
জি-৭ সম্মেলনের আউটরিচ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
শেখ হাসিনা নীতি প্রণয়ন ও রাজনীতিতে নারীদের গুরুত্ব দেয়া, সমাজে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা তথা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিষেবা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর শুক্রবারের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ২০০১ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। এটা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তার সক্ষমতা ও বৈশ্বিক ভাবমূর্তির প্রতি স্বীকৃতি।
উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তৃণমূল পর্যায়ে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে তার সরকারের প্রচেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরেন। গ্রাম পর্যায়ে বাংলাদেশের কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো বিশ্বব্যাপী একটি ‘রোল মডেল’ বলে তিনি উল্লেখ করেন। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নারীর প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতায়ন, তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাদের অধিকার ও মর্যাদাকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।
শহীদুল হক বলেন, সভা শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, জাতিসংঘ মহাসচিব ও আইএমএফ প্রধানসহ বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাপ হয়েছে।
জি-৭ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া জি-৭-এর অন্য রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন আঞ্চলিক গ্র“পের প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে, বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্যের জন্য শুধু বাংলাদেশকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জি-৭ আউটরিচের দুটি অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সম্পূরক এজেন্ডা বিশেষত নারীর ক্ষমতায়ন, মানসম্মত অবকাঠামো, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন, যেসব ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০০১ সালে শেখ হাসিনার উত্থাপিত দারিদ্র্য বিমোচন ইস্যুটিকে জি-৭ নেতারা একটি বড় এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে চায় : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্রিটেনের অংশীদারিত্বে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার জি-৭-এর আউটরিচ বৈঠকের সাইড লাইনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানান তিনি। ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের অংশীদার হতে ইচ্ছুক।’
শিমা কানকো হোটেলে দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এ কথা জানান।
শহীদুল হক বলেন, অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নেতারা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং একযোগে কাজ করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান।
তিনি বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় মূলত দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত ও বিনিয়োগের বিষয় প্রাধান্য পায় এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি অর্জনে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসার বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়েও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অভিমত জানতে চান।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জোটবদ্ধ থাকার বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষেই অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য পুরো বিষয়টি আবারও গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখতে পারে, কেননা এর সঙ্গে অনেক মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে, জানান পররাষ্ট্র সচিব।
পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তিনি মনে করেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত থাকলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত তিনজন যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশীরাও চান যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাক।