করে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ করতে হবে এবং ব্লক ফেলতে হবে। তবে এ জন্য শুষ্ক মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই আপাতত অস্থায়ীভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন।
কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে লাগোয়া সড়কের এই অংশটি নগরের অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবেও পরিচিত। এই এলাকায় বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলেছে কর্ণফুলী নদী। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসেন। পর্যটন স্পটকে কেন্দ্র করে সড়কের এক পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় ৭৫টি ভাসমান খাবারের দোকান। ঘূর্ণিঝড়ে প্রচণ্ড বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্র স্রোতে এসব দোকানও কমবেশি বিধ্বস্ত হয়েছে।
সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে। নগরের ফ্রি পোর্ট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, ‘সুযোগ পেলেই বন্ধুদের নিয়ে এই এলাকায় ঘুরতে আসতাম। সড়কের প্রতিরোধ দেয়ালে বসে নদী আর সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সড়কটি সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক।’
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে সড়কের এক পাশ দেবে গেছে। ছোট ছোট গর্তও সৃষ্টি হয়েছে। এর একটু পরেই প্রজাপতি পার্কের সামনে প্রতিরোধ দেয়াল ভেঙে পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতায় ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ দেয়ালের বিভিন্ন অংশ চলে এসেছে পশ্চিম পাশে। প্রায় ৬০ ফুট প্রশস্ত সড়কের এই অংশের পিচ উঠে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন ও মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, এই সড়কটি আগে কখনো এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এবারই প্রথম প্রতিরোধ দেয়াল ভেঙে, সড়ক ধসে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের স্রোত সড়ক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে সড়কের পিচ উঠে গিয়ে যেমন দেবে গেছে, তেমনি দোকানগুলোও ভাসিয়ে নিয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সিটি করপোরেশনের সড়ক, সেতু, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার নষ্ট হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০৯ কোটি টাকা। গত শনিবারের ঝড়ে নগরের চকবাজার, ২ নম্বর গেট, ষোলশহর, বহদ্দারহাট ও বাকলিয়া এলাকার ৫৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কারে প্রকৌশল বিভাগ কাজ শুরু করেছে।
আরও খবর