শাহজালালে দেড়মন সোনা উদ্ধার: রাঙ্গাপ্রভাত বিমান জব্দ

rangaprovat-airএভিয়েশন নিউজ: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আজ সোমবার সকালে দেড় মন সোনা উদ্ধার করেছে শুল্কগোয়েন্দা বিভাগ। কৌশলে বিমানের ফ্লাইট দুই ঘন্টা আগে অবতরণ করিয়ে ৩০ কোটি টাকা মূল্যের এসব সোনা পাচারের চেষ্টা করা হয়।

অভিযানের নেতৃত্বে থাকা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, বিজি ০৪৮ ফ্লাইটের টয়লেটের আয়নার নিচে বিশেষ কৌশলে লুকানো ছিলো। বিশেষ অভিযান চালিয়ে সোনাগুলো উদ্ধার করা হয়।  উদ্ধারকৃতসোনার মোট ওজন  ৬১ কেজি ১৯৮ গ্রাম।

এরমধ্যে চেইন ১১৪ টি, এক কেজি ওজনের বার চারটি, ১০ তোলা ওজনের বার ৪৮১টি। নতুন কেনা বিমান বোয়িং ৭৭৭ থ্রি হানড্রেড ইয়ারবাসটি জব্দ করা হয়েছে। এর নাম রাঙ্গা প্রভাত। এর দাম ১২০০ কোটি টাকা। জব্দ করে বিমানটি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এঘটনা তদন্তে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

সোনা উদ্ধারের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান রাঙ্গাপ্রভাত নামের বিমানটি পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি বিমান বন্দরে প্রেসব্রিফিং করে বলেন, নির্বিঘেœ বিপুল অংকের সোনা পাচারের উদ্দেশ্যে ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটে আগে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ (ল্যান্ডিং) করে। ফ্লাইটটি দুবাই থেকে প্রথমে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে ঢাকায় সকাল সাড়ে ১০টায় অবতরণ করার কথা ছিল।

যদিও তার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে সংশ্লিষ্ট বিমানের কর্মকর্তারা। তারা জানান উইন্টার ফ্লাইট সিডিউল অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়েই ফ্লাইটটি ল্যান্ড করেছে। কুয়াশাজনিত কারনে কিছু দিন আগে করা ফগ সিডিউলে বিমানটি দুই ঘন্টা পরে ল্যান্ডিংয়ের সময় ছিলো। কিন্তু কুয়াশা না থাকায় তারা উইন্টার সিডিউল অনুযায়ী বিমানটি ল্যান্ড করান।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা আগে থেকেই বিমানবন্দরে সতর্কাবস্থান নেয়। বিমানটি অবতরণের পর কার্গো বিল্ডিংয়ে বিপরীত অবস্থিত ‘বে এরিয়া’য় তল্লাশী চালানো হয়। ওই ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার দাবী এই সোনা চোরাচালানের সঙ্গে বিমান কর্মীদের যোগসাজস রয়েছে।

সূত্র জানায়, বিমানটে আগে অবতরণের পাশাপাশি বোডিং ব্রিজে না রেখে বে- এলাকায় ল্যান্ড করেছে। সেখান থেকে বাসের মাধ্যমে যাত্রীদেরকে আনা হয়। সোনা পাচারের উদ্দেশ্যেই বিমানটি সেখানে ল্যান্ড করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা।

গত দুই বছরে ঢাকার শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে চোরাই সোনার অনেকগুলো বড় চালান ধরা পড়েছে। এসব সোনা চোরাচালানের সঙ্গে বিমান কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন বিমানের এক ডিজিএম।

আজ সোমবার আটক হওয়া ৬০ কেজি সোনা চোরাচালানের সঙ্গেও বিমানের কারও না কারও যোগসাজশ রয়েছে বলে ক্লু পেয়েছেন গোয়েন্দারা। রাঙ্গা প্রভাত জব্দ করা প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এটি মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।

শুল্ক আদালতে বিমান কর্মকর্তারা দোষী সাব্যস্ত হলে ১২০০ কোটি টাকার ১০ গুন জরিমানা আরোপ হতে পারে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দফায় দফায় সোনা উদ্ধারের ঘটনায় বিমান কর্তৃপক্ষপকে বহুবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

চোরাচালান বন্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে প্রশিক্ষণ, চোরাচালানে জড়িত না হওয়া ও সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা এসব বিষয়ে কর্ণপাত করছে না। সোমবার দেড়মন সোনা উদ্ধার এর বড় প্রমাণ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.