গান অভিনয় এবং…

0e58e75edd8c07b2edd8fd033331af1b-1সোমবার সন্ধ্যা। উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর। স্থান আপনঘর শুটিংবাড়ি। নিচতলায় পায়চারি করছেন তাহসান। সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একদল স্কুলপড়ুয়া তরুণ। প্রিয় অভিনেতাকে কাছে দেখতে পেয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা। শুটিং ইউনিটের লোকজনের কারণে ভেতরে ঢুকতে পারেননি তাঁরা। মন খারাপ করে ফিরে যেতে হয় সবাইকে। তাহসানের সেদিকে মন নেই। পরবর্তী দৃশ্যের ভাবনায় ডুবে আছেন তিনি। এর ফাঁকে বললেন, ‘দৃশ্যটা শেষ করেই কথা বলছি।’
মিনিট বিশেক পর দৃশ্য ধারণ শেষ হতে তিনতলার একটি রুমে গিয়ে বসলাম। শুরুতেই বললেন, ‘আমি গ্রামীণফোনের শুভেচ্ছাদূত হয়েছি। দুই বছরের চুক্তি। কাল (মঙ্গলবার) বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিংয়ে বান্দরবান যাচ্ছি। থাকব সপ্তাহ খানেক। একসঙ্গে তিনটি বিজ্ঞাপন। তৈরি করবেন আদনান আল রজীব।’
গ্রামীণফোনের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার ব্যাপারটিকে বিনোদন অঙ্গনের সবার জন্য বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, এত দিন মোবাইল কোম্পানির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে শুধু স্পোটর্সম্যানদের দেখা যেত। এবার তাঁরা বিনোদনজগতের দিকেও নজর দিয়েছেন।’
বছর দুয়েক আগে তাহসানের উদ্দেশ্য নেই অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। এ বছর তাঁর ভক্তরা আরও একটি নতুন অ্যালবাম পেতে যাচ্ছেন। এটি তাঁর লাকি সেভেন অ্যালবাম। এই অ্যালবামের সবগুলো গানের কথা, সুর আর সংগীত পরিচালনা করবেন তিনি নিজে।
তাহসান বললেন, ‘গ্রামীণফোনের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার পর তারা আমাকে অ্যালবাম করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি নিয়ে আমি বেশ এক্সাইটেড। আমার শুরুর দিকে তিনটি অ্যালবামের গানের কথা সুর ও সংগীত কিন্তু আমারই ছিল। মাঝে বাইরের অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি। ভাবলাম অনেক তো হলো। এবার আবার নিজের মতো করে কিছু করি। আমি আমার পুরোনো ধাঁচে ফিরছি। আমার এবারের গানগুলো থিম বেউজড। সাতটি বিষয় নিয়ে অ্যালবামের গানগুলো হবে। এবার গানগুলোর মাধ্যমে অ্যাসিডদগ্ধ, প্রতিবন্ধী, পতিতা, শিখণ্ডী, আদিবাসি আর প্রবীণদের কথা বলব। এই গানগুলোর জন্য আমি এসব মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। তাঁদের দৃষ্টিতে জীবনকে দেখব। তাঁদের প্রেম-ভালোবাসার কথা আমার গানে তুলে ধরব। এ জন্য তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাই।’
এক যুগ ধরে গান করছেন তাহসান। প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। এই সময়ে এসে গান নিয়ে তাঁর নতুন উপলব্ধি হয়েছে। বললেন, ‘কিছুদিন ধরে ভাবছি, শিল্পী হিসেবে আমার অবদান কী? আমি হয়তো একজনকে চার-পাঁচ মিনিটের আনন্দ দিতে পারছি। কিন্তু ব্যাপকভাবে তো কিছুই করতে পারিনি। একটা গান দিয়ে অবদান হয় না। সেই ভাবনা থেকে কাজটা করা। আমি এটাকে আমার একটা মাইলফলক হিসেবে দেখছি। আমি এটাকে হিটের ব্যাপার হিসেবে দেখছি না। আমি জনপ্রিয়তা অনেক পেয়েছি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। এটা আমার নিজের প্রশান্তির একটা অ্যালবামও বলতে পারেন। এটা আমার শিক্ষকতার জন্য লোড কমিয়ে দিয়েছি।’
গায়ক তাহসানকে এবার ঈদে ছয়টি নাটকে অভিনয় করতে দেখা যাবে। গত চার বছর ধরে নিয়মিত বড় উৎসবের নাটকে অভিনয় করেন তিনি। তবে এবার ঈদের নাটকে কাজ করার ক্ষেত্রে তিনি ভিন্ন উপায় অবলম্বন করেছেন। তাহসান বললেন, ‘আমার নাটকগুলো দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। আমি এমনিতে কম কাজ করি। তার মধ্যে একটা কিংবা দুটি নাটক একটু খারাপ হয়, তখন দর্শকেরা খুব রিঅ্যাক্ট করেন। ৩০টি নাটক করলে এ নিয়ে খুব একটা না ভাবলেও চলত। যেহেতু আমি হাতে গোনা নাটকে অভিনয় করি, তাই এবার পছন্দের নাট্যকার, পরিচালক আর প্রযোজকদের নাটকে কাজ করেছি।’
এবার ঈদে তাহসান যেসব নির্মাতার নাটকে অভিনয় করছেন তাঁরা হলেন শিহাব শাহীন, মিজানুর রহমান ও তানিম রহমান।
এবার মেরিল-প্রথম আলো পাঠক জরিপে সেরা গায়কের পুরস্কার পেয়েছেন তাহসান। এই পুরস্কার তাঁর মধ্যে অসম্ভব ভালো লাগার জন্ম দিয়েছে। বললেন, ‘অসম্ভব ভালো লেগেছে অনেকগুলো কারণে। এটি আমার গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান। তিন বছর আগে ছুঁয়ে দিলে মন ছবির এই গানটি গাওয়ার আগে ফেসবুকে আমি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আমাকে সবাই বলেছেন, পচে যাব। তখন কিছুই বলিনি। আমি কাজ দিয়ে উত্তর দেওয়ায় বিশ্বাসী। গানটি রিলিজের পর যখন চারদিক থেকে প্রশংসা পাচ্ছি, তখন সবাই জবাবটাও পেয়ে যান। আর মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার যখন পেলাম, তখন তো সত্যায়িত হয়ে গেছি বলতে পারেন। এই জিতটা আমার নয়, বাংলা সিনেমাকে যাঁরা ভালো জায়গায় দেখতে চান, এটা তাঁদের সবার জিত।’
টু বি কন্টিনিউড নামের ছবিতে অভিনয় করেছেন তাহসান। এই ছবিতে মাত্র কয়েকটি দৃশ্যে দেখা যাবে তাঁকে। বললেন, ‘আমাকে নিয়ে কেউ কেউ ভাবছেন। আমি মনে করি, শাহরুখ খান ও সালমান খান ৫০ বছর বয়সে এসে সুপারহিট সিনেমা দিচ্ছেন। আমিও হয়তো ১৫ বছর পর সিনেমায় সুপারহিট কিছু দেব।’
তাহসান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রযোজনা করবেন। বললেন, ‘চারদিক থেকে শুনছি, বাংলাদেশের সিনেমা এখনো সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্ত হয়নি। এই পরিস্থিতি যদি স্বভাবিক হয় এবং নিজের ছবির সব কিছু যখন আমি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, তখন এই কাজটি করব।’
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়ান তাহসান। আর এই শিক্ষকতার কাজ তিনি করেন শখের বশে। বললেন, ‘মা চান আমি যেন শিক্ষকতা করি। মায়ের খুশি আর আমার ভালো লাগায় করে যাচ্ছি। আমার কাজের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ।’
গানের মানুষ তাহসানের একটি গানের দল আছে। নাম ‘তাহসান অ্যান্ড দ্য ব্যান্ড’। গানের দলের ব্যস্ততা প্রসঙ্গে বললেন, ‘এই মৌসুমে অনেকগুলো কনসার্ট করেছি। এবার যেহেতু রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, তাই আমরা ভালো কিছু কাজ করেছি। দুটো কারণে শিল্পীদের চাহিদা এখন অনেক ভালো। রাজনৈতিক আস্থিরতা কম হওয়ার পাশাপাশি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গানের অ্যাপ তৈরি করেছে। শ্রোতারা কনসার্টে গান শুনছেন যেমন, তেমনি অ্যাপের মাধ্যমে কিনতেও পারছেন। গানের বাজার সামনে আরও পরিবর্তন হবে।
কথা বলা শেষ করতে হবে। ওদিকে নাটকের পরবর্তী দৃশ্য ধারণের ডাক পড়বে। শেষ করার আগে তাহসান নিজের একটা পরিকল্পনার কথা বললেন, ‘আমি ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট পড়াই। আমি দেখেছি সেলিব্রিটিরা ব্র্যান্ড তৈরি করেন। বাংলাদেশে এটা শুরু হয়েছে। সাকিব আল হাসান তাঁর নামে রেস্টুরেন্ট করেছেন। নাসির হোসেন তাঁর নামে কোলন বের করেছেন। আমিও এ বছর অথবা আগামী বছর একটা ব্র্যান্ড ক্রিয়েট করব। এটা একটা প্ল্যান। যা একটা সময় হয়তো গ্লোবাল ব্র্যান্ড হবে।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.