পদ্মা সেতুর পাশে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে জাপানের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। আগামীকাল দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মেগা ওই প্রজেক্টে সহায়তা চাওয়া হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে। আবে’র আমন্ত্রণে বর্তমান মেয়াদে দ্বিতীয় দফায় জাপান সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল থেকে তার সফর শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৯শে মে পর্যন্ত। জাপানের আয়োজনে প্রায় ৮ বছর পর এশিয়ায় অনুষ্ঠিত উন্নত রাষ্ট্রের জোট জি-৭’র আউটরিচ মিটিংয়ে শেখ হাসিনাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ছাড়াও সম্মেলন ভেন্যুতেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবে’র সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, দুই প্রধানমন্ত্রীর আগামীকালের বৈঠকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে জাপান গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেই সময়ে দেশের বড় বড় অনেক প্রকল্পে জাপান সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিল। দুই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে সেই সফরে পারস্পরিক সহায়তার বিষয়ে ২১ দফা ইশতেহার রচিত হয়েছিল। সেই ইশতেহার মতে, জাপান বাংলাদেশকে ৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিল। এটি বাংলাদেশকে নিয়মিতভাবে দেয়া জাপানের ওডিএ ঋণের অতিরিক্ত হিসাবে দেয়ার অঙ্গীকার ছিল। ওডিএ’র আওতায় দেয়া হয়েছিল আরো ১.২ বিলিয়ন ডলার। এই ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা আগামী ৪-৫ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছিল যৌথ ইশতেহারে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সেই সফরে ৫টি প্রকল্প দেশটির বিবেচনায় সহায়তার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল- গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে অপর একটি রেল সেতু নির্মাণ, যমুনা নদীর নিচ দিয়ে জামালপুর-গাইবান্ধা সংযোগকারী একটি বহুমুখী টানেল, ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণ এবং ঢাকার চারপাশের চারটি নদী দূষণ মুক্ত করার প্রকল্প। নিয়মিত ওডিএ ঋণ প্যাকেজের আওতায় কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি সেদিন স্বতন্ত্র প্রস্তাবনায় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে ওই প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন দ্রুততর করার বিষয়ে মোটা দাগে তাগিদ থাকবে জানিয়ে সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত এক সরকারি কর্মকর্তা বুধবার বলেন, এবারের প্রস্তাবনা আরো সুনির্দিষ্ট হবে। ঢাকাকে যানজট মুক্ত করতে ‘ঢাকা-ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্পে দেশটির সহায়তা চাওয়া হবে। এছাড়া, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে অপর একটি রেল সেতু নির্মাণ এবং ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে দেশটির সহায়তা চাওয়া হবে। বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দেশটির নেতৃত্বকে অবহিত করে এখানে আরো বেশি জাপানি বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে প্রস্তাবিত উন্নয়ন উদ্যোগ বিগ বি তে বাংলাদেশের কার্যকর অংশগ্রহণের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হবে। এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে আরো বেশি যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশে একুশ শতকের উপযোগী একটি অত্যাধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরে দেশটির সহায়তার আহ্বান জানাবেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টি তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে রংপুরে নিহত জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও’র ঘটনার তদন্তের বিষয়ে দেশটির নেতৃত্বকে অবহিত করা হবে। একই সঙ্গে দেশটির হিরোশিমায় বাংলাদেশের উদ্যোগে ভাস্কর্য নির্মাণের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে। জাপানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনায় বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে কি কথা হবে? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, দেশটির সহায়তায় কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এটির পরিধি আরো বাড়ানোর আলোচনা হবে। জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে স্বতন্ত্র জোন দেয়া হয়েছে। সেখানে তাদের বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি বিনিয়োগ চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২৯শে মে সফরের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, সেখানে বাংলাদেশের বর্তমান ‘স্থিতিশীল’ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তাদের আরো বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশি কূটনীতিকদের জাপান সফরে ভিসামুক্ত সুবিধা দেয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানানো হবে। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত সহজ করার বিষয়ে অঙ্গীকার থাকবে।
আরও খবর