বিদেশি যেসব বিমান বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে, তাদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না হয়ে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পকেটে যাবার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘এএসএল (এভিয়েশন সাপোর্ট) সিস্টেম লিমিটেড’র নন-শিডিউল ফ্লাইটের অনুমতির বিষয়ে গোপনে চুক্তি হয়েছে।
ওই চুক্তি দেখিয়ে প্রতি মাসে দুই লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলার সংশ্লিষ্টদের পকেটে যাচ্ছে। গুরুতর এই অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এরই মধ্যে বেশকিছু তথ্যপ্রমাণও দুদকের হাতে এসেছে। যারা এই দুর্নীতির প্রক্রিয়ায় যুক্ত তাদের বিষয়ে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের পর সহকারী পরিচালক সাইদুজ্জামান নন্দনকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বিদেশি যেসব ফ্লাইট বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে সেগুলোকে অনুমতি দেওয়ার নামে ‘এএসএল সিস্টেম লিমিটেড’সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ পায়। নীতিমালা না থাকায় বেসরকারি বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় ও বিমান কর্তৃপক্ষকে প্রাপ্ত অর্থের মাত্র ১৫ পার্সেন্ট দেওয়া হয়।
দুদকের নথিতে দেখা যায়, বাকি ডলার বা অর্থ ওই বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা ভাগাভাগি করে নেন। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া করা চুক্তি অনুযায়ী এএসএল সিস্টেম লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের অনিয়মে জড়িত বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। আগে কাজটি কার্গো নেভিগেশনের হাতে ছিল।
পরে সিভিল এভিয়েশনের হাতে যায় তদারকির কাজ। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহারের বিনিময়ে অর্থ আদায়ের কাজ ২০১২ সাল থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। তাতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২০১৮ সালে এএসএল সিস্টেম লিমিটেডকে যুক্ত করা হয়। কিন্তু ওই বছর বা পরের বছর কতগুলো ফ্লাইট বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানটি তার কোনো সঠিক হিসাব রাখেনি।
সরকারকে ঠকানোর পাশাপাশি নিয়মভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে। তার সঙ্গে আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে দুদক জানতে পেরেছে। তাই ওইসব প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যও নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এভিয়েশন সাপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নোটিশ দিয়েছে দুদক। ২৬ জানুয়ারি তাকে দুদকে আসতে বলা হলেও অসুস্থতাজনিত কারণে আসেননি।
অনুসন্ধান তদারক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, গোপন চুক্তির মাধ্যমে কতিপয় ব্যক্তি কোটি কোটি ডলার আয় করছেন। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে অর্থ আদায়ে বিমানের অপারেশন বিভাগ গোপনে চুক্তি করে। এতে তৃতীয় পক্ষের পকেটে চলে যাচ্ছে ৮৫ ভাগ অর্থ।
অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদকের একজন পরিচালক বলেন, অনুসন্ধান শেষ হলে বলতে পারব সরকারের কী পরিমাণ অর্থ হাতছাড়া হয়েছে। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রক্রিয়ায় কারা জড়িত তাও বের হয়ে আসবে অনুসন্ধানে। পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।