২০১১ সালের ৫ জুন সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের পথিকৃত আজম খান। তার গান ্আজও নাড়া দেয় শ্রোতাদের মনে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই গেয়েছেন তার গান। এবার গাইবেন আজম খান কন্যা ইমা খান।
৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ৩ জুন বৈশাখী টেলিভিশন আয়োজন করেছে বিশেষ গানের অনুষ্ঠান ‘সময় কাটুক গানে গানে’। এতে আজম খানের মেয়ে ইমা খান ছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করবেন তাশমনি ও জিয়াউল হাসান পিয়াল।
আগামীকাল শুক্রবার রাত ১১টায় প্রচারিত হবে অনুষ্ঠানটি। এ অনুষ্ঠানে আজম খানের জনপ্রিয় এবং কালজয়ী সব গান পরিবেশন করা হবে।
সঙ্গীতের প্রতি আজম খানের অনুরাগ সেই শৈশব থেকে। আজম খানের সংগীত জীবনের শুরু ষাটের দশকের একবারে শুরুতে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে তিনি ‘ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী’র সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। ১৯৭১ সালের পর লাকী আখন্দ, হ্যাপী আখন্দ, নিলু, মনসুর এবং সাদেককে নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’।
দেশ স্বাধীনের ১৯৭২ সালে বিটিভিতে আজম খানের ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুইটি সরাসরি প্রচার হলে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে বিটিভিতে ‘বাংলাদেশ (রেললাইনের ঐ বস্তিতে)’ গান গেয়ে সারা দেশব্যাপী হৈ-চৈ ফেলে দেন আজম খান। ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং পিলু মমতাজের সঙ্গেও বেশ কয়েকটা জনপ্রিয় গান করেন তিনি। বন্ধু ইশতিয়াকের পরামর্শে সৃষ্টি করেন একটি এসিড-রক ঘরানার গান ‘জীবনে কিছু পাবো না’। বাংলা গানের ইতিহাসে এটিই প্রথম হার্ডরক সংগীত বলে বিবেচিত।
১৯৮২ সালে ‘এক যুগ’ নামে আজম খানের প্রথম অডিও অ্যালবাম বাজারে আসে। তার একক অ্যালবাম সংখ্যা ১৭ এবং দ্বৈত ও মিশ্র অ্যালবাম ২৫টির বেশি। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে – ‘বাংলাদেশ’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’ ইত্যাদি।
গানের জগত ছাড়াও আজম খান অভিনয় জগতে ‘গড ফাদার’ নামক একটি বাংলা সিনেমায় ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপন চিত্রেও মডেল হয়েছিলেন। খেলাধুলাতেও সমানভাবে পারদর্শী ছিলেন তিনি। ১৯৯১—২০০০ সালে তিনি গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের পক্ষ হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলতেন।
আজম খান আরেকটি পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরে মাত্র ২১ বছর বয়সে যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে তিনি অংশ নেন। মূলত বাবার অনুপ্রেরণায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইনচার্জ। তার নেতৃত্বে সংঘটিত ‘অপারেশন তিতাস’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যুদ্ধের মাঠেও থেমে থাকেনি তার সংগীত সাধনা। তার গাওয়া গান প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণ যোগাতো।
উল্লেখ্য, আজম খানের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আজিমপুরের এক সরকারি কোয়ার্টারে। তার আসল নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সরকারের সচিবালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মা জোবেদা বেগম একজন সংগীতশিল্পী ছিলেন।