আভিয়েশন নিউজ: বিশ্বের বৃহত্তম প্রদর্শনী ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০’ আয়োজক দেশ নির্বাচনে প্রথম রাউন্ডের ভোটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট না দেওয়ায় দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। তাদের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ঢাকায় সরকারী তরফে বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানোর কোনও আশঙ্কা নেই বলে বলা হচ্ছে। তবে দেশটিতে কর্মরত বৈধ বাংলাদেশীদের মধ্যেও এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
কূটনৈতিক মহলে তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০’ আয়োজক দেশ নির্বাচনে প্রথম রাউন্ডের ভোটে বাংলাদেশ রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু ভোটে প্রথম রাউন্ডেই হেরে যায় রাশিয়া। বাংলাদেশ অবশ্য পরবর্তি রাউন্ডে আমিরাতের পক্ষেই ভোট দেয়। চ‚ড়ান্ত নির্বাচনে আমিরাতের বাণিজ্যিক নগরী দুবাই বিজয়ী হয়। এখন দুবাইয়ে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণযজ্ঞ শুরু হলেও বাংলাদেশ থেকে এই কাজে কর্মী নেয়নি আমিরাত।
সৌদি আরবের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। আমিরাতে বর্তমানে ১১ লাখ বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন। তবে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ওই দেশে বিভিন্ন রকমের অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে বিদেশে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ এই শ্রমবাজারটি বাংলাদেশী কর্মীদের জন্যে প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। শুধু কর্মী নয়, বাংলাদেশীদের বিভিন্ন ক্যাটেগরির ভিসা প্রদানেও কড়াকড়ি আরোপ করে আমিরাত। এই রকম এক নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়ে ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ দিয়েছে। ক‚টনৈতিক মহলে তখনই বলাবলি হচ্ছিল যে, রাশিয়াকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত আÍঘাতি এবং জাতীয় স্বার্থ এতে করে ক্ষুন্ন হবে। কিন্তু উচ্চতর রাজনৈতিক পর্যায়ের সিদ্ধান্তে রাশিয়াকে ভোট দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে।
নির্ভরযোগ্য ক‚টনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এক্সপো আয়োজনে আমিরাতের পক্ষে যে সকল দেশ ভোট দিয়েছে, ওই সকল দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে দুবাইয়ে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশী কর্মীরা এই কাজে দক্ষ হলেও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বরং এবার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে, বৈধ বাংলাদেশীদের ভিসার মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত বাংলাদেশীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের ক‚টনৈতিক মিশনে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে চিঠি দিচ্ছেন।
আরব আমিরাতে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীদের পক্ষ থেকে দেওয়া এমন একটি চিঠির কপি যুগান্তরের হাতে পৌঁছেছে। দুবাইয়ে কর্মরত শরিফ উদ্দীন খান শরিফ নামের এক বাংলাদেশী গত ৫ এপ্রিল আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বরাবর এই চিঠি পাঠান। লিঠিতে তিনি লেখেন, ‘আমরা প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশী, আরব আমিরাতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিভাগ – পিএসবিডি (প্রাইভেট সিকিউরিটি বিজনেস ডিপার্টমেন্ট) সাথে জড়িত। আমরা ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানীতে কর্মরত। সবার ভিসার মেয়াদ আগামী ২০১৬ সাল পর্যন্ত আছে। কারও ভিসার মেয়াদ আছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের ভিসার মেয়াদ থাকা সত্তেও ইতোমধ্যে শতাধিক লোককে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে লক্ষাধিক বাংলাদেশীকে পঠিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া করছে আমিরাত সরকার। কারণ, বিশ্ব রফতানি বাণিজ্য মেলার আয়োজক নির্বাচনে বাংলাদেশ সরকার দুবাইকে ভোট না দিয়ে রাশিয়াকে ভোট দিয়েছে’। তিনি এই বিষয়ে আরব আমিরাতের সঙ্গে একটি ক‚টনৈতিক সমাধানে পৌঁছার জন্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান।
এই চিঠির বিষয়ে জানতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলীর মোবাইল ফোনে টেলিফোন করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাচ্ছে না। এই বিষয়ে তিনি আর বেশি কিছু বলেননি।
এদিকে, বাংলাদেশী কর্মীদের অপরাধকে বিদেশে একটি মহল বেশি করে প্রচার করছে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এটা একটা ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আশেপাশের অন্য কোনও দেশের কর্মীরা অপরাধ করলে বিদেশী মিডিয়ায় বলা হয়, এশিয়ার কর্মীরা অপরাধ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশী কর্মীদের অপরাধকে দেশের নাম জুড়ে প্রচার করা হয়। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের শ্রমবাজার দখলে নেওয়ার ষড়যন্ত্র’।
নারী গৃহকর্মী নিয়োগে আগ্রহ : বাংলাদেশ থেকে আরব আমিরাতে বিভিন্ন ক্যাটেগরির কর্মী নিয়োগ বন্ধ থাকলেও গৃহস্থালী কাজের জন্যে নারী কর্মী নিয়োগে দেশটির আগ্রহ রয়েছে। ২০১২ সালের আগস্টে আমিরাতের শ্রমবাজারটি বাংলাদেশী কর্মীদের জন্যে প্রায় বন্ধ হয়ে গেলেও যে স্বল্পসংখ্যক কর্মী দেশটিতে গেছেন তারা মূলত নারী গৃহকর্মী।
নারী গৃহকর্মী নিয়োগে আগ্রহের কথা জানাতে সম্প্রতি আরব আমিরাতের সরকারী রিক্রুটিং এজেন্সির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। প্রতিনিধি দলটি নারী কর্মী নিয়োগে আগ্রহ জানালেও দেশটিতে নারী কর্মীদের নিগৃহীত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এ কারণে কোনও কোনও দেশ আমিরাতে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশও শুধু নারী কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আগ্রহী নয়। আমিরাতের প্রতিনিধি দলকে এ কথা বাংলাদেশ সরকারের তরফে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ অবশ্য এটা বলছে যে, অপরাপর ক্যাটাগরির জন্যে আমিরাতের শ্রমবাজার চালু করলে নারী কর্মী পাঠানোও অব্যাহত রাখা হবে। এই লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। ঢাকার কর্মকর্তারা আশা করছেন, কর্মী প্রেরণে কী ধরনের মানদন্ড বজায় থাকবে তার একটি রপরেখা সম্বলিত এই স্মারক চলতি মাসের শেষ নাগাদ সই হতে পারে। এমন স্মারক সই হলে এই বৃহৎ শ্রমবাজার ফের খোলার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে ঢাকার কর্মকর্তারা আশাবাদ জিইয়ে রেখেছেন।